ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে(ইবি)বাসে সিট ধরাকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরসহ উপস্থিত শিক্ষক ও নিরাপত্তা কর্মকর্তা আহত হন। শিক্ষকদের উপর উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে হামলা করা হয়েছে উল্লেখ করে শিক্ষার্থীরা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে বিচারের দাবি করেছেন।
এই দাবিতে রবিবার (২ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে শিক্ষার্থীরা। পরে মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে একইস্থানে সমবেত হয় তারা। পরে সেখানে তারা প্রতিবাদ সমাবেশ করেন।
এসময় শিক্ষার্থীদের ‘শিক্ষকদের উপর হামলা কেন, প্রশাসন বিচার চাই,’ ‘শিক্ষকদের অপমান, সইবে না রে ইবিয়ান,’ ‘প্রক্টর স্যারের উপর হামলা কেন, প্রশাসন জবাব চাই,’ ‘সন্ত্রাসীদের কালো হাত ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও,’ ‘শিক্ষা সন্ত্রাস একসাথে চলবে না’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায়।
সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের দু’জন ছাত্রবান্ধব শিক্ষকের উপর যে বর্বরোচিত সন্ত্রাসী হামলা করা হয়েছে, তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমরা প্রশাসনকে বলতে চাই, বাসে সিট ধরা নিয়ে সঠিক পদক্ষেপ নিতে হবে। ঘটনার মীমাংসা হওয়ার পরেও কাদের ইন্ধনে শিক্ষকদের উপর হামলা করা হলো সেটার সুষ্ঠু তদন্ত করতে হবে। তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিচার দাবি করছি।
প্রসঙ্গত, শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় কুষ্টিয়া শহর থেকে ক্যাম্পাসে ছেড়ে আসা একটি ডাবল ডেকার বাসে আল-ফিকহ এন্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগের তিন শিক্ষার্থী তাদের বন্ধুদের জন্য ‘জ্যাকেট’ দিয়ে দুইটি সিট ধরে রাখেন। পরে আইন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের সুমন অভ্র বাসে উঠে তাদের ধরা সিটে বসেন বলে জানায় প্রত্যক্ষদর্শীরা। পরে বিষয়টি নিয়ে সুমনের সঙ্গে আল-ফিকহ এন্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থীদের বাকবিতণ্ডা হয়। তখন আল-ফিকহের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের সিহাব ও রাকিব কথা বলতে গেলে সুমন রাকিবের শার্টের কলার ধরে। এতে তাদের মাঝে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে এবং সুমনের মুখে আঘাত লাগে।
সুমনের দাবি, সিটে বসা নিয়ে হাসান ভাইকে মারতে উদ্যত হলে তখন তাদের নিবৃত্ত করতে যায় সুমন। তখন রাকিব তার শার্টের কলার ধরে ঘুষি মারে ও শার্ট ছিড়ে দেয়। তবে রাকিব বলছে, সুমন আগে আমার শার্টের কলার ধরছিলো। পরে তাকে ধাক্কা দিয়েছি। শার্ট ছেড়ার মতো কোনকিছু হয়নি। সে হয়তো আমাকে ফাসানোর জন্য নিজেই নিজের শার্ট ছিড়েছে।
এদিকে বিষয়টি জানতে পেরে রাত সাড়ে ৮টার দিকে বাস ক্যাম্পাসে পৌঁছালে সেখানে প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরাও উপস্থিত হন। সুমন বিষয়টি আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের জানালে তারা এসে প্রধান ফটকে গাড়ি আটকায়। পরে আল-ফিকহ বিভাগের শিক্ষার্থীরাও সেখানে উপস্থিত হয়। এসময় দু পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি সমাধানে রাত ১০ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরিয়াল বডি ও উভয়পক্ষকের শিক্ষকদের নিয়ে আলোচনায় বসে সমঝোতা করে দেওয়া হয়। এরপর চলে যাওয়ার সময় আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা আল-ফিকহ বিভাগের শিক্ষার্থীদের ‘সন্ত্রাসী’ বললে অনুষদ ভবনের সামনে উভয় পক্ষের শিক্ষার্থীরা বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়ে বলে জানায় প্রত্যক্ষদর্শীরা। পরে দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে শিক্ষার্থীরা। এতে উভয়পক্ষের কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়। এসময় শিক্ষার্থীদের থামাতে গিয়েও মারধরের শিকার হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহিনুজ্জামান, আল হাদিস এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান ও নিরাপত্তা কর্মকর্তারা।
Leave a Reply