লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ
লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলায় সেকেন্দার আলী(৪৯) নামে এক মধ্যবয়সী বুদ্ধি প্রতিবন্ধিকে বিবস্ত্র করে নির্যাত্, মারপিট ও হত্যার চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। নির্যাতনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ গণমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ায় জেলা জুড়ে আলোচন সমালোচনার ঝড় উঠেছে। বিচার চেয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেছে নির্যাতনের শিকার বুদ্ধি প্রতিবন্ধি সেকেন্দার আলী।
রবিবার(২৬ জুন) দুপুরে কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এটিএম গোলাম রসুল আদালতের নির্দেশনায় প্রতিবন্ধী নির্যাতনের মামলাটি থানায় নথিভুক্ত করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে গত ৫জুন রাত সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার কাকিনা ইউনিয়নের উত্তর গোপাল রায় গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
আহত প্রতিবন্ধি সেকেন্দার আলী ওই গ্রামের মৃত নছর উদ্দিনের ছেলে। তিনি প্রতিবন্ধী হলেও পেশায় একজন ভ্যান চালক।
আদালতে দায়ের করা মামলা সুত্রে জানা গেছে, ভ্যান চালিয়ে সংসার সচল রেখেছেন বুদ্ধি প্রতিবন্ধি সেকেন্দার আলী। তার প্রতিবেশী আব্দুর জব্বারের ছেলে স’মিল মিস্ত্রী জাহেদুল ইসলামের কাছে গাছ পরিবহন বাবদ ভাড়ার টাকা পাওনা ছিলেন ভ্যান চালক প্রতিবন্ধী সেকেন্দার আলী। সেই পাওনা টাকা চাইতে গেলে স্থানীয় সুকানদিঘী বাজারে তাদের মধ্যে তর্কবিতর্ক হয়। গত ৫জুন রাত সাড়ে ৯টার দিকে বাজারের কাজ শেষে ভ্যান নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন সেকেন্দার আলী। পুর্ব বিরোধের জের ধরে নিজেদের বাড়ির পাশে পথ রোধ করেন জাহেদুল ইসলাম ও তার তিন ভাইসহ পরিবারের লোকজন।
এ সময় জাহেদুল ইসলাম গংরা গাছের ডাল আর লাঠি দিয়ে ভ্যান চালক সেকেন্দার আলীকে বিবস্ত্র করে বেধড়ক মারপিট করেন। জীবন বাঁচানোর তাগিদে হামলাকারীদের হাতে পায়ে ধরেও রক্ষা হয়নি সেকেন্দার আলীর। একপর্যেয় হামলাকারীদের কয়েকজন বিবস্ত্র সেকেন্দার আলীকে এলোপাতারী মারপিট করছিল আর একজন তার গলা চেপে হত্যার চেষ্টা চালায়। তার আত্মচিৎকারে স্ত্রী আর্জিনা এবং মেয়ে তাকে বাঁচাতে আসলে তাদেরকেও মারপিট ও শ্লীনতাহানী করে হামলাকারীরা। পরে তার আত্মচিৎকারে স্থানীয়রা ছুটে এসে হামলাকারীদের কবল থেকে সেকেন্দার আলীকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।
প্রতিবন্ধি ভ্যান চালক সেকেন্দার আলীকে বিবস্ত্র করে মারপিটের পুরো ঘটনাটি হামলাকারীদের একজন ভিডিও করে কয়কদিন পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছেড়ে দিলে তা মুহুর্তের মধ্যে ভাইরাল এবং বিষয়টি জনসাধারনের মধ্যে জানাজানি হয়।
দীর্ঘ ৮দিন হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে কিছুটা সুস্থ হলে এ ঘটনায় জাহেদুল ইসলামকে প্রধান করে তার পরিবারের ৬জনের বিরুদ্ধে গত ১৪জুন ভিডিও প্রদর্শন করে লালমনিরহাট আদালতে মামলা দায়ের করেন ভ্যান চালক সেকেন্দার আলীর স্ত্রী আর্জিনা বেগম। আদালত মামলাটি গ্রহন করে কালীগঞ্জ থানা নিয়মিত মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করার নির্দেশ প্রদান করেন। অবশেষে শুক্রবার(২৪জুন) সেই মামলাটি কালীগঞ্জ থানায় নথিভুক্ত করা হয়।
কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এটিএম গোলাম রসুল বলেন, অমানুষিক নির্যাতনের ভিডিওটি দেখেই আমি তাৎক্ষনিক হামলাকারীদের গ্রেফতার করতে অফিসার নিয়োগ করেছিলাম। কিন্তু তারা পালিয়ে যাওয়ায় গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। থানায় মামলা নিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বাদি অন্যের কথায় আদালতে মামলা করেছেন। হামলাকারীদের গ্রেফতার করতে চেষ্টা অব্যহত রয়েছে।
Leave a Reply