1. iamparves@gmail.com : admin :
  2. janathatv19@gmail.com : Shohag Khan : Shohag Khan
  3. hdtariful@gmail.com : Tariful Rumon : Tariful Rumon
শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫, ০৮:৫২ অপরাহ্ন

এক যুগেরও বেশি সময় ধরে শিকলে বাঁধা সোহাগীর জীবন!

জিন্নাতুল ইসলাম জিন্না
  • প্রকাশের সময় : বুধবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২২

লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ
জন্ম দাতা বাবা-মা নিরুপায় হয়ে সকালে ঘুম থেকে উঠেই গবাদি পশুর মতই মেয়েকে ঘর থেকে বাহিরে গাছের সাথে শিকলে বেঁধে রাখেন। আবার সন্ধ্যা হলে একই ভাবে বিছানার খুঁটির সাথে বেঁধে রাখতে হয় আদরের সন্তানকে।

লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার মানসিক ভারসম্যহীন সোহাগী বেগম। বয়স তার মাত্র ১৮ বছর। এই ১৮ বছরের এক যুগেরও বেশি সময় ধরে পায়ে শিকল বাঁধা জীবন কাটছে তার।

সোহাগী বেগম আদিতমারী উপজেলার পলাশী ইউনিয়নের নামুড়ি কদমতলা মোড় এলাকার দুলাল মিয়ার মেয়ে।

স্থানীয়রা জানান, উপজেলার নামুড়ি কদমতলা গ্রামের দুলাল মিয়ার ৪ মেয়ের মধ্যে দ্বিতীয় সোহাগী বেগম। জন্মের পরে ভালই ছিল সোহাগী।আদর করে বাবা মা নাম রাখেন সোহাগী। ৪ বছর বয়সে হঠাৎ বাড়ির পাশে পুকুরে ডুবে আহত হয় সে। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে পেট থেকে পানি বের করে। পেট থেকে পানি বের করতে সোহাগীর পা ধরে ঘোরানো হয়। এতে মাথায় আঘাত প্রাপ্ত হয় সোহাগী।

পানিতে ডুবে বেঁচে গেলেও সেই চিকিৎসা তার মানসিক বিকাশে বাঁধা গ্রস্থ হয়। ধিরে ধিরে বাড়তে থাকে মানসিক বিকারগ্রস্থতা।অভাবের সংসারে আদরের সন্তানকে সুস্থ্য করতে প্রানপন চেষ্টাও করেন তার পরিবার। কিন্তু কিছুতেই সুস্থতা সম্ভব হয়নি। বয়সের সাথেই বাড়তে থাকে মানসিক বিকারগ্রস্থতা। বাহিরে ছুটে গিয়ে অন্যের ক্ষতি করে সোহাগী। প্রতিবেশীরা এক পর্যেয় বিরক্ত হলে তাকে ঘরে আটকিয়ে রাখে তার পরিবার।

হারানোর ভয় আর অন্যের ক্ষতিসাধন করায় নিরুপায় সোহাগীর পরিবার গত ১০ বছর ধরে পায়ে শিকলে বেঁধে রাখে। ভোর হলে বাড়ির পাশে একটি গাছের সাথে সোহাগীর পায়ের শিকল তালা বদ্ধ করে রাখে পরিবার। সন্ধ্যা হলে ঘরের বিছানার সাথে শিকল বাঁধা থাকে সোহাগী। শিকলে বাঁধা অবস্থাতেই কাটছে তার খাওয়া প্রসাব পায়খানা।

কথাও বলতে পারে না সোহাগী। পেটে ক্ষিদে পেলে চিৎকার দেয়। খাওয়ার রুচিও প্রচুর। গরিব বাবা দুলাল মিয়া সামান্য পুঁজির ঝিল মাংস বিক্রেতা। সেখানে যা আয় হয় তাই দিয়ে চলে তার ৬ সদস্যের সংসার। অভাবের কারনে চাহিদামত খাবারও পাচ্ছে না মানসিক ভারসাম্যহীন সোহাগী বেগম।

এক সময় নামুড়ি গুচ্ছগ্রামে অন্যের নামে বরাদ্ধের ঘরে থাকতেন দুলাল মিয়া। সেই জরাজীর্ন ঘরে থাকার মত পরিবেশ নেই। তাই স্ত্রী সাবিনা বেগমের পৈত্রিক সুত্রে পাওয়া মাত্র দুই শতাংশ জমিতেই ঘর করে কোন রকম জীবন যাপন করছেন তারা।

আদরের মেয়ে সোহাগীর সুস্থ্য জীবন দেখার প্রচন্ড স্বাধ থাকলেও সাধ্যের বাহিরে। প্রতিনিয়ত দীর্ঘশ্বাসে কাটে দুলাল সাবিনা দম্পতির সংসার। অভাবের পরেও যখনই ভাল চিকিৎসকের সন্ধান পেয়েছেন সেখানেই ছুটেছেন মেয়ের চিকিৎসার জন্য। প্রতি বারই অর্থের অভাবে সম্পুর্ন চিকিৎসা করাতে পারেনি তার পরিবার। তাই দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে শিকল বাঁধা সোহাগীর জীবন।

সোহাগীর মা সাবিনা বেগম বলেন, পৃথিবীর সব থেকে কঠিন কাজ পেটের সন্তানকে শিকলে বেঁধে রাখা। এ কাজটি প্রতিদিন করতে হচ্ছে। সোহাগীর প্রসাব পায়না যুক্ত কাপড় পরিস্কার করতেও কষ্ট হয়না। বুক ছিঁড়ে যায় “যখন মেয়েকে গরু ছাগলের মত গাছের সাথে শিকলে বেঁধে রাখি”। টাকার অভাবে চিকিৎসা হচ্ছে না। উপযুক্ত চিকিৎসা করালে সোহাগী সুস্থ হত। এজন্য সমাজের বিত্তবানদের কাছে সাহায্য কামনা করেন তিনি।

সোহাগীর বাবা দুলাল মিয়া বলেন, প্রথম দিকে চিকিৎসা করাতে অনেক টাকা নষ্ট করেছি। কোন কাজ হয়নি। মেয়ের চিকিৎসা করাতেই নিঃস্ব হয়েছি। সুযোগ পেলে ছুটে গিয়ে সোহাগী অন্যের ক্ষতি করে। তাই বাধ্য হয়ে শিকলে বেঁধে রেখেছি। এভাবেই কাটছে তার ১০ বছর।

সোহাগীর প্রতিবেশী পলাশী ইউনিয়ন আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবকলীগের সম্পাদক ইকবাল হোসেন বিপ্লব বলেন, মেয়েটার চিকিৎসা করাতেই নিঃস্ব হয়েছে পরিবারটি। এখন অর্থের অভাবে চিকিৎসা করাতে না পেয়ে মেয়েকে শিকলে বেঁধে রেখেছে। সাধ্যমত গ্রামবাসী ওই পরিবারকে সহায়তা করি। উপযুক্ত চিকিৎসা করালে হয়তো সুস্থ্য হবে সোহাগী। তার সুচিকিৎসার জন্য সরকারের ঊর্দ্ধতন মহলের সহায়তা কামনা করেন তিনি।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

নামাজের সময়সূচী

  • ফজর
  • যোহর
  • আছর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যোদয়
  • ৪:২২
  • ১২:২৮
  • ৫:০৩
  • ৭:১০
  • ৮:৩৩
  • ৫:৪৩