সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মনিকে ২০ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে ময়মনসিংহ নগরীর ঐতিহ্যবাহী আনন্দ মোহন কলেজের অধ্যক্ষ পদ ভাগিয়েছিলেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মো. আমান উল্লাহ। আর এই ঘুষ কাণ্ডের মধ্যস্থতা করেছিলেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী এনামুল হক শামীম।
এমন অভিযোগে এই অধ্যক্ষের পদত্যাগ দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
সরেজমিনে আনন্দ মোহন কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে এসব তথ্য।
তারা জানান, অধ্যক্ষ আমান উল্লাহ বঙ্গবন্ধু পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতা ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কামাল উদ্দিন হল শাখা ছাত্রলীগের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক ছিলেন। এ কারণেই দলীয় পরিচয়ে ২০২১ সালের ৮ আগস্ট বিতর্কিত শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মনির সময়ে সাবেক প্রতিমন্ত্রী এনামুল হক শামীমের মধ্যস্থতায় ২০ লাখ টাকার বিনিময়ে সিনিয়রদের ডিঙ্গিয়ে দলীয় প্রভাবে আনন্দ মোহন কলেজে অধ্যক্ষ পদ লাভ করেন।
২০২৪ সালের এপ্রিলে বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের নেতা হিসেবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।
এমনকি কলেজের অভ্যন্তরীণ প্রশাসনিক কমিটিগুলোতেও তিনি সিনিয়রদের বাদ দিয়ে তার অনুগত প্রভাষকদের দিয়ে করেছেন নানা কমিটি। সেই সঙ্গে কলেজ ফান্ডের টাকা ছাত্রলীগের সাথে তার ভাগাভাগির অভিযোগ অহরহ।
অপর একটি সূত্র জানান, অধ্যক্ষ আমান উল্লাহ পদে থেকেই স্থানীয় আওয়ামী রাজনীতিতে ছিলেন সক্রিয়। তিনি ময়মনসিংহ-৬ (ফুলবাড়ীয়া) আসনে নৌকার চড়ে সংসদ সদস্য হওয়ার জন্য এলাকায় নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করতেন। কিন্তু ক্ষমতার পরিবর্তনে এখন তিনি ভোল পাল্টিয়ে বিএনপি নেতাদের আনুকূল্য পেতে করছেন লবিং তদ্বরি।
এছাড়াও এই কলেজ অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী জানান, করোনাকালীন সময়ে ফরম পূরণে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া বিপুল অঙ্কের টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি হয়। কিন্তু অধ্যক্ষ আমান উল্লাহ শিক্ষার্থীদের টাকা ফেরত না দিয়ে ছাত্রলীগের সাথে ওই টাকা ভাগাভাগি করে আত্মসাৎ করেছেন। একই সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নির্মাণসহ নানা উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে তার বিরুদ্ধে রয়েছে আর্থিক কেলেংঙ্কারির অভিযোগ।
ক্ষমতার পালাবদল হলেও দলবাজ এই শিক্ষক নিজের পদ ধরে রাখতে নানা কারসাজি করছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
জানা যায়, ২০১৭ সালে প্রফেসর পদে পদোন্নতি পেয়েও অনেক যোগ্য শিক্ষক ছিটকে পড়েন অধ্যক্ষের দৌড়ে। সম্প্রতি এই অধ্যক্ষ দলীয় প্রভাব বিস্তার করে নির্বাচন ছাড়াই শিক্ষক পরিষদের কমিটি গঠন করেছেন বিধি লঙ্গন করে। এতে সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন তার অনুসারী বিতর্কিত শিক্ষক সাদি হাসান খান।
অভিযোগ উঠেছে, সম্প্রতি ছাত্র আন্দোলন চলাকালে নগরীর জিলা স্কুল মসজিদে জুম্মার নামাজের বয়ানে ইমাম সাহেব নিহত শিক্ষার্থীদের প্রতি শোক প্রকাশ করে বক্তব্য রাখায় শিক্ষক সাদি হাসান খান প্রকাশ্যে প্রতিবাদ জানান। এ নিয়েও ক্ষোভ অসন্তোষ রয়েছে শিক্ষার্থীদের মাঝে।
নগরীর কলেজ রোড এলাকার বাসিন্দা আলমগীর হোসেন বলেন, ‘অধ্যক্ষ আমান উল্লাহ পদে থেকেই স্থানীয় আওয়ামী রাজনীতিতে ছিলেন সক্রিয়। তিনি ময়মনসিংহ-৬ (ফুলবাড়ীয়া) আসনে নৌকায় চড়ে সংসদ সদস্য হওয়ার জন্য এলাকায় নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করতেন। কিন্তু ক্ষমতার পরিবর্তনে এখন তিনি ভোল্ট পাল্টিয়ে বিএনপি নেতাদের আনুকূল্য পেতে করছেন লবিং তদবির।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ময়মনসিংহের অন্যতম সমন্বয়ক আশিকুর রহমান বলেন, ‘জেলার অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দুর্নীতিমুক্ত করার লক্ষ্যে স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছে। এতে আমাদের সমর্থন রয়েছে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা যাকে দুর্নীতিবাজ মনে করবে, সেই শিক্ষক প্রতিষ্ঠানে থাকার কোন সুযোগ নেই।’
তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ মো. আমান উল্লাহ এসব অভিযোগ সঠিক নয় দাবি করে বলেন, যে কোন সরকারের সময়ে নিয়োগ পেতে হলে মন্ত্রী-এমপিদের সহযোগিতা লাগবে, আমারও সেটা ছিল। তবে আমি কোন টাকা দেইনি, সাবেক প্রতিমন্ত্রী শামীম আমার জন্য সুপারিশ করেছে। এরপর গোয়েন্দা রিপোর্টে সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্তরা আমাকে নিয়োগ দিয়েছেন। ছাত্র জীবনে আমি ছাত্র সংগঠন করেছি, এটা সবাই করে। তবে আমি কোন শিক্ষার্থীদের হলে রেখে লালন করছি না, মূলত কলেজ ক্যাম্পাসে গ্রাফিটির কাজ করা শিক্ষার্থীদের আমি দুইদিন বিরিয়ানি খাইয়েছি।
Leave a Reply