নানান সময়ে দেশি-বিদেশি দানের টাকা নিজেদের ভোগবিলাস ও রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করেছেন হেফাজত নেতারা। মাদ্রাসার জন্য ও রোহিঙ্গাদের সহযোগিতায় বিদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ এসেছিল হেফাজত নেতাদের কাছে। সেই টাকার অধিকাংশই তারা আত্মসাৎ করছেন।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম রোববার দুপুরে মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘সাম্প্রতিককালে হেফাজতের যেসব নেতাকে আমরা গ্রেপ্তার করেছি, তাদের কাছ থেকে অর্থনৈতিক বিষয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। অতি সম্প্রতি আমরা হেফাজত নেতা মনির হোসেন কাসেমীকে গ্রেপ্তার করেছি। তাছাড়া মামুনুল হকের ৬টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য আমরা পেয়েছি। সেই অ্যাকাউন্টগুলোতে এক বছরে ৬ কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।
পুলিশের দাবি, রোহিঙ্গারা প্রায় সবাই মুসলমান হওয়ায় ধর্মীয় আবেগ কাজে লাগান হেফাজত নেতারা। বিপাকে পড়া মুসলমানদের জন্য এ সংগঠনটির কাছে সহায়তা আসতে থাকে নানা দেশ থেকে।
গোয়েন্দা কর্মকর্তা মাহবুব আলম বলেন, ‘এই অর্থ মাদ্রাসার উন্নয়ন, রোহিঙ্গাদের সহায়তা ও হেফাজতের সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য তার কাছে এসেছিল। কিন্তু এসব অর্থ খরচের কোনো স্বচ্ছতা পাওয়া যায়নি। সব টাকা তার কাছে একসঙ্গে রাখা ছিল। নানান সময়ে বিভিন্ন সহযোগিতার নামে হেফাজত নেতাদের কাছে আসা এসব অর্থের একটি অংশ তারা নিজেদের পার্সেন্টেজ হিসেবে রেখে দিতেন।’
প্রবাসীরা এসব টাকা হেফাজত নেতাদের কাছে দানের উদ্দেশ্যে পাঠাতেন বলে জানান ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম। তিনি বলেন, ‘এসব ফান্ড তারা মাদ্রাসার ছাত্রদের জন্য খুব একটা ব্যবহার করতেন না। এ অর্থ দিয়ে হেফাজতের কয়েকজন নেতা তাদের স্বার্থসিদ্ধি করেছেন। তারা রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী হওয়ার জন্য ওই অর্থ ব্যবহার করেছেন। তারা ব্যক্তিগতভাবে গাড়ি বাড়ি করে সম্পদশালী হয়েছেন। সাম্প্রতিক সময়ের অভিযানে গ্রেপ্তার হওয়া হেফাজত নেতাদের সকলেই এসব অর্থিক অনিয়মের সাথে জড়িত ছিলেন।’
মাহবুব আলম বলেন, ‘হায়াতুল উলিয়া ও বেফাকের শীর্ষস্থানীয় ও কওমী অঙ্গনের কয়েকজন নেতার ক্ষেত্রেও একই অস্বচ্ছ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড দেখা গেছে। আমরা মনে করি, এসব ক্ষেত্রে সরকারের আরও নজরদারি দরকার। আমাদের দেশে অনেক ভালো ও জ্ঞানী আলেম আছেন। যারা রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত উদ্দেশ্যে ইসলামকে ব্যবহার করছেন, তাদের ভয়ে ভালো আলেমরা দূরে থাকছেন।’
হেফাজত নেতাদের বিরুদ্ধে মামলায় যেসব অভিযোগ আনা করা হয়েছে, তদন্তে সেগুলোর প্রমাণ মিলছে বলে জানান ডিবির যুগ্ম কমিশনার। তিনি বলেন, তাদের আরও অনেক অনিয়মের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। এখন পর্যন্ত দুজন হেফাজত নেতা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
এক প্রশ্নের জবাবে মাহবুব আলম বলেন, ‘আমরা অভিযোগের সত্যতার জন্য যেসব প্রমাণ পাচ্ছি, সেগুলোই তাদের অপরাধ প্রমাণ করবে। তারা সেসব স্বীকার করুন আর নাই করুন, এতে মামলায় কোনো প্রভাব পড়বে না। আমরা নানা অডিও, ভিডিও, ডকুমেন্ট, ব্যাংক হিসাব প্রমাণ হিসেবে দেখাব।’
Leave a Reply