শরত বিদায় নিয়েছে ১১ দিন। মেঘের ভেলায় বিদায় নেওয়ার কথা টানা বৃষ্টি। হেমন্তের ফুরফুরে বাতাসে দুলে ওঠার কথা ফসলের খেত। তারপরও প্রকৃতির আদুরে কান্না যেন থামছেই না। চাষিদের জন্য সে কান্না হয়ে উঠেছে অভিশাপ। উৎসবের আগমনে বাংলার মাঠঘাট সোনারঙে সেজে থাকার কথা থাকলেও কোথায় যেন বেদনার ছাপ জড়িয়ে আছে। তারপরও আশার চাদরে সব বেদনা ঢেকে এগিয়ে চলেছে কৃষক। হয়তো সুদিন আসবে!
হেমন্তে বাংলার আকাশে সাদা মেঘের চলাচলে মুখর থাকে। প্রকৃতি এক নিখাদ নিরবতায় হেমন্তকে অভ্যর্থনা জানায়। নিজেকে সাজিয়ে তোলে হলুদ গাঁদা, মল্লিকা আর শিউলি ফুলের সাজে। ধবধবে কাশফুল পেরিয়ে এক নতুন রূপে নিজেকে সাজিয়ে তোলে প্রকৃতি। নালাম্বরির সাজে মেতে ওঠে তরুণীরা। নীল পাঞ্জাবি, সাদা পাজামায় কাশের বনে আকাশ ছুঁতে মাতোয়ারা হয়ে ওঠে তরুণ। কিন্তু এবার সে আয়োজনেও ভাটা। খুব একটা ঘোরাঘুরিতে নেই কেউ। একদিকে করোনাভাইরাসের প্রকোপ অন্য দিকে দফায় দফায় বৃষ্টি সবাইকে যেন ঘরবন্দি করে রেখেছে।
বাংলা মাসের কার্তিক-অগ্রহায়ণজুড়ে ঋতুচক্রের চতুর্থ ঋতু হেমন্ত স্থান দখল করে নেয়। ‘কৃত্তিকা’ ও ‘আর্দ্রা’ দুটি তারার নাম অনুসারে কার্তিক ও অগ্রহায়ণ মাসের নামকরণ করা হয়েছে।
বর্ষার রেশ কাটিয়ে উঠে প্রকৃতি কেমন শুষ্ক আর শুদ্ধতায় নিজেকে নতুন রূপে গড়ে তোলে। হেমন্তে শিশিরস্নাত সকাল, পাখির কলকাকলিতে মুগ্ধ সন্ধ্যা, রাতের একটু শীতলতা, মেঘমুক্ত আকাশে জোছনার সৌন্দর্য যেন এক অপার আনন্দের সঞ্চার করে। মাঠে মাঠে পাকা ধানের সোনালি আভা, পাকা ধানের ম ম গন্ধে প্রকৃতি ভারি হয়ে ওঠে। ফসলের বাহারি রূপ এক অনন্য সৌন্দর্যের পরির দেশে পরিণত করে। এর পরপরই আসে ধান কাটার ধুম।
মাঠে মাঠে আরেক উৎসব। কৃষ্ণকায় আর জীর্ণদেহী কৃষকের লাল-সাদা দাঁতের হাসি আবহমান বাংলার চিরায়ত সৌন্দর্যেরই বহিঃপ্রকাশ। ধান কাটে মনের সুখে। আর হরেকরকম গানে মেতে ওঠে কৃষক।
খুব ভোরে খালি পায়ে সবুজ-কোমল কুয়াশা মোড়ানো ঘাষগুলো মাড়িয়ে সোনালি আভায় ডুব দিয়ে এ ঋতুতে কৃষকদের মাঠে আগমন ঘটে। আর মধ্যাহ্নে সেই কাক্সিক্ষত সোনালি ধান মাথায় করে বাড়ির উঠোন পর্যন্ত নিয়ে আসা নতুন রূপে আনন্দের সঞ্চার করে সবার মনে।
ধানের নতুন ভারা চোখে পড়লে কৃষাণীর মুখে দেখা যায় চিকচিক হাসি। নতুন ধান সংগ্রহের পর সেই ধান থেকে প্রাপ্ত চালের মিষ্টি পায়েস কিংবা ঢেকিছাঁটা চালের ভাত এক অপরিসীম তৃপ্তির সঞ্চার করে। পিঠা-পুলির উৎসবে চলে ভিন্ন আমেজ। কিন্তু এবার কতটা হবে, তা নিয়ে সংশয় সবার মনে।
Leave a Reply