রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার কেশরহাট বাজারের প্রবেশমুখে ১৯ শতক ডোবা জমি প্রতারণা করে মনগড়া ভুয়া স্ট্যাম্পে জমি লিখে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রভাবশালী এক কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে। তিনি কেশরহাট পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর ও জেলা যুবলীগের সহ-সম্পাদক মো. ছাবের আলী মণ্ডল।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এলাকার সহজ-সরল মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে জমি জায়গা নিজের নামের করে নেওয়ার একাধিক অভিযোগ রয়েছে এ কাউন্সিলরের নামে। আর তার এ প্রতারণার ফাঁদে পড়ে নিজের জমির দখল হারিয়েছেন অনেকেই।
সম্প্রতি কেশরহাট বাজার এলাকায় ১৯ শতক জমি সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) থেকে লিজ নিয়েছেন বলে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে প্রতারণার মাধ্যমে নামমাত্র মুল্যের ভুয়া মনগড়া স্ট্যাম্পে লিখে নিয়েছেন কাউন্সিলর ছাবের আলী মণ্ডল। সেক্ষেত্রে প্রতারণা করে বর্তমান বাজার মূল্যে ১৯ লাখের জমি মাত্র ২ লাখ ৫০ হাজার টাকায় কাছ থেকে নিজের নামে করে নিয়েছেন।
পরে ছাবের কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে মোহনপুর থানায় প্রতারণার অভিযোগ দেন জমির ভোগ দখলকারীদের একজন ভুক্তভোগী সাবেক কাউন্সিলর বুলবুল।
প্রতারণা করে জমি দখলের কাজে তাক সহায়তা করেছেন কেশরহাট সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. শহিদুল ইসলাম। জানা গেছে পেশায় তিনি একজন শিক্ষক হলেও প্রতিনিয়ত ব্যস্ত থাকেন প্রতারণা আর দালালি নিয়ে। চলমান করোনা সংকটে স্কুলকলেজ বন্ধ থাকায় বর্তমানে তিনি কেশরহাট পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ভূমিদস্যু মো. ছাবের আলী মণ্ডলের হয়ে সওজের জায়গা খুঁজে বের করে দখলে নেওয়ার বিশেষ সহকারী হিসেবে কাজ করছেন। এদের সঙ্গে সহযোগিতায় আরও রয়েছেন, দুর্র্ধষ ডাকাত ফজলুর রহমান ওরফে ফজলু ডাকাত।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গ্রামের সহজসরল মানুষকে ভুল বুঝিয়ে প্রতারণা করে তাদের দখলে থাকা সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের জমি জোরপূর্বক দখল করে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে সেখানে ঘর নির্মাণ করে চুক্তিতে ভাড়া দেয় কাউন্সিলর ছাবের আলী মণ্ডল। কেশরহাট বাজার এলাকায় সড়ক ও জনপদ বিভাগের অধিকাংশ জায়গা দখল করেছেন ভূমিদস্যু কাউন্সিলর ছাবের আলী। বর্তমানের তিনি সওজের জায়গা দখল করে প্রায় শতাধিক ঘর নির্মাণ করেছেন। যার অধিকাংশ মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ভাড়া দিয়েছেন।
