বৈশাখ-জৈষ্ঠ্য মাসে ঝড় বৃষ্টির ডাকের সঙ্গে হঠাৎ বজ্রপাতের জীবনের ঝুঁকিও কিন্তু এসবের মাঝে প্রতিদিন রোদ বৃষ্টি মাথায় নিয়ে কাজ করেন ধান কাটার শ্রমিকরা। স্বল্প আয়ের এ শ্রমিকের সংসারে টানাপোড়া লেহে থাকলেও একই পেশায় কাটিয়ে তারা দিচ্ছেন দিনের পর দিন। অনেকে ধান কাটা ছাড়া তেমন অন্য কোন কাজ জানে না। আবার কেউ দীর্ঘদিনে এ কাজের দক্ষ হয়ে উঠার কারণে পেশা পরিবর্তন করছে না। এ জন্য শত অভাবেও এ পেশাই তাদের আনন্দ। তবে গেল কয়েক বছর ধরে মজুরী হিসাবে ধানের পরিবর্তে টাকা দেয়ার অসন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন শ্রমিকরা।
স¤প্রতি হবিগঞ্জ জেলার বিভিন্ন হাওরে দেখা যায় কাজের ফাকে খোলা আকাশের নিচে বসে খাবার খাচ্ছেন একদল শ্রমিক। দুপুরের তপ্ত রোদে ক্লান্ত শরীরেও কয়েকজনের ঠোঁটের কোনে ছিল এক চিলতে হাসি। দলটিতে থাকা মোঃ ফয়সল মিয়া জানান সে কিশোর বয়স থেকেধান কাটার শ্রমিকের কাজ করছেন। ফয়সল মিয়া সংবাদিকদের আরো বলেন, ছোট বেলায় বাবার হাতে ধান কাটা দেখতে হাওরে যেতাম। ধীরে ধীরে এ পেশার সঙ্গে নিজেও জড়িত হতে থাকি। এভাবে এ পেশায় জড়িয়ে যাবার কথা জানিয়েছেন দলে থাকা আরেকজন শ্রমিক। দুলাল মিয়া বলেন, পূর্ব পুরুষদের আমল থেকেই আমাদের সম্পর্ক। বৈশাখ ও অগ্রহায়ণ মাস আসলে ধান কাটা ছাড়া থাকতে কষ্ট হয়।
ধান কাটা শ্রমিকদের সাথে সরেজমিনে কথা বলে জানা যায়, আগে জমি থেকে দশ মণ ধান কেটে দিলে শ্রমিকদের দেওয়া হতো ১ মণ ধান। কিন্তু এখন অনেক জায়গায় তা করা হচ্ছে না। শ্রমিকদেরকে মজুরী হিসেবে দেওয়া হয় টাকা। এজন্য ধীরে ধীরে ধান কাটার প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছেন তারা। শ্রমিকরা আরো জানান, কৃষকরা প্রতি এক কেদার জমির ধান কাটার জন্য দিয়ে থাকেন ২ হাজার টাকা। আর দিনে তিনজন শ্রমিক এক কেদার জমির ধান কাটতে সক্ষম হয়। প্রতিদিনকার মজুরী ৫শ টাকা।
বছরে ২ বার বুরো ও আমন মৌসুমে প্রায় ৩ মাস তারা ধান কাটায় ব্যস্ত থাকেন। বাকী সময় কৃষি কাজ সংশ্লিষ্ট অন্য কাজে। এ আয় দিয়েই কষ্টে সৃষ্টে তাদের সংসার চলে। মাধবপুর উপজেলার হরিশ্যামা গ্রামের ধান কাটার সর্দার হরিধন দাস বলেন, আগে একজন শ্রমিক ধান কাটার মধ্যে যে ধান পেতেন তা দিয়ে একটি পরিবারের সারা বছরের খোরাকি হতো। কিন্তু এখন ধানের বদলে টাকা দেওয়ায় তাদের কষ্ট বেড়েছে। বছরজুড়ে চাল কিনে খেতে হয়। তিনি আরো বলেন, শ্রমিকরা রোদ বৃষ্টি মাথায় নিয়ে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ধান কাটেন। এরপর সন্ধ্যা পর্যন্ত কাঁদে ও মাথায় করে ধান পৌঁছে দেয় কৃষকদের বাড়ি। বর্জ্রপাতেও অনেক শ্রমিক মারা যান। এরপরও সোনার ধান কেটে দেওয়ার মজুরী হিসাবে ধান না দিয়ে টাকা দেয়া হচ্ছে। এজন্য পছন্দের এ পেশার প্রতি অনেকেই আগ্রহ হারাচ্ছেন।
কৃষি কর্মকর্তা জানান, এ বছর আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এ জেলায় বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে এবং লক্ষ্যমাত্রাও ঠিক রয়েছে। এ বছর বৃষ্টি কম হওয়াতে কৃষকরা কোন কষ্ট ছাড়াই ধান উত্তোলন করেছে।
Leave a Reply