গুরুদাসপুর(প্রতিনিধি) নাটোরঃনিজের ঘর ছিলনা হাজেরা বেগমের(৫৫)। স্বামী খলিলুর রহমান অসুস্থ হয়ে পড়ায় পাথারে পড়েছিলেন তিনি। অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে যে খাবার জুটতো তা ভাগ করে খেতেন স্বামী-স্ত্রী। দিনশেষে ঘুমাতেন ওই বাড়ির গোয়াল ঘরে। এভাবে কেটেছে প্রায় তিন বছর।
নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের বেড়গঙ্গরামপুর আশ্রয়ন প্রকল্পের রঙিনটিনের পাকা ঘরে ঘুমায় হাজেরা দম্পত্তি। হাজেরা দম্পত্তিরমত ৫০টি অসহায় দম্পত্তির ঠাঁই হয়েছে সেখানে। আরো ১৩৫ পরিবার নতুন ঘরে ওঠার অপেক্ষায় রয়েছে।
উপজেলা প্রশাসন সুত্রে জানাগেছে, – ইতিমধ্যে ৫০জনকে ঘর বরাদ্দের কাজ শেষ হয়েছে। সেখানে বসবাস শুরু করেছেন সুবিধাভোগীরা। ৫০ টি ঘরের মধ্যে নাজিরপুরে হয়েছে ২৪ টি, বিয়াঘাটে ২৫ টি ও খুবজীপুরে হয়েছে একটি ঘর। দ্বতীয় দফায় আরো ১৩৫ ঘরের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। কেন্দ্রীয়ভাবে যে নকশার পরিকল্পনা করা হয়েছিল, সেভাবেই তৈরি হয়েছে প্রতিটি ঘর। প্রতিটি ঘরের জন্য বরাদ্দ ছিল ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা। এছাড়া আরো ৩৫টি ঘরের অতিরিক্ত আবেদন দেওয়া হয়েছে।
কথা হয় হাজেরা বেগমের সাথে। ঘরের কথা জিজ্ঞেস করতেই মুখে অসাধারণ হাসি ঝরল তাঁর। গোয়ালঘরের দুর্গন্ধ আর মশার কামড়ে অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে কেটেছে অনেক রাত। ঠিকমত খাবার জুটতো না। এমন জীবন যাপনের খবর জানতে পারেন ইউএনও স্যার। তাঁর কল্যাণে আশ্রয়ণ প্রকল্পে নতুন ঘর পেয়ে যান তিনি। এখন খুশি তিনি।
‘অন্যের জায়গায় টিনের একটি ছোট্র ঘরে বউ, বাচ্চা নিয়ে বসবাস করতেন খাইরুল ইসলাম। ভ্যান চালিয়ে যা আয় হতো তাই দিয়ে চলত সংসার। পাকা একটা ঘরের স্বপ্ন ছিল তাঁর কিন্তু ভাবতেন এ স্বপ্ন আর কোনোদিন পূরণ হবে না। যখন পাকা ঘর, চোখের সামনে উঠে যাচ্ছিল, তখন বিশ্বাস-ই করতে পারছিলেন না খাইরুল, এসব জানিয়ে চোখের পানি মুছতে মুছতে তিনি বললেন, ‘গরীব মানুষের উপকার যে করে, আল্লাহ তার উপকার করে। এই ঋণ আমি কোনোদিন শোধ করতে পারবো না বলে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে।’
আরেক বাসিন্দা জরিনা খাতুনের ভাষ্য, নিজের জায়গা না থাকায় একটি পুকুরপাড়ে ঝুঁপরিঘর তুলে বসবাস করতেন। সেখানে তার একজন প্যারালাইসিস দেবোর ছিলেন। তাকে সহ কয়েকজন মিলে ঠাসাঠাসি করে ওই ছাপড়ায় থাকতেন। এখন পাকাঘরে বসবাস করছেন তাঁরা।
ঘর পেয়ে খুশি নাজিরপুর ইউনিয়নের কুমারখালি গ্রামের নদী খাতুন। রবিশাল থেকে এসেছেন তাঁরা। জায়গা জমি নেই তাদের। এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে নদী শিকস্তিতে ঝুঁপরিঘর তুলে বসবাস করতেন তাঁরা। স্বামী খেতখামারে আর নদী খাতুন দর্জির কাজ করে সংসার চালাতেন। পরিস্থিতি বিবেচনা করে আশ্রয় প্রকল্পে পাকা ঘর দিয়েছেন উপজেলা প্রশাসন। ঘর-জমি পেয়ে কি যে উপকার হয়েছে, মুখে বোঝানো যাবে না। মন্তব্য নদী খাতুনের।
গুরদাসপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তমাল হোসেন বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের একজন কর্মচারী হিসেবে মনে করি, এটা আমার চাকরি জীবনের অন্যতম একটা স্বরণীয় ঘটনা। একজন মানুষ গৃহহীন অবস্থায় আছে, সকলকে নিয়ে আমার ক্ষুদ্র প্রয়াসে তাকে একটা গৃহ করে দিতে পেরে আমি ভীষণভাবে গর্বিত। কারণ, এরচেয়ে ভালো কাজ আর কি হতে পারে, যার ঘর নাই তাকে একটা ঘর করে দেওয়া। একজন মানুষের স্বপ্নই থাকে তার একটা পাকা ঘড় হবে।’ গরীব মানুষের জন্য সরকার অবশ্যই এটা খুব ভালো কাজ করেছেন। কারণ, এলাকায় যাঁদের সরকার ঘর ও জমি দিয়েছে, তাদের অবস্থা আসলেই খুব খারাপ।
স্থানীয় সাংসদ মো. আব্দুল কুদ্দুস বলেন, ‘ ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্রমুক্ত সোনার বাংলা বিনির্মাণে মুজিবর্ষে বাংলাদেশে একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না। ভুমিহীন ও গৃহহীনদের ঘর ও জমি প্রদান এক মহৎ উদ্যোগ। বাংলাদেশের মানুষ হিসেবে সুখে-শান্তিতে বসবাস করার অধিকার সবার আছে।’
Leave a Reply