আমাদের শরীর বিভিন্ন প্রাকৃতিক প্রতিক্রিয়া করে পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়ানোর জন্য। নাকে কোনো দুর্গন্ধ লাগলে থুতু ফেলার প্রবণতা সেই স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়াগুলোরই একটি। এর পেছনে রয়েছে কিছু বিজ্ঞানভিত্তিক কারণ।
আমাদের নাকের ঘ্রাণশক্তি খুব সংবেদনশীল।
দুর্গন্ধযুক্ত কোনো বস্তুর গ্যাস বা বাষ্প যখন নাকে প্রবেশ করে, তখন সেটি আমাদের ঘ্রাণগ্রাহক স্নায়ুকে উদ্দীপ্ত করে। এই সিগন্যাল মস্তিষ্কে পৌঁছে আমাদের মধ্যে অস্বস্তির অনুভূতি তৈরি করে।
দুর্গন্ধযুক্ত পরিবেশে থুতু ফেলার মূল কারণ হলো মস্তিষ্কের প্রতিক্রিয়া। দুর্গন্ধের কণা শ্বাসের মাধ্যমে মুখগহ্বরে প্রবেশ করলে মুখের লালার সাথে মিশে যেতে পারে।
এই অনুভূতিতে মস্তিষ্ক মনে করে যে মুখের ভেতরে কোনো ক্ষতিকর পদার্থ জমেছে। তাই আমাদের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া হলো, থুতু ফেলে মুখ পরিষ্কার করা।
যুক্তরাজ্য ইউনিভার্সিটি অফ বার্মিংহামের সেন্সরি অ্যান্ড ওলফ্যাক্টরি সায়েন্সেসের গবেষক (Department ড. গর্ডন বলেন, ‘মানুষের ঘ্রাণশক্তি খুব সংবেদনশীল এবং এটা মস্তিষ্কের লিম্বিক সিস্টেমের সাথে সরাসরি যুক্ত। দুর্গন্ধযুক্ত কণা যখন নাকে প্রবেশ করে, তখন তা শুধু ঘ্রাণগ্রাহক স্নায়ুকে উদ্দীপ্ত করার পাশাপশি মুখগহ্বরে অবস্থিত স্বাদগ্রাহক কোষেও প্রভাব ফেলে।
ফলে, মুখে অস্বস্তি অনুভূত হলে থুতু ফেলার প্রবণতা দেখা দেয়। এটি মূলত একটি প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষামূলক প্রতিক্রিয়া।’
দুর্গন্ধ প্রায়ই কোনো পচা, জীবাণুযুক্ত বা ক্ষতিকর বস্তু থেকে আসে। আমাদের শরীর খুব সামান্য ক্ষতির আশঙ্কা থাকলেও তার বিপরীতে প্রতিক্রিয়া দেখায়। থুতু ফেলা একটি প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা, যা শরীরকে বিষাক্ত বা অস্বাস্থ্যকর পদার্থ থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করে।
দুর্গন্ধ আমাদের মানসিক অবস্থাকেও প্রভাবিত করে। এটি কেবল শারীরিক প্রতিক্রিয়ার বিষয় নয়, বরং মানসিকভাবেও আমরা দুর্গন্ধ সহ্য করতে পারি না। থুতু ফেলা এক ধরনের মানসিক তৃপ্তি এনে দেয়, যেন আমরা দূষণ থেকে মুক্ত হচ্ছি।
জাপনের টোকিও ইউনিভার্সিটির ডিপর্টামেন্ট অব বিহ্যাভিরাল অ্যান্ড কগনেটিভ সাইকোলজির অধ্যাপক হিরোয়াকি ইয়ামাগুচি মনে করেন, ‘মানুষের থুতু ফেলার প্রবণতা অনেকটাই মানসিক এবং সামাজিক প্রভাবের কারণে ঘটে। দুর্গন্ধের সাথে মনোবিজ্ঞানের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। দুর্গন্ধযুক্ত পরিবেশে আমাদের মস্তিষ্ক একটি বিপদ সংকেত পাঠায়, যা মানুষকে মনে করায় যে শরীরের অভ্যন্তরে কিছু ক্ষতিকর উপাদান প্রবেশ করতে পারে। এটি মস্তিষ্কের ‘ফাইট অর ফ্লাইট’ প্রতিক্রিয়ার অংশ হিসেবে কাজ করে এবং থুতু ফেলার মাধ্যমে মানুষ এই ঝুঁকি কমানোর চেষ্টা করে।’
প্রতিবর্ত ক্রিয়া হিসেবে দুর্গন্ধে থুতু ফেলা বিবর্তনের একটি অংশ হতে পারে। আদিম যুগে মানুষ দুর্গন্ধযুক্ত পরিবেশ থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করত, কারণ সেসব জায়গায় রোগের ঝুঁকি বেশি ছিল। থুতু ফেলার মাধ্যমে মুখ পরিষ্কার করে নিজেদের সুরক্ষিত রাখার প্রবণতা তখন থেকেই বিকশিত হয়েছে।
দুর্গন্ধে থুতু ফেলার অভ্যাস আমাদের শরীরের জটিল প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থার একটি অংশ। এটি শুধু শারীরিক নয়, মানসিক এবং বিবর্তনীয় কারণেও ঘটে। যদিও এটি একটি স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া, তবে জনসম্মুখে এমন আচরণ এড়িয়ে চলা উচিত। আমরা যদি দুর্গন্ধের মূল উৎস দূর করার দিকে মনোযোগ দিই, তাহলে এই অভ্যাসও ধীরে ধীরে কমে যাবে।
সূত্র: হাউ ইট ওয়ার্কস
Leave a Reply