নারীর অধিকার আলোচনা আমাদের দেশে বর্তমানে অন্যতম চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছে সচেতন জনগণের মধ্যে। যুগ যুগ ধরে নারীদের উপরে যেভাবে শোষণ ও অত্যাচারের স্টিম রোলার চালানো হয়েছে তার উদাহরণ আর দ্বিতীয়টি নেই। তৃতীয় বিশ্বের দেশ হিসেবে বাংলাদেশের নারী অধিকারে অবস্থা খুবই শোচনীয়। কুসংস্কার, শিক্ষা ও সঠিক ধর্মীয় জ্ঞানের অভাব এর পিছনের কতগুলো প্রধান কারণ। তবে এর পাশাপাশি অধিকার সম্পর্কে না জানা এবং পুরুষতান্ত্রিকতাও এটির বড় প্রতিবন্ধকতা। অনেকে ১৯৭৯ সালের জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে নারীর বিরুদ্ধে সর্বজনীন বৈষম্য দূরীকরণের কনভেনশন (CEDAW) কে নারীর অধিকারের একটি সার্বজনীন বিল হিসেবে উল্লেখ করেন।
এটি নারীর প্রতি বৈষম্য কি তা রূপরেখা দেয় এবং অবসান ঘটাতে জাতীয় পদক্ষেপের জন্য একটি পরিকল্পনা তৈরী করে। এটি ৩০টি নিবন্ধ এবং একটি প্রস্তাবনা নিয়ে গঠিত। লিঙ্গ বৈষম্যকে এই কনভেনশন দ্বারা সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে ‘‘যৌনতার ভিত্তিতে প্রণীত কোনো পার্থক্য বর্জন বা বিধিনিষেধ যার প্রভাব বা উদ্দেশ্য আছে নারীর স্বীকৃতি, উপভোগ বা ব্যায়াম, তাদের বৈবাহিক অবস্থা নির্বিশেষে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, নাগরিক বা অন্য কোনো ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমতা, মানবাধিকার এবং মৌলিক স্বাধীনতার ভিত্তি’’।
যেসব রাষ্ট্র কনভেনশন অনুমোদন করে তারা তার সমস্ত প্রকাশে নারীর প্রতি বৈষম্য দূর করার জন্য বেশ কয়েকটি উদ্যোগ বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করে, যেমন- নারীর প্রতি বৈষম্য নিষিদ্ধ করে এমন যথাযথ আইন প্রণয়ন করা এবং তাদের আইনি ব্যবস্থায় নারী ও পুরুষের সমতার নীতি অন্তর্ভূক্ত করা, বৈষম্যের বিরুদ্ধে নারীদের কার্যকর সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য আদালত এবং অন্যান্য সরকারী সংস্থা তৈরী করা এবং গ্যারান্টি দিতে যেকোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা ব্যবসা নারীর প্রতি আর বৈষম্য করবে না।
এটি তাদের জাতীয়তা, সেইসাথে তাদের সন্তানদের জাতীয়তা অর্জন, পরিবর্তন বা রাখার অধিকারকে সমর্থন করে। উপরন্ত, রাষ্ট্র দলগুলি সকল প্রকার নারী শোষণ ও পাচারের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রæতিবদ্ধ। যে দেশগুলো কনভেনশনটি অনুমোদন করেছে বা এতে যোগ দিয়েছে তাদের জন্য এবং প্রয়োজনীয়তা বাস্তবায়ন করা বাধ্যতামূলক। উপরন্তু, তারা প্রতি চার বছরে অন্তত একবার তাদের চুক্তির দায়িত্ব পালনের জন্য তারা যে পদক্ষেপ নিয়েছে সে বিষয়ে জাতীয় প্রতিবেদন প্রদান করার অঙ্গীকার করে।
আমি মোটামুটি সহজ ভাষায় ১৯৭৯ সালের জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে নারীর বিরুদ্ধে সর্বজনীন বৈষম্য দূরীকরণের কনভেনশন (CEDAW)-সহজ ভাষায় বলার চেষ্টা করেছি, যাতে করে সমাজের সচেতন নারী সমাজ তাদের অধিকারের ব্যাপারে আরও বেশি জানতে পারে। আমাদের দেশের সকল প্রকার নারী নিপীড়ন বন্ধ করার জন্য নারীর বিরুদ্ধে সর্বজনীন বৈষম্য দূরীকরণের কনভেনশনটি সফল প্রয়োগই এই ক্ষেত্রে অন্যতম নিয়ামত হতে পারে বলে সুশীল সমাজ মনে করে থাকেন।
Leave a Reply