1. iamparves@gmail.com : admin :
  2. janathatv19@gmail.com : Shohag Khan : Shohag Khan
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৩৯ অপরাহ্ন

সিলেটের ঐতিহ্য ‘জালালী কইতর’

অনলাইন ডেক্স
  • প্রকাশের সময় : শনিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২


জালালী কবুতর, যা সিলেটে ‘জালালী কইতর’ নামে পরিচিত। ৯শ’ বছরেরও বেশী সময় ধরে এই ‘জালালী কইতর’ সিলেটের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের স্মারক হয়ে আছে। নগরীর হযরত শাহজালাল (রহ.) এর দরগাহ শরীফে গেলেই দেখা মেলে জালালী কবুতরের। শাহজালাল (রহ.) এর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে সিলেট অঞ্চলের লোকজন এই কবুতর না খেলেও অন্য জাতের কবুতরের চেয়ে বর্তমানে এই কবুতরের সংখ্যা অনেক কম। বর্তমানে মাজার প্রাঙ্গণ ছাড়া নগরীর অন্য স্থান কিংবা জেলার আর কোথাও দলবদ্ধভাবে ‘জালালী কইতর’ এর দেখা পাওয়া যায়না।

দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রায় প্রতিদিনই পর্যটকরা আসেন সিলেটের মনমুগ্ধকর প্রকৃতির টানে। সিলেট ভ্রমণে এসে বেশিরভাগ পর্যটক নগরীর হযরত শাহজালাল (রহ.) এর দরগাহ শরীফে আসেন এই কামেল পীরের মাজার জিয়ারতে। বিশেষ করে সপ্তাহের বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার দরগাহ প্রাঙ্গণ থাকে লোকে লোকারণ্য। মুসলিম পর্যটকদের পাশাপাশি অন্য ধর্মের ভক্তরাও ভিড় জমান সেখানে।

হযরত শাহজালাল (রহ.)-এর ঐতিহাসিক গজার মাছ, চিল্লাখানা, সোনার কই মাছ ও হযরত শাহজালাল (রহ.) এর ব্যবহৃত দ্রব্যাদি পরিদর্শন ও মাজার জিয়ারতের পাশপাশি ভক্ত-পর্যটকদের অন্যরকম আনন্দের খোরাক জাগায় জালালী কবুতর। দরগাহ প্রাঙ্গণের পূর্বদিকে একটি জায়গায় জালালী কবুতরের দেখা মিলে। সেখানে তাদের জন্য খাবার ছিটিয়ে রাখা হয়েছে। তারাও মনের সুখে খাচ্ছে আর এদিক ওদিক উড়ছে।

কালের পরিক্রমায় সিলেটে কমছে জালালী কবুতরের সংখ্যা। বাসস্থানসহ নানা কারণেই কমছে এ সংখ্যা। তবে, একপ্রকার শ্রদ্ধা ও বিশ্বাসের কারণে এই জালালী কবুতর রান্না করে খান না সিলেটের স্থানীয় লোকজন।

