ধান বা কুটির শিল্প নয়, সুন্দরবন সংলগ্ন মোংলা উপকূলের মানুষের প্রধান আয়ের উৎস্য সাদা সোনা খ্যাত চিংড়িসহ সাদা প্রজাতির বিভিন্ন মাছ। এসব মাছ চাষ করেই বৈদেশিক মূদ্রা অর্জনসহ এ অঞ্চলের ৭০ শতাংশ মানুষের জীবিকা চলে।
তবে একের পর এক প্রাকৃতিক দূর্যোগে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয় মোংলা উপকূলের এসব চিংড়ি চাষীরা। জীবিকার ওপর এমনভাবে প্রভাব পড়ে, যেন তাদের বেঁচে থাকা
দায় হয়ে দাড়িয়েছে। ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের ধাক্কা সামলাতে না সামলাতে নতুন করে ‘ইয়াসে’র প্রভাবে এ এলাকায় ভেসে গেছে ৩’ শ হেক্টর মাছের জমি। এসব জমিতে চাষীদের চিংড়িসহ সাদা মাছের ৬৮৫ টি খামার রয়েছে। এর সবগুলোই ভেসে গেছে
বলে জানিয়েছেন উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ জাহিদুল ইসলাম।তিনি বলেন, ঝড়ের আগে প্রচন্ড তাপদাহে এখানকার চাষীদের কয়েক লক্ষ টাকার মাছ মরে গেছে। এখন নতুন করে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে ভেসে গেছে উপজেলার চিলা ইউনিয়নের ৪৪৫ টি, চাঁদপাইয়ে ১৪৪ টি ও বুড়িরডাঙ্গা
ইউনিয়নে ৮৬ টিসহ চিংড়ি ও সাদা মাছের ৬৮৫ টি ঘের বা খামার। এসব খামারে কত লক্ষ টাকার মাছ ভেসে গেলো তার হিসাব কেবল শুরু করেছি, বলেও জানান তিনি।
বৃহস্পতিবার (২৭ মে) সরেজমিনে এসব এলাকা ঘুরে কথা হয় ক্ষতিগ্রস্থদের সাথে। জয়মনি ঘোলের হরিদপ মন্ডল এদিন বলেন, ‘অনেক কষ্ট করে কয়টা মাছ ছাড়িছিলাম, তাও বইন্যেই সব তলায় গেইছে’।
কাইনমারি এলাকার দিলিপ কুমার বিশ্বাস ও তপন গাইন বলেন, ‘প্রচন্ড গরমে এক দফা মরে পঁচে যাওয়াসহ এইবার ঝড়ে ঘেরের মাছ সব ভেসে গেছে। এখন কি করে বেঁচে থাকবো তা নিয়ে চিন্তায় আছি’।ধারবাহিক দূর্যোগের কারণে এসব চিংড়ি মাছ চাষের সাথে জড়িত কয়েক লক্ষ মানুষ এখন দিশেহারা হয়ে উঠেছেন।
মোংলা উপজেলা চেয়ারম্যান ও চিংড়ি ব্যবসায়ী মোঃ আবু তাহের হাওলাদার বলেন, ‘চিংড়ি চাষের মৌসুমের শুরুতেই প্রান্তিক চাষিরা হোঁচট থেতে শুরু করেন,
এপ্রিল-মে মাসে করোনার লগডাউনে হ্যাচারিগুলো বন্ধ থাকায় রেনু পোনার চরম সংকট দেখা দেয়। এছাড়া চাষিরা স্থানীয় প্রাকৃতিক চিংড়ি পোনাও আশারুনূপ পাননি। আবার ঘূর্ণিঝড় পরিস্থিতিতে ধানও নেই মাছও নেই’।মৎস্য কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বলেন, গত আম্ফানে মোংলাসহ বাগেরহাট জেলায়
প্রায় পাঁচ হাজার মাছের ঘের তলিয়ে গেছে। সেসবের ধকল এখনও কাটিয়ে উঠতে
পারেনি এখানকার চাষিরা। এরপর আবার ঘূর্ণিঝড় ইয়েসের প্রভাবে নতুন করে আরও
মাছের ঘের তলিয়ে গেলো। ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা করে সরকারের উপরের দফতরে পাঠানো হবে, এরপর চাষিদের ক্ষতি পোষাতে সাধ্যমত চেষ্টা করা হবে বলেও জানান তিনি।তবে বুধবারের ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে এখানকার চাষিদে রাত জেগে চিংড়ি ঘের পাহাড়া দিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি, সব কিছু জোয়ারের পানিতে চোখের সামনে তলিয়ে গেছে। চড়া সুধে ঋণের আবদ্ধ থাকা তারা এখন কোথায় যাবে কার কাছে যাবে কিভাবে জীবন বাঁচাবে তা তারা নিজেরাও জানে না।
Leave a Reply