মহান আল্লাহ তাঁর বান্দার ওপর সাধ্যের বাইরে কিছু চাপিয়ে দেন না। পবিত্র কোরআনে তিনি বলেন, ‘আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান, তোমাদের জন্য জটিলতা কামনা করেন না।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৮৫)
তারই ধারাবাহিকতায় তিনি বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে বান্দার জন্য বিভিন্ন ইবাদতের বিধান সহজ করে দেন। যেমন—কারণবশত মোজার ওপর মাসেহ করা। মুসাফির হোক কিংবা মুকিম, উভয়ের জন্যই নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত মোজার ওপর মাসেহ করার অবকাশ রয়েছে।
রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, মোজার ওপর মাসেহ করার সময় মুসাফিরের জন্য তিন দিন তিন রাত এবং মুকিমের জন্য এক দিন এক রাত। (আবু দাউদ, হাদিস : ১৩৫)
শরিয়তে অজুর মধ্যে সহজ হওয়ার জন্য পা ধোয়ার বিকল্প হিসেবে মোজার ওপর মাসেহ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এটি জায়েজ হওয়ার জন্য কিছু শর্ত রয়েছে, নিম্নে সেগুলো তুলে ধরা হলো—
মাসেহ জায়েজ হওয়ার শর্তসমূহ
যতক্ষণ পর্যন্ত নিম্নোল্লিখিত শর্তসমূহ পাওয়া যাবে, মোজার ওপর মাসেহ জায়েজ হবে।
১। পবিত্র হয়ে মোজা পরা। অর্থাৎ অজু করে পা ধোয়ার পর মোজা পরা। (বুখারি, হাদিস : ১৯৯)
২। মোজা দ্বারা টাখনু ঢাকা থাকতে হবে। (মুসলিম, হাদিস : ৩৫৪)
৩। মোজা ফাটা হলে পায়ের ছোট আঙুলের তিন আঙুল পরিমাণের কম ফাটা থাকতে হবে। (আবু দাউদ, হাদিস : ২৪২০, আল-আশবাহ : ১/১১৪, আল মওসুআতুল ফিকহিয়্যা আল কুয়েতিয়্যা : ৩৭/২৬৫)
৪। উভয় মোজা বাঁধা ছাড়া পায়ে লেগে থাকতে হবে।
৫। তা ধারাবাহিক চলার উপযোগী হতে হবে। (আল মওসূআতুল ফিকহিয়্যা আল কুয়েতিয়্যা : ৩৭/২৬৪)
মাসেহর ফরজ ও সুন্নতসমূহ
মাসেহর ফরজ সীমারেখা—
হাতের ছোট তিন আঙুলের সমান পায়ের ওপরের অংশ মাসেহ করা। (আবু দাউদ, হাদিস : ১৪০, সুনানে কুবরা লিল বায়হাকি : ১৪৩৭, মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা : ১/১৮৫)
মাসেহর সুন্নত
পায়ের আঙুলের মাথা থেকে হাতের আঙুলগুলো প্রশস্ত করে টাখনু পর্যন্ত মাসেহ করবে। মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা : ১/১৮৫, কিতাবুল আসার : ১/৭২)
মোজা মাসেহর নির্ধারিত মেয়াদ
মুসাফিরের জন্য তিন দিন তিন রাত এবং মুকিমের জন্য এক দিন এক রাত। (আবু দাউদ, হাদিস : ১৩৫)
মাসেহর সময় আরম্ভ হবে, যখন থেকে হাদাস হয়। যখন থেকে মোজা পরা হয় সে সময় থেকে নয়। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা : ১/১৮০)
মুকিম যদি মাসেহ করার পর সফর আরম্ভ করে তবে মুসাফিরের সময়সীমা পরিপূর্ণ করবে, তদ্রূপ মুসাফির যদি মাসেহ করার পর মুকিম হয়ে যায়, তবে মুকিমের নির্ধারিত মেয়াদ পূরণ করবে। (আবু দাউদ, হাদিস : ১৩৫, মুসান্নাফে আব্দির রাজ্জাক : ১/২২১)
মাসেহ ভঙ্গকারী বিষয়
১। যেসব কারণে অজু ভঙ্গ হয় সেসব কারণে মাসেহও ভঙ্গ হয়। (তিরমিজি, হাদিস : ৬৯)
২। মোজা খোলার কারণে মাসেহ ভেঙে যায়। (সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকি : ১৪২২)
৩। মোজা যদি পায়ের টাখনুসহ বেশির ভাগ অংশ বের হয়ে যায়, তখনো মাসেহ ভেঙে যাবে। (সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকি : ১৪২২, ১৩৯৬)
৪। নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার মাধ্যমে মাসেহ ভেঙে যায়। (বাদায়ে : ১/৪৬)
৫। উভয় মোজার কোনো একটিতে বেশির ভাগ অংশে পানি পৌঁছে গেলে মাসেহ ভেঙে যায়। (সুনানুল কুবরা : ১৩৯৬, মুআত্তা মুহাম্মদ : ২/৫৮৭)
মাথার ওপর মাসেহ না করে পাগড়ি, টুপি এবং বোরকার ওপর মাসেহ করা জায়েজ নেই। হাত মোজার ওপর মাসেহ করাও জায়েজ নেই। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা : ১/২৩, আবু দাউদ, হাদিস : ১৪০)
Leave a Reply