করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলছে যখন, তখন রাজধানীর ১০টি কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালের পাঁচটিতেই আইসিইউ’র কোনো শয্যা ফাঁকা নেই।
অন্যদিকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল কোভিড ডেডিকেটেড হলেও এ দুই প্রতিষ্ঠানে কোভিড রোগীদের জন্য কোনো আইসিইউ নেই।
অথচ এখন কোভিড রোগীদের পাশাপাশি শীতজনিত রোগের কারণেও আইসিইউ’র প্রয়োজন পড়ছে বেশি। আইসিইউ’র স্বল্পতা তাই বড় ধরনের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিশ্ব করোনা পরিস্থিতি মোটেও ভালো নয়। করোনাভাইরাসের নতুন একটি পরিবর্তিত রূপ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার খবরে সারা বিশ্বে আবারও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। ৭০ গুণ বেশি সংক্রমণ ক্ষমতাসম্পন্ন ভাইরাসটি প্রথমে চিহ্নিত হয়েছে যুক্তরাজ্যে।
এরপর আশপাশের অনেক দেশেই এ ভাইরাসটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, করোনার পরিবর্তিত রূপটি অল্প কিছুদিনের মধ্যেই সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়তে পারে। অর্থাৎ বাংলাদেশও এই ঝুঁকিমুক্ত নয়। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এবং এর পরিবর্তিত রূপজনিত আশঙ্কার মধ্যে দেশের স্বাস্থ্যসেবার উন্নতির প্রশ্নটি বড় হয়ে দেখা দিয়েছে।
একই সঙ্গে করোনার পরিবর্তিত রূপটি যাতে দেশে ছড়িয়ে পড়তে না পারে, সে ব্যাপারে বাড়তি সতর্কতার প্রয়োজন রয়েছে অবশ্যই। বর্তমান বাংলাদেশে করোনার বিপরীতে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টি শিথিল হয়ে পড়েছে।
একমাত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়া সবকিছুই খুলে দেয়ার কারণে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার বিষয়টি একেবারেই উঠে গেছে বলা চলে। গণপরিবহন থেকে শুরু করে শপিংমল- সর্বত্রই মানুষ চলাচল করছে সামাজিক দূরত্ব না মেনেই।
ওদিকে মাস্ক ব্যবহারের পরিস্থিতিও সন্তোষজনক নয়, যদিও অনেক এলাকায় মাস্ক ব্যবহার না করার কারণে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে জরিমানা করায় এর ব্যবহার কিছুটা বেড়েছে। আমরা মনে করি, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ, করোনার পরিবর্তিত রূপ এবং দেশের স্বাস্থ্যসেবার ঘাটতি বিবেচনায় নিয়ে প্রত্যেক নাগরিকের উচিত স্বাস্থ্যবিধি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে মেনে চলা।
বলার অপেক্ষা রাখে না, বর্তমান পরিস্থিতিতে দুটি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এক. জনসাধারণের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। দুই. স্বাস্থ্যসেবার উন্নতি সাধন। বলা যেতে পারে দুটি বিষয়েই আমরা কাঙ্ক্ষিত অবস্থায় নেই। একদিকে যেমন স্বাস্থ্যবিধি সঠিকভাবে মেনে চলা হচ্ছে না, অন্যদিকে স্বাস্থ্যসেবার মানেও রয়েছে ঘাটতি।
তৃতীয় আরেকটি বিষয়ে আলোকপাত করা যেতে পারে। তা হল, করোনা টেস্ট করার ব্যাপারে জনমনে আগ্রহ কমে গেছে। অথচ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনা টেস্টের ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছে। করোনার টেস্টের ব্যাপারে অনাগ্রহের কারণে দেশে রোগীর প্রকৃত সংখ্যা জানা যাচ্ছে না।
সবটা মিলিয়ে বলা যেতে পারে, করোনার ব্যাপারে আমাদের অবস্থা সন্তোষজনক নয়। এ অবস্থার উত্তরণ ঘটাতে হবে। ঢিলেমি বা অসতর্কতার কোনো সুযোগ নেই।
আগামী জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি দুই মাসই হচ্ছে শীতকাল। এই শীতে করোনা পরিস্থিতির যাতে অবনতি না ঘটে সেদিকে যেমন খেয়াল রাখতে হবে, তেমনি বাড়াতে হবে স্বাস্থ্যসেবার মান। সূত্র: যুগান্তর
Leave a Reply