হবিগঞ্জ প্রতিনিধি:বাজারের চেয়ে দাম কম ও সরবরাহে ভোগান্তির কারণে সরকারকে ধান দিতে অনাগ্রহ দেখাচ্ছেন হবিগঞ্জের মাধবপুরের কৃষকরা। এই পরিস্থিতিতে উপজেলায় এবার ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে কি না তা নিয়ে শঙ্কিত উপজেলা খাদ্য বিভাগ। কর্মকর্তারা বলছেন, নানা পদক্ষেপ নিয়েও কৃষকদের সাড়া মিলছে না। উপজেলা খাদ্য বিভাগ জানায়, বোরো মৌসুমে এবার ৩ হাজার ৫০ টন ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল মাধবপুর উপজেলায়। প্রতিমণ ধানের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ৮০ টাকা। দেশজুড়ে গত ২৮ এপ্রিল ধান সংগ্রহ কার্যক্রমের উদ্বোধন হলেও মাধবপুরে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয় ১৮ মে। রোববার পর্যন্ত সংগ্রহ হয়েছে ৫০ টন ধান। কর্মকর্তারা বলছেন, অন্যান্য বছর শুরু থেকেই ধান বিক্রি করতে বিপুল কৃষক সাড়া দেন, যা এ বছর দেখা যায়নি। উপজেলার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, পাইকারিতে এখন মোটা ধান মণপ্রতি ৮১০ টাকায় ও চিকন ধান ৯৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর হাওর এলাকায় মোটা ধানের দাম মণপ্রতি ৮০০ টাকা ও চিকন ধানের ৯২০ টাকা। কৃষকরা বলছে, বাজারের চেয়ে দাম কম দিচ্ছে সরকার। তার ওপর ধান ভালোভাবে শুকিয়ে, ধানের চিটা ও আগাছা পরিষ্কার করে গুদামে পৌঁছে দিতে হয়। যে কারণে অতিরিক্ত শ্রমের পাশাপাশি পরিবহণ খরচও লাগে। সব মিলিয়ে সরকারের কাছে ধান বিক্রি করতে হাজার টাকার উপরে খরচ লেগে যায়। হরিশ্যামা গ্রামের বারিন্দ্র পাল জানান, সরকার যখন থেকে ধান কিনছে তখন গ্রামের সব কৃষকের ধান গোলায়। তাছাড়া এ বছর বাজারেও ধানের দাম অনেক বেশি। যে কারণে সরকারের কাছে ধান বিক্রি করতে চাচ্ছে না অনেকে। মুরাদপুর গ্রামের এরশাদ মিয়া জানান, সরকার একেবারে ঝরঝরা ধান চায়। এছাড়া ধান গাড়ি দিয়ে গোদামে দিয়ে আসতে হয়। এতে গুড়ের লাভ পিঁপড়ায় খাইলায়। তাই এ বছর সরকারের কাছে ধান বিক্রি করছি না।’ কৃষকদের ধান বিক্রিতে আগ্রহী করতে নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। শুরুতে প্রতি বছরের মতো সরকারি অ্যাপের মাধ্যমে কৃষকদের কাছ থেকে আবেদন চাওয়া হয়। তাতে তেমন সাড়া না পেয়ে ‘আগে আসলে, আগে পাবেন’ নীতিতে ধান কেনার ঘোষণা দেয়া হয়। তাতেও মেলেনি কাঙ্খিত সাড়া। এরপর স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা নিজ নিজ ফেসবুক আইডি থেকেও ধান দিতে কৃষকদের আহŸান জানিয়ে পোস্ট দেন। উপজেলা খাদ্য উপ-পরামর্শক কর্মকর্তা মোঃ আব্দুস সাত্তার বলেন, সরকারের কাছে ধান বেচতে কৃষকদের নানা ঝক্কি-ঝামেলা পোহাতে হয়। সব ধরনের ঝামেলা শেষ করে সরকারের কাছে ধান বিক্রি করলে কৃষকদের লোকসান হয়। যে কারণে আমরা ধান কিনতে পারছি না।’ তিনি বলেন, ‘অন্যান্য বছর সংগ্রহের শুরুতেই কৃষকদের ব্যাপক আগ্রহ ও সাড়া পাওয়া যায়। এক-দেড় মাসের মধ্যেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়ে যায়। গত বছর অ্যাপের মাধ্যমে শুরুর দিকেই লক্ষ্যমাত্রা চেয়ে দ্বিগুণ পরিমাণ ধান বিক্রির আবেদন আসে। সে হিসেবে এ বছর আবেদন খুবই অল্প। এরপরও আমরা ধান সংগ্রহের লক্ষমাত্রা অর্জনের চেষ্টা করছি। ইতোমধ্যে ৬০ টন ধান কেনা হয়েছে। সামনে হয়তো আরও কেনা যাবে।’ ৩১ আগস্ট পর্যন্ত চলবে ধান সংগ্রহ। তিনি আশা করছেন, কৃষকরা দেরিতে হলেও সাড়া দেবেন, লক্ষ্যমাত্রার ধানও মজুত হবে। এদিকে, সচেতন মহল বলছে- সরকারিভাবে ধান সংগ্রহণ অভিযান ব্যর্থ হলে সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসুচিতে সংকট দেখা দিতে পারে।
Leave a Reply