চলমান রমজানে সহনীয় রাখতে বেশি ব্যবহৃত ছয়টি পণ্যের যৌক্তিক দর নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। পণ্যগুলো হচ্ছে: ছোলা, মসুর ডাল, পেঁয়াজ, সয়াবিন, চিনি ও খেজুর।
কিন্তু দাম নির্ধারণের দুদিন অতিবাহিত হলেও তা কার্যকর হয়নি। বরং খুচরা বাজারে এসব পণ্য সরকারের বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে কেজিতে ৫ থেকে সর্বোচ্চ ৭০ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। এ জন্য সরকারের মনিটরিং ব্যবস্থার দুর্বলতাকে দায়ী করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
গত সোমবার এই ছয় পণ্যের যৌক্তিক সর্বোচ্চ দাম নির্ধারণ করে সরকারি সংস্থা কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। তারা পণ্যের আমদানি বা উৎপাদন খরচ, পরিবহণ ব্যয় ও ব্যবসায়ীদের মুনাফা যোগ করে যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করেছে। ছোলার দাম নির্ধারণ করেছে ৬৩-৬৭ টাকা।
বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৭৫-৮০ টাকা। প্রতি কেজিতে ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত মুনাফা করছেন ১২-১৩ টাকা। পেঁয়াজের দাম বেঁধে দেওয়া হয়েছে ৪০ টাকা কেজি।
বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪৫ টাকা। প্রতি কেজিতে বাজারভেদে বাড়তি মুনাফা নেওয়া হচ্ছে ৫ টাকা। তবে কোনো কোনো বাজারে ৪০ টাকা কেজি দরেই বিক্রি হচ্ছে।
বড় দানার মসুর ডালের দাম নির্ধারণ করা হয় ৬৭-৬৮ টাকা। বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৭৫ টাকা কেজি। প্রতি কেজিতে অতিরিক্ত মুনাফা করছেন ৭-৮ টাকা।
এক লিটার বোতলজাত সয়াবিনের দাম নির্ধারণ করা হয় ১৩৯ টাকা। বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা। প্রতি কেজিতে বাড়তি মুনাফা এক টাকা।
চিনির দাম নির্ধারণ করা হয় ৬৭-৬৮ টাকা কেজি। বিক্রি হচ্ছে ৭০-৭৫ টাকা কেজি। প্রতি কেজিতে বাড়তি মুনাফা নিচ্ছেন ৩-৭ টাকা।
সাধারণ মানের খেজুরের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৮০-১০০ টাকা। বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা কেজি। প্রতি কেজিতে বাড়তি মুনাফা করছেন ৫০-৭০ টাকা।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর কাওরানবাজার, শান্তিনগর কাঁচাবাজার ঘুরে ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পাইকারি ও খুচরা বাজারে সব ধরনের পণ্যের পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। তারপরও দাম কমছে না। উলটো বেড়েই চলেছে।
এদিকে রোজার শুরুর দিন থেকে নতুন করে বিভিন্ন সবজির দাম বেড়েছে। এর মধ্যে টমেটোর কেজি উঠেছে ৬০-৮০ টাকা। রোজা শুরুর আগের দিন এর দাম ছিল ২৫-৩০ টাকা কেজি। শসা বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০ টাকা কেজি।
রোজা শুরুর আগে এর দাম ছিল ৪০-৫০ টাকা কেজি। বেগুনের কেজি রোজার শুরুর আগে ছিল ৩০-৪০ টাকা। এখন তা বেড়ে ৬০-৭০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, রোজায় এসব পণ্যের বেশি চাহিদা থাকে। যে কারণে পাইকারি বাজারে এগুলোর দাম হঠাৎ করে বেড়ে গেছে। ফলে খুচরা বাজারেও এর দাম বাড়াতে হয়েছে।
রাজধানীর কাওরানবাজারে পণ্য কিনতে আসা মো. আবু জাফর যুগান্তরকে বলেন, সরকার নাকি রমজাননির্ভর ছয় পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। সংবাদমাধ্যমে এই খবর পড়েছি। কিন্তু কিনতে এসে দেখি বিক্রেতা তাদের মনগড়া দামেই বিক্রি করছেন।
তিনি জানান, সরকারের দামে পণ্য বিক্রি করতে বললে তারা বলেন, কিনলে কেনেন, না-হলে চলে গিয়ে টিসিবির পণ্য কেনেন।
শান্তিনগর কাঁচাবাজারে নিত্যপণ্য কিনতে আসা লাকি আক্তার বলেন, বাজারে ছোলা, ডাল, তেল আগের মতোই বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে। কোনো ধরনের দাম কমেনি। সে কারণে বাড়তি দর দিয়ে পণ্যগুলো কিনে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে। তাই সরকারের বাজার তদারকি জোরদার করতে হবে।
এদিকে সরকারের বেঁধে দেওয়া দর কার্যকর করতে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, কৃষি বিপণন অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়ে ঢাকায় অন্তত ৩০টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করার কথা রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে এই তদারকির কোনো তোড়জোড় দেখা যায়নি।
জানতে চাইলে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান যুগান্তরকে বলেন, প্রতিবছরের মতো এবারও ছাড় দেওয়া হলে অসাধু ব্যবসায়ীরা সব সময়ই সুযোগ নেবে।
তাই এবার সরকারকে অযৌক্তিকভাবে পণ্যের দাম বাড়ানোর পেছনের ব্যক্তিকে চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনা জরুরি। পণ্যের দাম যৌক্তিকভাবে নির্ধারণ করতে হবে। এতে ভোক্তারা উপকৃত হবেন।
জানতে চাইলে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ ইউসূফ বলেন, বেশকিছু পণ্যের আমদানি, উৎপাদন ও বাজার পরিস্থিতি বিবেচনা করে যৌক্তিক খুচরা মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এর চেয়ে বেশি দামে এগুলো বিক্রির কোনো সুযোগ নেই। বাজার মনিটরিংয়ে এরচেয়ে বাড়তি দাম নিতে দেখা গেলে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে।
Leave a Reply