চট্টগ্রামের একমাত্র এস্কেলেটর বা চলন্ত সিঁড়ির ফুটওভার ব্রিজ। চার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ ফুটওভার ব্রিজটি নির্মাণের দুই মাস পর থেকেই রয়েছে বন্ধ।
অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পের মাধ্যমে সরকারি অর্থের নয়-ছয় করেছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)- বলছেন সংশ্লিষ্টরা। অন্যদিকে, চসিক বলছে- বিদ্যুৎ বিলের বাড়তি বোঝা কমাতে বন্ধ রাখা হয়েছে এটি।
২০২০ সালে নগরের জাকির হোসেন সড়কের চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতালের সামনে এ ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়। পথচারীসহ হাসপাতালে আসা রোগী ও স্বজনদের সড়ক পারাপার সহজ করতে সাধারণ সিঁড়ির পাশাপাশি ব্রিজটিতে যুক্ত করা হয়েছিল চলন্ত সিঁড়ি। কিন্তু চালুর দুই মাসের মধ্যেই এটি বন্ধ করে সিঁড়ির দুই পাশের ফটকে ঝুলিয়ে দেওয়া হয় তালা। ফলে ফুটওভার ব্রিজ বাদ দিয়ে আগের মতো ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হচ্ছেন পথচারী ও হাসপাতালে আসা রোগী-স্বজনরা।
চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতালের এক কর্মচারী বলেন, হাসপাতালে আসা রোগীরা সরাসরি গাড়ি নিয়ে ভেতরে চলে যান। রোগীরা এটি তেমন ব্যবহার করেন না। তাছাড়া এটি নির্মাণের পর থেকেই রয়েছে বন্ধ।
স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ রাসেল বলেন, চলন্ত সিঁড়ি থাকলে মানুষ খুব সহজে রাস্তা পার হতে পারতো। কিন্তু নির্মাণের দুই মাস পর থেকেই এটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। এছাড়া বন্ধ থাকার কারণে রাতে এখানে মাদকসেবীসহ নানা অপরাধীদের আড্ডা বসে। অনেক যন্ত্রাংশ চুরিও হয়েছে এখান থেকে। এ নিয়ে সিটি কর্পোরেশনের কোনো মাথাব্যথা নেই। তারা নির্মাআরেক বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন, করোনাকালে ফুটওভার ব্রিজটি বন্ধ করা হয়েছিল। করোনা মহামারি শেষ হলেও ব্রিজটি আর চালু হয়নি। ফলে এত টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ ব্রিজ এখন কোনো কাজেই আসছে না।
চসিক সূত্র জানায়, ২০২০ সালের জানুয়ারিতে চলন্ত সিঁড়িযুক্ত ফুটওভার ব্রিজটি চালু করা হয়। নগরের একমাত্র ও প্রথম চলন্ত সিঁড়ির ফুটওভার ব্রিজ এটি। ৬৫ ফুট দৈর্ঘ্য ও নয় ফুট প্রস্থের এ ফুটওভার ব্রিজে ওঠার জন্য রয়েছে দুটি চলন্ত সিঁড়ি। নামার জন্য রয়েছে সাধারণ সিঁড়ি। এটি নির্মাণে চসিকের ব্যয় হয় তিন কোটি ৯০ লাখ টাকা।
নগর পরিকল্পনাবিদ সুভাষ বড়ুয়া বলেন, এটি ছিল চসিকের অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প। যেখানে এ ফুটওভার ব্রিজ বসানো হয়েছিল, সেখানে অত বেশি লোকজনের চলাচল নেই। যে কারণে এটি ব্যবহারও তেমন হচ্ছে না।
তিনি বলেন, পরিকল্পনা ও ডিজাইনের মূল দর্শন হলো- একটি প্রকল্পের আর্থিক, প্রযুক্তিগত ও পরিবেশগত কার্যকারিতা বিবেচনা করা। এ প্রকল্পের মাধ্যমে জনসাধারণের অর্থের অপচয় হয়েছে মাত্র, যা সম্পূর্ণ অনৈতিক। এ ফুটওভার ব্রিজ যখন নির্মাণ করা হচ্ছিল, তখন আমি চসিকের তৎকালীন মেয়রের কাছে এর কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন করেছিলাম।
চসিকের নির্বাহী প্রকৌশলী জসিম উদ্দিন বলেন, চলন্ত সিঁড়ির ফুটওভার ব্রিজটি নির্মাণের পর চসিকের বিদ্যুৎ বিভাগকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারাই মূলত এটির দেখভাল করেন।
চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, এটি যে পরিমাণ লোক ব্যবহার করে তার চেয়েও বেশি বিদ্যুৎ বিল আসে। এ কারণে বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে এটিকে নতুন জায়গায় নিয়ে বসানোর চিন্তা রয়েছে। ণ করেই দায় সেরেছে।
Leave a Reply