ঢাকাই চলচ্চিত্রের নায়িকা পরীমনিকে বাসায় নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় ঢাকা মহানগর ডিবির গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) গোলাম সাকলায়েন শিথিলকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
শনিবার দুপুরে ঢাকা মহানগর ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার হাফিজ আক্তার বিষয়টি ডেইলি বাংলাদেশকে নিশ্চিত করে বলেন, শিথিলের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ এসেছে। তাকে ঢাকা মহানগর ডিবি থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
তিনি বলেন, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের তদন্ত করা হবে। ডিএমপি ও পুলিশ সদর দফতর থেকে এ তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।
এদিকে, গত বুধবার র্যাবের মাদকবিরোধী অভিযানে গ্রেফতার হওয়া চিত্রনায়িকা পরীমনিকে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় সিআইডিতে হস্তান্তর করে বনানী থানা পুলিশ। গত বৃহস্পতিবার তার বিরুদ্ধে বনানী থানায় মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করেছে র্যাব।
পরীমনির নানা অপরাধের সূত্র অনুসন্ধানের প্রাথমিক পর্যায়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার গোলাম সাকলায়েন শিথিলের সঙ্গে পরীমনির ‘সখ্যতা’র কথা। এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যম খবরও প্রকাশ করেছে।
জানা গেছে, নিয়মিত কথা বলতে বলতে গোলাম সাকলায়েনের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হয় পরীমনির। এরপর তারা নিয়মিত গাড়ি নিয়ে ঘুরতে যেতেন। এমনকি সাকলায়েন তার বাসায় নিয়মিত যাতায়াত করতেন। সর্বশেষ গত ১ আগস্ট তার সরকারি বাসভবন রাজারবাগের মধুমতির ফ্ল্যাটে যান পরীমনি। সেখানে প্রায় ১৮ ঘণ্টা অবস্থান করেন।
এরই মধ্যে পরীমনি-সাকলায়েনকে নিয়ে একটি সিসিটিভি ফুটেজ ফাঁস হয়েছে। সেখানে দেখা যায়, রাজারবাগ পুলিশ অফিসার্স কলোনির মধুমতি ভবনের গেটের সামনে ১ আগস্ট সকাল ৮ টা ১৫ মিনিটে একটি সাদা গাড়ি এসে থামে। লাল রংয়ের টি-শার্ট পরিহিত একজন প্রথমে নামেন। এরপর কোলে একটি কুকুরসহ সাদা রংয়ের জামা পরে নামেন নায়িকা পরীমনি।
রিসিপশনে থাকা সদস্যদের কাছ থেকে চাবি নিয়ে দুজন লিফটে প্রবেশ করেন। পরে গাড়ি থেকে নিয়ে যাওয়া হয় একটি ট্রলি ব্যাগ। প্রায় ১৮ ঘণ্টা পর রাত দেড়টার দিকে ওই ভবনের সামনে আবার আসে পরীমনির গাড়ি। কিছুক্ষণ পর বেরিয়ে যাওয়ার সময় পরীমনির পরনে ছিল কালো রংয়ের পোশাক।
ঢাকার আশুলিয়ার বোট ক্লাবে ‘ধর্ষণ চেষ্টা’র অভিযোগে চিত্রনায়িকা পরীমনির দায়ের করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তার দায়িত্বে রয়েছেন ডিবি কর্মকর্তা সাকলায়েন শিথিল।
শনিবার দুপুরে সিআইডি কার্যালয়ে অনির্ধারিত ব্রিফিংয়ে সিআইডির ডিআইজি শেখ ওমর ফারুক বলেন, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হলেও আমরা অবশ্যই তার বিষয়েও তদন্ত করব। কেউ তো আইনের ঊর্ধ্বে না। সে যেই হোক না কেন, আমরা নিরপেক্ষ তদন্ত করে সত্যি ঘটনা উদঘাটন করব।
এদিকে, পরীমনিকে জিজ্ঞাসাবাদে এরই মধ্যে মাদক চক্রের নানা হোতাদের নাম জানতে পেরেছে র্যাব ও পুলিশ। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, রাজধানীর অভিজাত এলাকায় মাদকের আসর বসিয়ে ধনাঢ্যদের টার্গেট করতেন সেই হোতারা। তাদের মধ্যে একজন নজরুল ইসলাম রাজের বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়েছে পর্ণোগ্রাফির মামলাও।
মাদক মামলায় আরো গ্রেফতার হওয়া মডেল পিয়াসা ও মৌয়ের কাছ থেকে মাদকের হোতাদের বিষয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সেই হোতাদের নজরদারিতে রেখেছে পুলিশ।
ডিআইজি শেখ ওমর ফারুক বলেন, আরো যদি কোনো প্রভাবশালী ব্যক্তি জড়িত থাকে, তিনি যত বড় শক্তিশালী হোন না কেন, আমরা আইনের আওতায় আনব। অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা থাকলে তা তদন্ত করে খুঁজে আনব।
পরীমনিকে কোটি টাকার দামে গাড়ি কিনে দেওয়া এক ব্যাংক এমডির বিষয়েও তদন্ত করা হবেও বলে জানান এ সিআইডি কর্মকর্তা। প্রয়োজনে তাকে ডাকা হবে বলেও জানান তিনি।
Leave a Reply