অনুসন্ধান সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কে কেশরহাট বাজার এলাকায় ডোবা ১৯ শতক সড়ক ও জনপথ (সওজ) এর জমি ভোগদখল করে আসছেন একই পরিবারের ৭ ভাই। জমির আরএস খতিয়ানে তাদের নামে রেকর্ড হলেও পরবর্তীতে ২০১৫ সালের বিএস রেকর্ড হয় সড়ক ও জনপথ (সওজ) এর নামে। ডোবাটি দখলে মরিয়া হয়ে ওঠেন প্রতারক চক্রের প্রধান কাউন্সিলর ও তার দুই সহযোগী। এরপর থেকেই শুরু হয় ভুক্তভোগী ৭ ভাইয়ের দখলে থাকা ১৯ শতক সওজের জায়গা প্রতারণা করে দখলে নেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা। কিন্তু প্রথম ধাপে বিভিন্ন দেনদরবারে কেটে যায় বছর দেড়েক। এরপর সম্প্রতি কৌশল পাল্টে পুনরায় দখলের চেষ্টা করে প্রতারক চক্রটি। দ্বিতীয় ধাপে কাউন্সিলর ছাবের আলীর প্রতারণার কাজে নিয়োগ করা দুই প্রতারক ভুক্তভোগীদের সাথে বিভিন্ন কৌশলে দেনদরবার শুরু করে দেন। এর একপর্যায়ে তারা দালাল সেজে প্রতারণার পথ বেছে নেন।
ভুক্তভোগীরা জানান, তাদের দখলে থাকা ১৯ শতক জমি সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ থেকে কাউন্সিলর ছাবের আলীর নামে ৯৯ বছরের জন্য লিজ হয়ে গেছে। ভুক্তভোগীদের এমন খবর দেন প্রতারক শিক্ষক শহিদুল ইসলাম। আর এ জন্য তিনি নিজে গিয়ে যাবতীয় তথ্যাদিসহ কাগজপত্র ও ৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা সওজ কর্তৃপক্ষের কাছে জমাও দিয়েছেন। ৩ দিন থেকে এক সপ্তাহের মধ্যে কাউন্সিলর ছাবের আলী মণ্ডলের নামে ১৯ শতক সওজের জায়গা লিজ হয়ে কাগজ চলে আসবে। আর কাগজ হাতে নিয়ে কাউন্সিলর ছাবের ভুক্তভোগীদের দখলে থাকা ১৯ শতক সওজের জায়গা দখল নেবেন। তখন ভুক্তভোগীরা এক টাকাও পাবেন না বলে জানানো হয়।
তাই ভুক্তভোগীরা যদি টাকা নিতে চান তাহলে স্ট্যাম্পে লিখিতভাবে চুক্তির মাধ্যমে এখনি নিতে হবে। এর মাঝে কিছু কিছু সময় শিক্ষক শহিদুলকে প্রতারণায় সহযোগিতা করেন আরেক প্রতারক ফজলু ডাকাত। প্রাথমিক পর্যায়ে জমির দাম নির্ধারণ করা হয় মাত্র ২ লাখ ২০ হাজার টাকা। যা পরবর্তীতে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা নির্ধারণ করে দেন শহিদুল ইসলাম। এরপর বিভিন্নভাবে তাদের ওপর চাপসৃষ্টি করে প্রতারক চক্র।
শেষমেশ একসপ্তাহের মধ্যে টাকা না নিলে পরে আর পাবেননা ভেবে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা নিতে রাজি হন ভুক্তভোগীরা। যদিও এ জন্য তাদেরকে এককপি করে ছবি ও জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে স্ট্যাম্পে সাক্ষর করে চুক্তিপত্রের মাধ্যমে টাকা নেওয়ার শর্ত জুড়ে দেয় কাউন্সিলর ছাবের আলী। পরে কাউন্সিলর ছাবের আলী ও তার দুই দালালের প্রতারণার ফাঁদে পা দেয় ভুক্তভোগী ৭ ভাইয়ের মধ্যে ৫ ভাই। এই ৫ ভাই হচ্ছে, মোহনপুর উপজেলার কেশর গ্রামের মো. গোলাম মোস্তফা, মো.মাজহার আলী মণ্ডল, মো.শহিদুল ইসলাম, মো.আব্দুর রশীদ ও মো. মোনারুল ইসলাম।
এখন ভুক্তভোগীরা কাউন্সিলর ছাবের আলীর কাছে গেলে তিনি জমি ফেরত দিচ্ছেন না। একইসঙ্গে হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন ভুক্তভোগীদের। এমনকি বিষয়টি নিয়ে কারও সঙ্গে কথা না বলতেও নির্দেশ দিয়েছেন কাউন্সিলর।
এ বিষয়ে কাউন্সিলর ছাবের আলী মণ্ডলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, `আমি কোন জমি দখল করিনি। এ সব মিথ্যা।’
হুমকি ও প্রতারণা করে জমি লিখেছেন নিয়েছেন এমনকি তার ভুয়া স্ট্যাম্পও আছে এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি ফোনটি কেটে দেন। পরে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি ফোনটি আর রিসিভ করেননি।
Leave a Reply