জালালি কবুতরের বৈজ্ঞানিক নাম Columba livia, (কলাম্বা লিভিয়া)। ইংরেজিতে এই পাখির নাম রক ডাভ বা রক পিজিয়ন। সব ধরনের রেসিং কবুতর, ফ্যান্সি কবুতর ও বুনো কবুতরের পূর্বপুরুষ মনে করা হয় এ প্রজাতিটিকে। এর আদি আবাস ইউরোপ, এশিয়া ও আফ্রিকায়। তবে, কালের আবর্তে রক পিজিয়ন এখন অস্ট্রেলিয়া, উত্তর আমেরিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার বড় বড় শহর ও গ্রামাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। বিশ্বে এদের সংখ্যা ২৬ কোটি হলেও বাংলাদেশে এর সংখ্যা কত তা কারোরই জানা নেই।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৩০১ সালে ইসলাম প্রচারে ইয়েমেন থেকে হযরত শাহজালাল (রহ.) ভারতের দিল্লিতে আসেন। সেখানকার অলি নিজাম উদ্দিন আউলিয়া শাহজালালের আধ্যাত্মিক শক্তিতে মুগ্ধ হয়ে তাঁকে নীল ও কালো রঙের এক জোড়া কবুতর উপহার দেন। ১৩০৩ সালে শাহজালাল ৩৬০ জন সফরসঙ্গী নিয়ে শ্রীহট্ট (সিলেটের প্রাচীন নাম) জয় করতে বাংলায় আসেন। জনশ্রুতি আছে, শ্রীহট্ট জয়ের প্রতীকস্বরূপ কবুতর দু’টিকে উড়িয়ে দেন হযরত শাহজালাল (রঃ)। সেই থেকে কবুতরগুলো মাজারটিলায় বসবাস শুরু করে। পরে ওই দু’টি কবুতরের বংশধররাই ‘জালালী কৈতর’ নামে পরিচিতি পায়।
প্রায় ৯শ’ বছরেরও বেশী সময় ধরে জালালী কবুতরের অবস্থান শুধু দরগাহ এলাকায় নয়, ক্বীন ব্রিজ এলাকাসহ নগরীর আকাশজুড়ে অবাধে বিচরণ তাদের। কয়েক বছর আগেও নগরীর পুরাতন স্থাপনা, মসজিদ, মন্দির কিংবা অনেক বাসা-বাড়ির নির্জন স্থানে তাদেরকে বসবাস করতে দেখা যেত। সময়ের পরিক্রমায় এই কবুতরের সংখ্যা এখন কমে আসছে। বর্তমানে তাদের সংখ্যা হাজারেরও কম বলে জানিয়েছেন কবুতর নিয়ে গবেষণা করা লোকজন।
এছাড়াও, পাখি নিয়ে গবেষণাকারী বিশ্বখ্যাত ওয়েবসাইট ‘অল এবাউট বার্ডস’ থেকে জানা গেছে, প্রথম এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মার্কিন সেনারা বার্তা পাঠানোর ক্ষেত্রে জালালী কবুতর বা রক পিজিয়ন ব্যবহার করতো। এই প্রজাতির কবুতরকে চোখ বেঁধে দূরবর্তী স্থান থেকে ছেড়ে দিলেও তারা তাদের বাড়ির পথ খুঁজে পায়। তারা পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রগুলি অনুধাবন করে এবং সম্ভবত শব্দ ও গন্ধ ব্যবহার করে নেভিগেট করতে পারে। তারা সূর্যের অবস্থানের উপর ভিত্তি করে সংকেতও ব্যবহার করতে পারে।
গত বৃহস্পতিবার নগরীর হযরত শাহজালাল (রহ.) এর মাজার প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা যায়, দরগাহ প্রাঙ্গণ ও আশপাশের দালানগুলোতে জালালী কবুতরের সরব উপস্থিতি পর্যটকদের আকৃষ্ট করছে। মূল ফটকের ডান পাশে মুসাফির ভবনের পাশে কবুতরের জন্য নির্দিষ্ট করে রাখা আছে একটি স্থান। সেখানে মেঝেতে বিছিয়ে রাখা ধান, গম ও সর্ষে খুঁটে খুঁটে খাচ্ছে জালালীসহ অন্যান্য প্রজাতির কবুতর। কবুতরের বসবাসের স্থান হিসেবে দরগাহ মাজারের মুসাফির ভবনসহ অন্যান্য দালানে কাঠের খোপ তৈরী করে দেয়া হয়েছে। মাজার জিয়ারতে আসা পর্যটকরা কবুতরের সৌন্দর্য্যে হচ্ছেন মোহিত। অনেকে মোবাইলের ক্যামেরায় বন্দি করছেন নিজেদের স্মৃতির সাথে কবুতরের চিত্রও। অনেকে আবার কবুতরকে খাবার হিসেবে ধান ও চাল ছিটিয়ে দিচ্ছেন।
কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে দরগাহ জিয়ারতে আসা মোকাররম হোসেন জানান, ‘বাবা হযরত শাহজালাল (রহ.) এর মাজার জিয়ারত করতে এসেছি। অনেকের কাছেই এই কবুতরের কথা শুনেছি। আজ তা নিজ চোখে দেখলাম। অনেক ভালো লাগলো দেখে।’
মাজারের খাদেম সামুন মাহমুদ খান জানান, কবুতরের সংখ্যা আগে আরো বেশী ছিল। এখন সেই সংখ্যা কমেছে। তিনি জানান, বিগত কয়েক বছর আগেও মাজারের আশপাশ এলাকায় জনবসতি ছিল কম। বহুতল ভবনের সংখ্যাও ছিল অপ্রতুল। পুরাতন ধাঁচের বাসাবাড়িতেই মূলত জালালী কবুতর বসবাস করতো। কিন্তু বর্তমানে বহুতল ভবনের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় তারা তাদের আবাসস্থল হারাচ্ছে।
তিনি বলেন, ভক্তরা আগে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে জালালী কবুতর নিয়ে আসতেন দরগাহ মাজারে ছাড়ার জন্য। আর এখন জালালী কবুতরের পরিবর্তে অন্যান্য জাতের কবুতরও নিয়ে আসছেন তারা। যার ফলে, সংখ্যার আধিক্য কমছে।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, সিলেটে দিনকে দিন কবুতর প্রেমীর সংখ্যা বাড়ছে। অনেকেই সখের বসে কবুতর পুষছেন। দেশী-বিদেশী নানা জাতের কবুতর রয়েছে তাদের সংগ্রহে। কিন্তু তারা যদি এই জালালী কবুতরের বংশ বিস্তার নিয়েও কাজ করতেন, তাহলে হয়তো এর বংশ বৃদ্ধিতে সহায়ক হতো। পাশাপাশি সরকারী উদ্যোগও প্রয়োজন বলে তিনি মন্তব্য করেন।
তিনি জানান, ২০১৫ সালে জালালী কবুতরের প্রজননের জন্য ‘জালালী প্রজনন কক্ষ’ তৈরী করেন মাজার কর্তৃপক্ষ। পরবর্তীতে নানা জটিলতায় সেই কেন্দ্রটি বন্ধ করে দেয়া হয়। তিনি জানান, মাজারের বিভিন্ন দালানে বাক্স তৈরী করে দেয়া হয়েছে। প্রতিদিন নিয়ম করে কবুতরের খাবার দেয়া হয়। নিয়মিত ঔষধও খাওয়ানো হয় বলে তিনি উল্লেখ করেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশ থেকে ধীরে ধীরে জালালি কুবতরের সংখ্যা কমছে। তবে, কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে জালালী কবুতরের বংশ বিস্তার সম্ভব।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, ৩২ বছর বয়সে ইসলাম ধর্ম প্রচারের লক্ষ্যে বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলে আসেন হযরত শাহজালাল (রহ.)। সে সময় যাদু বিদ্যায় পারদর্শী অত্যাচারী রাজা গৌড় গোবিন্দ নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেও হযরতের আগমন ঠেকাতে ব্যর্থ হয়। এক পর্যায়ে হযরত শাহজালাল (র)-এর কারামতে ভীতসন্ত্রস্থ হয়ে গোপনে রাজ্য ছেড়ে পালিয়ে যান গৌড় গোবিন্দ। ১৩০৩ সালে বিনাযুদ্ধে সিলেট জয় করলেন হযরত শাহজালাল (রঃ)। জয়ের কিছুক্ষণ পর সিলেটে প্রথমবারের মত ধ্বনিত হল আযানের সুর। তিনি তাঁর শিষ্য সিকান্দার শাহকে রাজ্য পরিচালনা ও শাসনভার-এর দায়িত্ব দিয়ে নিজে ধর্মের খেদমতে আত্ন নিয়োগ করলেন। হযরত শাহ জালাল (রহঃ) যখন ইসলাম প্রচারের জন্য যাত্রা শুরু করেন তখন তার সহচর ছিল মাত্র বারোজন। সিলেটে প্রবেশের সময় সে সংখ্যা দাঁড়ায় ৩৬০ জনে। বাংলাদেশে ইসলাম প্রসারে এই ৩৬০ জনের অবদান অনস্বীকার্য।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

নামাজের সময়সূচী

  • ফজর
  • যোহর
  • আছর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যোদয়
  • ৪:৪৭
  • ১২:৩১
  • ৫:০০
  • ৬:৫৬
  • ৮:১৩
  • ৬:০৩