সোনিয়া আক্তার (২৬) ছদ্মনাম। অসচ্ছল পরিবারে জন্ম নেয়ায় পেশায় ছিলেন একজন গার্মেন্টস কর্মী। সংসারে অভাব থাকলেও জীবন ছিল সুন্দর। কিন্তু উচ্চাভিলাষী জীবনের স্বপ্ন কেড়ে নিয়েছে সব।
যেভাবে মাদকের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে সোনিয়া:
হঠাৎ পরিচয় হয় একজন বড় আপুর সঙ্গে। কিন্তু জানা ছিলো না কী করেন সেই আপু। প্রতিদিন অনেক টাকা কামাতে পারবে বলে জানান তাকে। বিলাসী চলাফেরা দেখে লোভে পড়ে ছেড়ে দেন গার্মেন্টসের চাকরি। এরপর থেকেই শুরু অন্য জীবনে। ধীরে ধীরে জড়িয়ে পড়েন মাদকের সঙ্গে। এক সময় হয়ে যান দেহ ব্যবসায়ী।
সোনিয়া জানান, আমার প্রতিদিন ৫-১০টি ইয়াবা সেবন করতে হয়। না করলে মাথা ঠিক থাকে না। টাকা মেনেজ করতেই জড়িয়ে পড়ি দেহ ব্যবসার সঙ্গে।
আগের জীবনে ফিরতে চান কি না জানতে চাইলে সোনিয়া বলেন, সুযোগ নেই। আর ফিরেই কি করব বলেন? গরীব পরিবারে জন্ম, ঘরে বৃদ্ধ বাবা-মা ও ছোট ভাই-বোন সবাইকে আমার দেখতে হয়। ইচ্ছে থাকলেও বাধ্য হয়েই ফিরতে পারছি না।
প্রতীকী ছবি
এদিকে শুধু সোনিয়া নয়, মাদকের নেশায় পথভ্রষ্ট হয়ে নানান অসামাজিক কার্যকালাপের দিকে ঝুঁকছেন শিক্ষিত ও উচ্চবিত্ত পরিবারের তরুণীরাও। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ছাত্রীদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য।
দেশে নারী মাদকাসক্তের সংখ্যা বাড়ছে। মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থা (মানস) এর হিসাবে, বর্তমানে সারাদেশে প্রায় ১ কোটি মাদকাসক্ত রয়েছে। যার মধ্যে ২০ লাখই নারী। বিশেষ করে উচ্চবিত্ত পরিবারের নারীদের মাঝে মাদকাসক্তির হার বেশি। ১০ বছর আগেও নারী মাদকাসক্তের সংখ্যা ছিলো মাত্র ৫ লাখ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নারীদের মাদক গ্রহণের হার বৃদ্ধি সমাজের জন্য অশনি সংকেত। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া এক তরুণীর জীবনের গল্প অন্য রকম হতে পারতো। কিন্তু মাদকের ছোবল তার জীবনের সব কিছু ওলোট পালট করে দিয়েছে। উচ্চবিত্ত পরিবারের অনেকেই শখের বসে, এমনকি স্বামীর মাধ্যমেও মাদক আসক্ত হয়ে পড়ছেন।
আইসিডিডিআরবি’র জার্নাল অব হেলথ পপুলেশন অ্যান্ড নিউট্রিশনের জরিপে বলা হয়েছে, দেশে বর্তমান মাদকাসক্তের সংখ্যা প্রায় ৮০ লাখ। যার মধ্যে নারী মাদকাসক্তের সংখ্যা ১৫ লাখের বেশি।
গবেষকরা বলছেন, বিভাগীয় শহরের উচ্চবিত্ত পরিবারের নারীদের মধ্যে মাদকাসক্তির হার বেশি। এদের মধ্যে কেউ কেউ মাদক ব্যবসায়ও জড়িয়ে পড়ছেন। আর মাদকসেবনের ফলে নারীদের মাঝে অপরাধপ্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে বলেও মনে করছেন তারা।
মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, মাদক গ্রহণের ফলে নারীরা পুরুষের তুলনায় মানসিকভাবে বেশি বিষণ্ণ হয়ে পড়ে। এমনকি নারীদের শারীরিক ঝুঁকিও বেশি।
বিশেষজ্ঞদের দাবি, নারীদের মাদকাসক্ত হওয়ার পেছনে পারিবারিক জীবনের হতাশা অনেকাংশে দায়ী। তাই পারিবারিক বন্ধনকে গুরুত্ব দেয়ার জন্য পরামর্শ তাদের।
Leave a Reply