গত কয়েক মাস ধরে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে তুরস্কের বিরুদ্ধে অবরোধ আরোপের জন্য পীড়াপীড়ি করে আসছিল গ্রিস। এখন আগুনে জোরসে হাওয়া দিচ্ছে পরাজিত ফ্রান্স। লিবিয়া, সিরিয়া ও কারাবাখে ফ্রান্সের মিত্রদের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে ইইউকে তুরস্কের বিরুদ্ধে অবরোধ দিতে ক্রমাগত চাপ দিয়ে যাচ্ছে ফান্স। আগামী সপ্তাহে তুরস্কে অবরোধের বিষয়ে বৈঠকে বসবেন ইইউর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। এই নিয়ে ইউরোপীয় পত্রিকাগুলো নানা আশংকার কাহিনী ছেপে আতংক বাড়াতে চাচ্ছে।
এবার অবরোধের ভয় দেখাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। পরাজিত ট্রাম্পের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পম্পেও ২০২৪ এর নির্বাচনে লড়তে চান। নিজের এন্টি মুসলিম ইমেজ বাড়াতে, যুক্তরাষ্ট্রের ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে, তুরস্কের বিরুদ্ধে কথার কামান দাগিয়ে চলেছেন পম্পেও। দিচ্ছেন অবরোধের হুমকি।
অজুহাত, কেন তুরস্ক রাশিয়া থেকে এস-৪০০ প্রতিরক্ষা বিমান কিনল? তুরস্ক যুক্তরাষ্ট্র থেকে কিনতে চেয়েছিল প্যাট্রিয়েট। কয়েক বছর আলোচনার নামে সময় নষ্ট করে তুরস্কের কাছে অবাস্তব দাম চেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। পাশাপাশি শর্ত জুড়ে দিয়েছে, প্যাট্রিয়টের পাসওয়ার্ড থাকবে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে। তাদের অনুমতি ছাড়া কোথাও ব্যবহার করা যাবে না এটি। সেই সুযোগে রাশিয়া বাগিয়ে নিয়েছে মাল্টি বিলিয়ন ডলারে চুক্তিটি।
রাশিয়া অফার দিয়েছে তাদের এস-৪০০ কিনলে প্রযুক্তি হস্তান্তর করবে। মানে প্রথমটি কিনলে পরেরটি নির্মাণ হবে তুরস্কে। প্রযুক্তি বিদ্যা হস্তান্তর করা হবে তুর্কি বিজ্ঞানীদের কাছে। পাশাপাশি ব্যয়ের একটি অংশ বহনে ঋণ দিবে রাশিয়ার ব্যাংক।
তুরস্ক নিজেও হিসার নামে বিমান প্রতিরক্ষা সিস্টেম ডেভেলপ করছে। তবে কাঙ্ক্ষিত মঞ্জিল অর্জন করতে আরো কয়েক বছর সময় দরকার। কিন্তু তুরস্কের বিমান প্রতিরক্ষা সিস্টেম দরকার এখনি। সীমানার বাইরেই শত্রুদের আনাগোনা। অবরোধ! একদিকে মোঙ্গল বাহিনী অন্যদিকে বাইজেন্টাইন ক্রুসেডার।
দুই পাশে দুই সমুদ্র। এই বাস্তবতা মোকাবেলা করেই তুর্কিরা এসেছে আজকের অবস্থানে। আজীবন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা এদের বানিয়েছে দুর্বিনীত। হয়ত লিরার দাম কিছুটা কমবে। আউট পারমেন্স দেখানো তুর্কি অর্থনীতিকে কিছুটা ধীর করে দেয়া হবে। তবে নিজেদের প্রতিরক্ষা প্রশ্নে মাথা নত করবে না তুরস্ক।
এরদোয়ান বলেছেন, অবরোধ নিয়ে চিন্তিত নয় তুরস্ক। তবে মুখে এ কথা বললেও অবরোধ কিভাবে ঠেকাবে, অথবা মোকাবেলা করবে সে বিষয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে প্রেসিডেন্টের অর্থ উপদেষ্টারা। প্ল্যান এ বানানোর পরে চলছে প্ল্যান বি ও সি-র পরিকল্পনা।
ইইউর সদস্য গ্রিস দীর্ঘদিন ধরেই রাশিয়ার এস-৩০০ ব্যবহার করছে। তাতে কোন মাথাব্যথা নেই ন্যাটোর। কেন? পারবে কি তুরস্ক লিবেরেলিজমের মুখোশ পড়া ক্রুসেডারের অর্থনৈতিক আঘাত ঠেকাতে?
লেখক: জাহিদুল ইসলাম, প্রাক্তন প্রভাষক, গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতা বিভাগ, স্টাম্ফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ।
Leave a Reply