অর্থনৈতিক জীবনে ধর্ম (Religion in Economic Life) : পৃথিবীতে জীবন ধারণের জন্য অর্থের প্রয়োজন রয়েছে। তবে এই অর্থ কিভাবে উপার্জন করতে হবে প্রায় প্রত্যেক ধর্মে তার সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা রয়েছে। কালোবাজারি, চোরাচালান, কৃপণতা, অপচয়, অপব্যয়, লোভলালসা, বখরাবাজি, চাঁদাবাজি, জালিয়াতি, অবৈধ দখল, সুদ, অত্যাচার, জোরজুলুম প্রভৃতির মাধ্যমে অর্থ উপার্জনকে সব ধর্মে অত্যন্ত গর্হিত কাজ বলে গণ্য করা হয়েছে।
১৪. নৈতিক জীবনে ধর্ম (Religion in Moral Life) : ধর্ম মানুষের নৈতিকতা, নীতিবোধ, স্বভাব ও চরিত্রের ওপর গুরুত্বারোপ করে। প্রত্যেক ধর্মে সততা, সত্যবাদিতা, ন্যায়পরায়ণতা, বিশ্বস্ততা, উদারতা প্রভৃতি নৈতিক গুণের শিক্ষা দেওয়া হয়। মানুষ যদি নৈতিকভাবে শক্তিশালী হয়, তাহলে সে নীতিবিবর্জিত কোনো কাজ করা থেকে নিজেকে যেমন বিরত রাখে, তেমনি অন্যকে তা করতে বাধা দেয়।
১৫. ন্যায়বিচার (Justice) : সুষ্ঠু সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য ন্যায়বিচার বা ইনসাফ আবশ্যক। প্রত্যেক ধর্ম মানুষের জন্য ন্যায়বিচারের কথা বলে। পারিভাষিক অর্থে সত্যের ওপর অটল থাকা, মিথ্যা ও জুলুম থেকে দূরে থাকা। আর তা কথায় ও কাজে, জীবনের সব ক্ষেত্রে। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়, অপরাধপ্রবণতা কমে যায় এবং মানুষ খারাপ কাজ থেকে দূরে থাকে। জাতি, বর্ণ, গোত্র, ধনী-গরিব, সাদা-কালো-নির্বিশেষে সব মানুষকে ধর্ম সমান অধিকার দিয়েছে। কোনো ধর্মই অবিচার ও অপরাধকে প্রাধান্য দেয় না।
১৬. মনুষ্যত্বের বিকাশ (Development of Humanity): মানুষের মনুষ্যত্ব বিকাশে ধর্মের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। মানুষের মধ্যে যেমন ভালো অর্জনীয় মৌলিক গুণাবলি আছে, তেমনি মন্দ গুণ বা বর্জনীয় দোষ-ত্রুটিও আছে। মানুষ যখন ধর্মভীরু হয় তখন তার মধ্যে থেকে মন্দ ও বদ গুণগুলো দূর হয়। ফলে মানুষ অপরের দুঃখ-দুর্দশা দূরীকরণে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
১৭. সৃষ্ট জীবের সেবা (Serving of Human and Creatures) : মানবসেবাই পরম ধর্ম। পৃথিবীর প্রত্যেক ধর্মে মানুষ এবং সৃষ্টি জীবের সেবাকে ইবাদত হিসেবে গণ্য করা হয়। প্রাণিকুলের সঙ্গে আচরণ যেমন—কোনো গৃহপালিত ও অন্যান্য পশু-পাখির প্রতি দয়া-দাক্ষিণ্য প্রদর্শন ও এদের কষ্ট না দেওয়া মানব আচরণের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ইসলাম ধর্মে মানুষ ও আল্লাহর সৃষ্ট জীবের সেবা করাকে মহৎ কাজ হিসেবে গণ্য করা হয়।
১৮. পরকালের মুক্তিলাভ (Relief of the eternal life) : ধর্ম মানুষকে ইহলৌকিক ও পারলৌকিক মুক্তির শিক্ষা দেয়। পৃথিবীর প্রায় সব ধর্মই পরকাল বা মৃত্যুর পরবর্তী জীবনে বিশ্বাস করে। মানুষ ইহকালে যেমন কর্ম করবে, পরকালে তেমন ফল ভোগ করবে। অর্থাৎ পৃথিবীতে ভালো কাজ করলে পরকালে শান্তি এবং খারাপ কাজ করলে পরকালে শাস্তি পাবে। ধর্মের এই শিক্ষা মানুষকে যেমন ইহকালের খারাপ কাজ থেকে দূরে রাখে, তেমনি পরকালের মুক্তির পাথেয় জোগাতে সাহায্য করে।
১৯. জীবনের মূল্য (Value of Life) : ধর্ম জীবনের মূল্য বোঝাতে সাহায্য করে। ধর্মই বলে পৃথিবীর এই জীবন ক্ষণস্থায়ী, মানুষকে মরতে হবে, মৃত্যু অবশ্যই আসবে। এভাবে ধর্ম মানুষকে জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে যথাযথ ব্যবহারের শিক্ষা দেয়। মানুষ ভালো কিছু করে পৃথিবী থেকে বিদায় নেবে—এটাই ধর্মের শিক্ষা। নিষ্ঠুরতা, পাশবিকতা, নির্মমতা, বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
Leave a Reply