‘চোরে চোরে মাসতুত ভাই’ এই প্রবাদটা আমারা হরহামেশাই ব্যাবহার করি। বিশেষ করে, যখন দুইজন অসৎ লোক অবিকল একই রকম আচরণ করে। কিন্তু দুইজনের একজনের কাজও আমাদের পছন্দ হয় না, উল্টো মনে হয় দুইজন বেশ নিজেদের মধ্যে প্ল্যান করে রেখেছে যে আমাদের ভোগাবেই।
আভিধানিক অর্থে একজনের অন্যায় কাজে আরেকজন সহযোগিতা করলে বা সায় দিলে তাদের একজনকে আরেকজনের সহযোগী বুঝাতে ‘চোরে চোরে মাসতুত’ ভাই প্রবাদটি ব্যাবহার করা হয়। ভাষাবিদরা যখন প্রবাদ প্রবচনের সংজ্ঞা দিয়েছিলেন, তখন বলেছিলেন, ‘প্রবাদ একটি জাতির দীর্ঘ অভিজ্ঞতার সংক্ষিপ্ত অভিব্যক্তি।’ এই অভিব্যক্তি বা প্রকাশ হতে পারে দেশের কোনো ইতিহাস অথবা হতে পারে এমনিই কোনো লোককথা।
সুবলচন্দ্র মিত্র রচিত ‘সরল বাঙ্গালা অভিধান’-এ এই প্রবাদটির উৎস একটি লোকগল্প বলে উল্লেখ করা হয়েছে। গল্পটাও বেশ মজার। একবার এক দল চোর বেশ কিছু জিনিস চুরি করলো। কিন্তু চুরি করতে করতে তাদের বেশ দেরি হয়ে গিয়েছিলো। এদিকে ভোরের আলোও ফুটে উঠতে শুরু করেছে। এখন আলোতে তো চোরাই জিনিস নিয়ে বের হলে তারা ধরা পরে যাবে। এক চোর বুদ্ধি করে পাশের আস্তাবলে সঙ্গীদের নিয়ে লুকিয়ে গেল। সেখানে গিয়ে সহিসের ঘুমানোর জন্য রাখা একটা খাটিয়াও তারা পেয়ে গেল। চোররা সবাই মিলে এক বুদ্ধি বের করল। এখন যদি এই খাটিয়ায় করে চোরাই মাল নিয়ে ওরা বের হয় আর ‘হরিবোল’ বলতে বলতে যায়, তবে মানুষ ভাববে যে ওরা সত্যি কোনো মৃত ব্যক্তিকে শ্মশানে নিয়ে যাচ্ছে সৎকার করার জন্য।
বুদ্ধিটা সবার বেশ মনে ধরে। পরিকল্পনা মতো সব ঠিকঠাক আগাচ্ছিলো, হঠাৎ চোরদের সামনে একটি লোক এসে দাঁড়ালো। সেই লোক চোরদের ইঙ্গিত করে কিছু বুঝাচ্ছিলো। লোকটিও যে বেশি সুবিধার কেউ নয় তা বুঝতে চোরদের মোটেই সময় লাগল না। এই লোকও আরেকজন চোর এবং সে চোরের দলকে ইশারায় সাবধান করছিলো যে, চাদরের আড়াল থেকে বাসন-কোসন দেখা যাচ্ছে। চোরেরা দেখলো ঘটনা মোটেই মিথ্যা নয়। এই লোক সাবধান না করলে তারা তখনই ধরা পরে রামধোলাই খেত।
এরই প্রতিফলন ঘটেছে ভিজিএফএর চাল চুরি নিয়ে। গত ১৬ জুলাই কয়েকটি জনপ্রিয় অনলাইন পত্রিকায় এর খবরও ছাপা হয়।কিন্তু চাল চোরেরা থেকে গেল অধরাই। ভাগ্যিস তারা হয়তো কোন দলের ছত্রছায়ায় থেকে এহেন অসাধু কাজ করে গরীবের বারোটা বাজিয়ে সুবোধ বালক বনে গেল।ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে গেল গরীবের হক মারা সাধু জনরা।তার কারণ কিছুটা হলেও বুঝা যায়! তারা কেঁচো খুড়তে গিয়ে সাপ বের করতে চাননি।তাই হয়তো এযাবতকাল পর্যন্ত চাল চোরদের বিচারের আওতাবহির্ভূত রাখা হয়েছে।ঘটনাটি ঘটেছিল ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার সহনাটী ইউনিয়নে। কয়েকটিমাত্র অনলাইন পত্রিকার স্কিনশট নিচে উল্লেখ করা হলো ঘটনায় ঘটিত বিস্তারিত জানার জন্য।
সাধারণ জনগণ এখন বিচারের আশায় আছে। কি হয় দেখা যাক!
উক্ত তথ্যটি সকালের ডাক হতে সংগ্রহীত।
Leave a Reply