১৯৭১ সাথে ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি দখলদার বাহিনী ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) আত্মসমর্পণ করার মাধ্যমে বিজয় অর্জন করে পৃথিবীর মানচিত্রে স্বাধীন বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে।
আমাদের বিজয় একদিনে আসে নি, দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে লাখো প্রাণের মাধ্যমে অর্জিত হয় আমাদের স্বাধীনতা।স্বাধীনতার জন্য যারা তাদের জীবন বির্সজন দিয়েছে তাদেরকে জাতি আজ গভীর শ্রদ্ধাভরে স্বরণ করছে।
বিশ্বের সব দেশে স্বাধীনতা দিবস থাকলেও বিজয় দিবস থাকে না।বাংলাদেশ এই সৌভাগ্যের অধিকারী দেশ।
১৯৪৭ সালে ইংল্যান্ড থেকে মুক্তি পেয়ে ধর্মের ভিত্তিতে পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ) ও পশ্চিম পাকিস্তান ( বর্তমান পাকিস্তান) নিয়ে পাকিস্তান নামক রাষ্ট্র গঠিত হয়।মুক্তির আশায় নতুন রাষ্ট্র গঠিত হলেও ফল হয় তার বিপরীত,।শুরু হয় নতুন করে শোষণ, নির্যাতন। এই শোষণের হাত থেকে মুক্তির জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক আন্দোলন, সংগ্রামে ফেটে পড়ে। দীর্ঘ ২৪ বছরের আন্দোলন সংগ্রামের পর রণাঙ্গানে শত্রুকে পরাজিত করে বিজয় অর্জন করে। আজ আমাদের স্বাধীনতার ৪৯ বছর।ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে এটি খুব বেশি সময় না হলেও একটি জাতির অগ্রগতির জন্য একবারে কম সময় নয়।কিন্তু প্রশ্ন আসে,যে লক্ষ্য আদর্শ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল, সেই লক্ষ্য ও আদর্শ কতটা অর্জিত হয়েছে? স্বাধীনতার প্রধান আকাঙ্ক্ষা ছিল সব ধরনের অধীনতা থেকে মুক্তি এবং সমাজে গণতন্ত্র, ন্যায় ও সমতা প্রতিষ্ঠা। সব নাগরিকের মৌলিক চাহিদা ও মানবাধিকার নিশ্চিত করতে বাহাত্তরের সংবিধানে জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতাকে মৌলিক নীতি হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছিল।কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস আমরা সেখানে পারি নি।একদলীয় শাসন কিংবা সামরিক শাসন বারবার আমাদের অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে দেয়। ৯০ এর গণ-অভ্যুত্থানের পর প্রতিষ্ঠিত সংসদীয় ব্যবস্থাকে সংহত রাখা সম্ভব হয় নি। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা,ধর্মীয় উগ্রতা, সন্ত্রাসবাদ,দূর্নীতি,ধর্ষণ নিপীড়ন উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্থ করে।
বর্তমান করোনা মহামারীতে আমরা দেখতে পেয়েছি দূর্নীতির ভয়াবত অবস্থা! স্বাস্থ্যখাতে দূর্নীতি, সরকারি ত্রাণ বিতরণেও দূর্নীতি। রাস্তা ঘাটে মেয়েরা অনিরাপদ ধর্ষণ নিপীড়ন লেগেই আছে যা একটি রাষ্ট্রকে পিছনের দিকে ঠেলে দেয়।
বাংলাদেশ ধর্মনিরপেক্ষ দেশ হলেও বারবার বিভিন্নভাবে ধর্মীয় সংঘাত,সন্ত্রাসবাদ আমাদের স্বাধীনতার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনের অন্যতম বাঁধা।
নানাবিধ বাধার মধ্যে দিয়েও বাংলাদেশ সরকার তার দক্ষতার সাথে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে। যার বহিঃপ্রকাশ আমরা দেখতে পাই পদ্ম সেতু, বঙ্গবন্ধু সেটেলাইট, মেট্রোরেল প্রকল্প সহ আরও অনেক উন্নয়ন প্রকল্প। যা বাংলাদেশকে বিশ্বে উন্নয়নে রোল মডেল হিসেবে চিহ্নিত করে।
আজকের বিজয় দিবসের শপথ হোক সব ধরনের হানাহানি ও বৈরিতা বিদ্বেষকে পেছনে ফেলে দেশের জনগণের কল্যাণে সবাই এক হয়ে কাজ করব।
Leave a Reply