ছোট ভাইকে অপহরণ করে কিডনি বিক্রি চেষ্টার অভিযোগে বড় ভাইকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার (৯ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে চাঁদপুরে আদালতের মাধ্যমে তাকে জেল হাজতে পাঠিয়েছে হাজীগঞ্জ থানা পুলিশ। অভিযুক্তের বাসায় পাওয়া একটি চিঠির সূত্র ধরে অপহরণ আর কিডনি বিক্রির বিষয়টি জানতে পারে তাদের পরিবার ও পুলিশ। এরপরেই পুলিশের কাছে ছুটে যান এই সহোদরের বাবা আবু তাহের। পরে থানায় মামলা বড় সন্তানের বিরুদ্ধে। গত এক সপ্তাহ আগের এই ঘটনার পর গতকাল সোমবার (৮ ফেব্রুয়ারি) রাতে ছোটভাই রায়হান এহসান রিহান (১০)-কে উদ্ধার এবং বড় ভাই ফাহাদ এহসান তারেক (২৮)-কে কৌশলে আটক করে পুলিশ। এমন ঘটনা ঘটেছে হাজীগঞ্জ পৌরসভার মকিমাবাদ গ্রামের জহির মিয়ার বাড়িতে।
এদিকে পুলিশের হাতে উদ্ধার হওয়া চিঠিতে তারেক উল্লেখ করেন, আমি শুধু এই দিনটির জন্য অপেক্ষায় ছিলাম। আমি যেদিন কিডনি বিক্রি করে দিয়েছিলাম। ঠিক সেদিন থেকে আপনারা (বাবা-মা) আমাকে অবহেলা করতে শুরু করছেন। অথচ আপনাদের অত্যাচারে আমি নিজের অঙ্গ বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছি। আপনারা আমার জীবনের সব শেষ করে দিয়েছেন। আমার স্ত্রী অন্যের বিছানা সঙ্গী, শুধু আপনাদের জন্য। আমার সন্তানের মুখ পর্যন্ত আমি আজও দেখি নাই। আমার জীবন নষ্ট করে আপনারা শান্তিতে থাকবেন। ভাবলেন কিভাবে। আমি এতদিন অপেক্ষা করেছি। আপনাদের হাতে সুযোগ থাকা সত্ত্বেও আপনারা আমার কোন ব্যবস্থা করে দেন নাই। আপনার সন্তান যেখানে বেকার সেখানে আপনারা অন্যের সন্তানকে ২০ লাখ টাকা দেন ব্যবসা করার জন্য। আপনাদের টাকা পয়সা মানুষের জন্য। আপনারা আপনাদের টাকা-পয়সা নিয়েই থাকেন। আমার কিডনি বিক্রির সময় যেমন কিছু করতে পারেন নাই। এবারও পারবেন না, আপনাদের ছোট ছেলের সময়।
মূলত তারেকের এই চিঠির সূত্র ধরেই হাজীগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন বাবা আবু তাহের। এরপরই পুলিশ কৌশলে তারেককে ৫ লাখ টাকা দেওয়ার কথা বলে হাজীগঞ্জে নিয়ে আসেন এসআই মোশারফ হোসেন। এদিকে, আটক তারেকের মা ফরিদা সুলতানা শিখা মুঠোফোনে জানান, আমার বড় ছেলে তার ছোট ভাইকে নিয়ে এমন ঘটনা ঘটাবে এটা আমি কল্পনাও করতে পারিনি। পুলিশের হাতে আটক তারেক জানান, আমি আমার ছোট ভাইকে অপহরণ করেছি শুধুমাত্র টাকার জন্য। কিডনি বিক্রয়ের কথাটি চিঠিতে লিখে আমার মা-বাবাকে ভয় দেখিয়ে ছিলাম মাত্র।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মোশারফ হোসেন জানান, অপহরণকারীকে আটক করে তাকে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। অন্যদিকে, অপহৃত রিহানকে তার বাবা মায়ের কাছে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তারেক বেকার এবং একজন মাদকাসক্ত। মাদকের নেশায় বুদ হয়ে থাকা অবস্থায় তিনি ছোটভাইকে অপহরণ করেন। তাছাড়া এই মাদকের টাকা জোগাড় করতে গিয়ে তিনি অনেক আগে নিজের কিডনিও বিক্রি করেন।
Leave a Reply