রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা কাউসার আলীর বিরুদ্ধে নিজ অফিসেই মাদক সেবনের অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই নয়, একজন অফিস সহায়ক এবং স্থানীয় যুবকদের সঙ্গে নিয়ে অফিসেই মাদকের আসর বসান তিনি।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজর এড়াতে সরকারি অফিস অনেকটা নিরাপদ ভেবেই তিনি অফিসে মাদকের আসর বসান। সকালে অফিসে আসেন না তিনি। আসেন দুপুর ২টার পর। এরপর গভীর রাত পর্যন্ত চলে মাদকের জমজমাট আসর।
এ কারণে দাফতরিক কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটে এবং সমিতির নিবন্ধন ও পরিদর্শন প্রতিবেদন নিতে আসা লোকজন ভোগান্তির শিকার হন। অনেকেই দীর্ঘদিন ঘুরেও সমিতির নিবন্ধন এবং পরিদর্শন প্রতিবেদন পান না।
এছাড়া সেবাপ্রার্থীরা প্রতিবাদ করলে তাদের হুমকি-ধমকি দেয়া হয়। কাজ করার বিনিময়ে গ্রহণ করেন উৎকোচ। জলমহাল পাইয়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে দুই থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত গ্রহণ করেন। সেবাপ্রার্থী এবং পরিচিতদের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে করেন না পরিশোধ।
এসব ঘটনায় গত ১২ অক্টোবর বিভাগীয় সমবায় কার্যালয়, রাজশাহীর বিভাগীয় যুগ্ম নিবন্ধক আবদুল মজিদ বরাবর কাউসার আলীর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। লিখিত অভিযোগে মোট ৫২ জন ভুক্তভোগী স্বাক্ষর করেছেন। অভিযোগের অনুলিপি বিভিন্ন দফতরে প্রেরণ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। এ সংক্রান্ত সমস্ত প্রমাণাদি যুগান্তরের কাছে সংরক্ষিত আছে।
লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা কাউসার আলী দুর্গাপুরে যোগদান করার কিছুদিন পর থেকেই স্থানীয় যুবকদের সঙ্গে নিয়ে অফিসের বাইরে মাদক সেবন শুরু করেন। মাদক সেবন করতে গিয়ে তিনি একাধিকবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মুখোমুখি হয়ে পালিয়ে রক্ষা পান। এরপর থেকে তিনি নিজ অফিসেই মাদক সেবন করতে শুরু করেন। গত দেড় বছর থেকে তিনি স্থানীয় যুবকদের সঙ্গে নিয়ে দুপুর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত অফিসেই মাদকের জমজমাট আসর বসান।
আর মাদকের আসরে কাউসার আলীর সবচেয়ে বড় সহযোগী হিসেবে কাজ করেন তার অফিস সহায়ক কৌশিক কুমার দাস। সম্প্রতি কৌশিক কুমার দাসকে নানা অভিযোগে বদলি করা হয়েছে। এছাড়া সমবায় কর্মকর্তা কাউসার আলীকে বদলি করা হলেও অদৃশ্য কারণে বদলির আদেশ স্থগিত করে তিনি দুর্গাপুরেই বহাল তবিয়তে রয়েছেন।
ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা অভিযোগে আরও উল্লেখ করেন, অফিসে মাদকের আসর বসানোর স্বাভাবিক কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটে। অনেক সময় সমিতির নিবন্ধন ও পরিদর্শন প্রতিবেদন নিতে এসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এমনকি দীর্ঘ সময়েও এসব কাজ হয় না।
কাউসার আলী বিভিন্ন সমিতির নিবন্ধন করে ইতোমধ্যে মোটা অঙ্কের টাকা গ্রহণ করেছেন। কিন্তু কাজ করেননি এবং টাকাও ফেরত দিচ্ছেন না। আবার জলমহাল লিজ দেয়ার নাম করে তিনি অনেক ব্যক্তির কাছ থেকে দুই থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত নিয়েছেন। কিন্তু কাউকে জলমহাল লিজ দেননি এবং টাকা ফেরত না দিয়ে তাদের হয়রানি করছেন।
দুর্গাপুর উপজেলার আলিয়াবাদ মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি শামসুর রহমান বলেন, সমবায় কর্মকর্তা কাউসার আলী মাদকাসক্ত। তিনি নিয়মিত অফিস করেন না। আমাদের অনেক মৎস্যজীবী সমিতির সদস্যদের কাছ থেকে নিবন্ধন এবং জলমহাল লিজসহ বিভিন্ন ধরনের কাজ করে দেয়ার কথা বলে তিনি মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। সমবায় অফিসের সমস্ত কাজে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। আমরা এ ধরনের কর্মকর্তার অতিদ্রুত অপসারণ চাই। তাকে অপসারণ করা না হলে এই এলাকার মৎস্যজীবীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
অভিযোগ অস্বীকার করে কাউসার আলী বলেন, আমি কোনো ধরনের মাদকদ্রব্য গ্রহণ করি না। স্থানীয় যুবকদের সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। সমবায় সমিতির সদস্যদের সঙ্গে আমার সম্পর্ক। এছাড়া কারও কাছ থেকে কোনো ধরনের উৎকোচ গ্রহণের অভিযোগও ভিত্তিহীন। আমি সঠিক সময়েই অফিসে আসি। আর অফিসে মাদকের আসর বসানোর অভিযোগটিও ভিত্তিহীন।
বিভাগীয় সমবায় কার্যালয় রাজশাহীর যুগ্ম নিবন্ধক আবদুল মজিদ বলেন, দুর্গাপুরের সমবায় কর্মকর্তা কাউসার আলীর বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। ইতোমধ্যে অফিসের অফিস সহায়ক কৌশিক কুমার দাসকে বদলি করা হয়েছে। আর কাউসার আলীর অভিযোগের ব্যাপারে তদন্তের জন্য উপবিভাগীয় নিবন্ধকের (প্রশাসন) নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর কাউসার আলীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Leave a Reply