ভারতে চিকিৎসা করাতে গিয়ে নিখোঁজ হওয়ার ৮ দিন পর ঝিনাইদহ-৪ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। বুধবার (২২ মে) কলকাতার নিউটাউন থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয় বলে স্থানীয় পুলিশ সময় সংবাদকে নিশ্চিত করেছে। পুলিশে জানিয়েছে, এ ঘটনায় দুজনকে আটক করেছে তারা। আনার নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর খুঁজছিলেন গোয়েন্দারা। রহস্যজনকভাবে তার মরদেহ উদ্ধারের পরও সেসব প্রশ্নের উত্তর মেলেনি।
ভারতে আট দিন নিখোঁজ থাকার পর কলকাতায় এমপি আনারের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ফাইল ছবি
ভারতে আট দিন নিখোঁজ থাকার পর কলকাতায় এমপি আনারের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ফাইল ছবি
সুব্রত আচার্য
গত ১২ মে দুপুর ২টা ৪০ মিনিটে দর্শনা-গেদে সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেন এমপি আনার। নদীয়া সীমান্ত অতিক্রম করার পর সন্ধ্যায় কলকাতার অদূরে ব্যারাকপুর কমিশনারেট এলাকার বরাহনগর থানার ১৭/৩ মন্ডলপাড়া লেনের স্বর্ণ ব্যবসায়ী বন্ধু গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে পৌঁছান। পরদিন দুপুর ১টা ৪০ নাগাদ ওই বাড়ি থেকে কিছুটা হেঁটে বিধানপার্ক কলকাতা পাবলিক স্কুলের সামনে গিয়ে একটি গাড়িতে উঠেন। ওই সময় তিনি হাস্যোজ্জ্বল ছিলেন। সেই দৃশ্য দেখেন গোপাল বিশ্বাসের পরিচিত শুভজিৎ মান্না।
তবে সন্ধ্যায় গোপাল বিশ্বাসের মোবাইলের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে মেসেজ আসে, তিনি (এমপি আনার) রাতে ফিরছেন না, দিল্লি যাচ্ছেন। এ সময় যাতে তাকে আর ফোন না করা হয়। তিনি দিল্লি পৌঁছে নিজেই ফোন করবেন- এমনটাও মেসেজে লেখা ছিল।
এরপর আনারকে আর ফোনে পাওয়া যায়নি। তিন দিন পর ১৫ মে সকাল সোয়া ১১টায় তিনি শেষ মেসেজ করে জানান, দিল্লি পৌঁছে গেছেন। তার সঙ্গে ভিআইপিরা আছেন।
বরাহনগর থানায় ১৮ মে লিখিত মিসিং ডায়েরিতে এসব তথ্য উল্লেখ করেন ভারতে তার বন্ধু গোপাল বিশ্বাস।
বুধবার (২২ মে) পুলিশের বরাতে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম কলকাতা২৪ জানায়, আনারের শেষ মোবাইল লোকেশন মিলেছিল বিহারে। গত ১৪ মে থেকে তার ফোন বন্ধ হয়ে যায়। গত আট দিন ধরে নিখোঁজ থাকলেও তার ফোন থেকে পরিবারের সদস্যদের কাছে মেসেজ পাঠানো হয় যে তিনি নয়াদিল্লি চলে গেছেন।
সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৩ মে নিউটাউনের একটি বাড়িতে যান এমপি আনার। সেই বাড়িতেই খুন করা হয় তাকে। পুলিশের বরাতে কলকাতা২৪ আরও জানিয়েছে, নিউটাউনে যে বাড়িতে তিনি গিয়েছিলেন সেটা একজন এক্সাইজ অফিসারের। সেটি ছিল ভাড়া বাড়ি। খুনের দিন এই বাড়িতে নাকি নারীসহ একাধিক লোকজন ছিলেন। কিন্তু আনারের রহস্যজনক মৃত্যুর পর সবাই ভারত থেকে পালিয়ে গেছেন।
এমপি আনার নিখোঁজ হওয়র পর তাকে খুঁজতে কাজ করছিল ভারতের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ তদন্তকারী সংস্থা- কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো (আইবি), কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা এবং ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেট বা রাজ্য পুলিশ। একই সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দিষ্ট একটি উইংকে গোটা ঘটনার সমন্বয় করার দায়িত্ব দেয়া হয়। এছাড়াও দিল্লিতে বাংলাদেশ দূতাবাস এবং কলকাতার বাংলাদেশ উপদূতাবাসের কয়েকজন কর্মকর্তাকেও এমপি আনারের খোঁজ-খবর নেয়ার দায়িত্ব দেয়া হয়। তবে ভারতে চলমান জাতীয় নির্বাচনের কারণে তদন্তকাজ কিছুটা বিঘ্নিত হয়।
Leave a Reply