হবিগঞ্জ প্রতিনিধি:হবিগঞ্জ থেকে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে তিল চাষ। কৃষকের আগ্রহ নেই এই চাষাবাদে। এখন বিল ও চকের দিকে তাকালে সচারাচর আগের মত কোনও তিল ক্ষেত চোখে পরে না। হয়ত এক সময় কালের বিবর্তনে এই চাষাবাদে কাউকেই খোঁজে পাওয়া যাবে না। তিল সপুষ্পক জাতের উদ্ভিদ তিল গাছের উচ্চতা আড়াই থেকে চার ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তিল চাষ করা হয়।
এক সময় ঐতিহ্যবাহী হবিগঞ্জ জেলার সব ৯টি উপজেলায় তিলের ব্যাপক চাষ করা হত। কালের বিবর্তণে এই চাষাবাদে মানুষের আগ্রহ হাড়াচ্ছে। এর পরেও এখনও উপজেলার বিভিন্ন স্থানে চকের কিছু কিছু জমিতে তিলের আবাদকরতে দেখা যায়। তবে এর সংখ্যা আগের তুলনায় একেবারেই সামান্য।
এক সময় তিল চাষে মানুষের আগ্রহ ছিল প্রচুর। এখানকার দুই ফসলী জমিতে আলুর পরেই তিলের দখলে থাকত। কৃষকরা আলু উঠানোর পরেই বেশীর ভাগ জমিতে অন্য ফসলের চিন্তা না করে তিলকেই প্রাধান্য দিত। দেখা যেতো জমি থেকে পাকা তিল কেটে খুব যতœ করে বাড়ির আঙ্গিনায় তিলের বীজসহ তাজা গাছগুলো আঁটি বেঁধে স্তুপ স্তুপ করে ঢেকে রাখতেন। কয়েক দিন পরে আঁটি বাঁধা তিলগাছ গুলো অনেকটাই পঁচা অবস্থায় কড়া রোদে শুকিয়ে বীজ থেকে তিলি দানা বের করা হত। ওই তিল স্থানীয় হাটে বাজারে নিয়ে গিয়ে ঘানিতে ভাঙিয়ে ভোজ্যতেল সংগ্রহ করা হত।
বছর জুড়ে কৃষক পরিবারের রান্না বান্নার কাজে ওই তেল (তিল তেল) ব্যবহার করা হত। অন্যদিকে শুকনো তিলগাছ গুলো পরিবারের জ্বালানীর চাহিদা পূরণ করত। আধুনিক যুগে এখন আর সেইভাবে তিলের চাষ করা হয় না এখানে। স্থানীয় হাট বাজার গুলোতেও লাইনে দাড়িয়ে মানুষের ঘানি ভাঙানোর দৃশ্যও এখন চোখে পরে না। নানা গুনাগুন সম্পর্ণযুক্ত তিল চাষে আগ্রহ নেই কেন? এমন প্রশ্নের উত্তর পাওয়া গেল কয়েকজন কৃষকের কাছ থেকে।
কৃষক শাহজাহান মিয়া বলেন, আগে আমি প্রতি বছরই তিলের আবাদ করতাম। এই তিল থেকে নিজের সংসারের প্রয়োজনীয় ভোজ্য তেলের চাহিদাও পূরণ হত। তবে এখন কয়েক বছর যাবত এই চাষ বাদ দিয়েছি। কারণ হিসেবে জানান, তিলে খাটা খাটনি বেশী, জমিতে নিড়িসহ বিভিন্ন কৃষি শ্রমিক খাটিয়ে যে পরিমাণ তিল পাওয়া যায় হিসেব অনুযায়ী তাতে লোকসান। কারণ খরচের টাকা দিয়ে সেই পরিমাণ ভোজ্য তেল ক্রয় করাটাই উত্তম। তিনি আরো বলেন, এখানকার দুই ফসলী জমিতে আগে আলু উঠানোর পরেই তিল, কাউন বেশী চাষ করা হত। এখন একই জমিতে ইরি ধান, আমন ধান, পাটসহ আখের চাষ করা হচ্ছে। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী তিল চাষে আয় কম এছাড়া তিল জমি থেকে শুরু করে বাড়িতে এখন শুকানো পর্যন্ত প্রচুর শ্রম দিতে হয়। তাই তিল চাষে কারও আগ্রহ নেই।
এাধবপুর উপজেলার আউলিয়াবাদ গ্রামের আবু মিয়া জানান, আমি আলু উঠানোর পরে প্রায় ৬০ শতাংশ জমিতে তিলের আবাদ করেছি। এই তিলে আমার লোকসান হবে জেনেও নিজ জমিতে বীজ থাকা শর্তে তিলের আবাদ করেছি। কারণ না হলে জমিটি বেকার পরে থাকে। এসময় লক্ষ্য করা গেছে এ এলাকার জমিগুলো তিল গাছে ভরে গেছে। জমিতে সবুজের বুকে যেন সাদার রাজত্য। পুরো জমি তিল ফুলে ফুলে ভরে গেছে। মৌমাছিরা ফুল থেকে মধু আহরণ করছে। এ যেন এক অপরূপ দৃশ্য।
খোঁজ খবর নিয়ে জানা যায়, প্রতি শতাংশ জমিতে তিলের সর্বোচ্চ ফলন হতে পারে ৫-৬ কেজি। বর্তমান প্রতি মন কালো তিলের বাজার দর ৪৫০০-৫০০০ টাকা। সাধারণত তামা রংয়ের প্রতি মন তিলের (লাল) দাম বর্তমান বাজার দর প্রায় ২৫০০ টাকা। এক মন ভাল মানের তিল থেকে প্রায় ১০-১৫ কেজি তেল উৎপাদন হয়ে থাকে। লক্ষ্য করা গেছে, উপজেলার শাহজাহানপুর, শাহপুর, মনতলা, ধর্মঘর এলাকায় আলু তোলার পরে কিছু কিছু জমিতে তিলের আবাদ করেছেন কৃষক।
কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আল মামুন হাসান বলেন, উপজেলায় তিলের আবাদ করা হয়েছে ৫ হেক্টর জমিতে। এই অঞ্চলের আবাদি জমিগুলো নিচু হওয়ার কারণে তিল চাষে কৃষকরা আগ্রহ হাড়াচ্ছেন। তবে তিল চাষে আগ্রহ বাড়াতে স্থানীয় কৃষকদের সাথে পরমার্শ করা হবে। বর্তমানে তিলের বাজার খুবই ভাল। আশা করছি ভাল জাতের তিলের চাষাবাদ করলে এখানকার কৃষকরা আর্থিকভাবে অনেক লাভবান হবেন। অন্যদিকে তিল থেকে খাটি ভোজ্য তেলও উৎপাদন করতে পারবেন। এই চাষাবাদে কৃষকদের আগ্রহী করতে তাদের বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছি।
Leave a Reply