ময়মনসিংহ সিটির সড়ক, ড্রেনেজসহ শতকোটি টাকার অবকাঠামোগত উন্নয়ন কাজ বাতিল হয়েছে। কাজ সম্পন্ন হয়েছে মাত্র ৪৫ শতাংশ। আর খুঁড়ে রাখা রাস্তা, ফুটপাতের কারণে নগরবাসীকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
জানা গেছে, ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনে (মসিক) সড়ক ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য বিশেষ প্রকল্প হিসেবে ৮৬টি প্যাকেজে বরাদ্দ দেওয়া হয় ১ হাজার ৫৭৫ কোটি টাকা। গত বছরের ডিসেম্বরে প্রকল্পের মেয়াদকাল শেষ হলেও কাজ হয়েছে মাত্র ৪৫ শতাংশ। বিশেষ করে জুলাই বিপ্লবের পর অনেক ঠিকাদার লাপাত্তা হওয়ায় কাজ থমকে গেছে। ফলে বাতিল করা হয়েছে আটটি প্যাকেজে প্রায় শতকোটি টাকার কাজ। এতে খুঁড়ে রাখা রাস্তা, ফুটপাতের কারণে ভোগান্তি বেড়েছে নগরের বাসিন্দাদের। নগরবাসীর অনেকেই বলেন, ‘বিগত সময়ে উন্নয়নের নামে লুটপাট হয়েছে বেশি। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ঠিকাদার লাপাত্তা হওয়ায় জনভোগান্তি পৌঁছেছে চরমে। আমরা চাই অসম্পন্ন কাজ দ্রুত শেষ করা হোক।’
২০২০ সালের ৭ ডিসেম্বর একনেক সভায় ‘ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন সড়ক উন্নয়ন ও ড্রেনেজ নেটওয়ার্কসহ নাগরিক সেবা উন্নতকরণ’ নামক এই বিশেষ প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। এই প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৪৭৫ কিলোমিটার সড়ক, ৩৪৫ কিলোমিটার ড্রেন, প্রায় ১৭ কিলোমিটার ফুটপাত, ৩৭ দশমিক ৫৯ কিলোমিটার রিটেইনিং ওয়াল, ১ দশমিক ১০ কিলোমিটার সড়ক বিভাজক, তিনটি সেতু, ১৩টি কালভার্ট ও ছয়টি পদচারী সেতু নির্মাণের কথা। কিন্তু ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর অনেক ঠিকাদার আত্মগোপনে চলে যায়। ফলে উন্নয়নকাজে দেখা দেয় স্থবিরতা।
মসিকের নির্বাহী প্রকৌশলী (সিভিল) আজহারুল হক সাংবাদিকদের বলেন, শর্ত অনুযায়ী গড়ে ২০-৩০ শতাংশ কাজ হয়েছে। বাকি কাজের টেন্ডার এখন প্রক্রিয়াধীন। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে নগরীর কেওয়াটখালী ১৯ ও ২০ ওয়ার্ডের সড়ক ও ড্রেনের উন্নয়নকাজ শুরু হয়। ছয় মাস না যেতেই বন্ধ হয়ে যায় সেই কাজ। এতে প্রায় দুই বছর ধরে ভোগান্তি পোহাচ্ছে ১৯ ও ২০ ওয়ার্ডের বাসিন্দারা। শুধু কেওয়াটখালী নয়, নগরের ভাটিকাশর, বলাশপুর, গোহাইলকান্দি, নতুনবাজার সড়কেরও একই অবস্থা। বলাশপুর এলাকার নজরুল ইসলামও হুমায়ূন কবীর বলেন, ‘আলিয়া মাদ্রাসা থেকে কারিতাসের মোড় পর্যন্ত রাস্তাটি তিন বছর ধরে খুঁড়ে রাখা হয়েছে।
এই এক কিলোমিটার রাস্তা ও ড্রেন অসম্পন্ন থাকায় আমাদের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে।’ স্থানীয় ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ভাটিকাশর আলিয়া মাদ্রাসা রোড থেকে বিনার বাড়ি পর্যন্ত আরসিসি এই রাস্তার নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ১ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। কিন্তু কাজ শুরু হলেও কয়েক দফা বন্ধ হয়। সর্বশেষ ৫ আগস্টের পর থেকে ঠিকাদার আসতে দেখিনি।’
সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী সুমনা আল মজীদ সাংবাদিকদের বলেন, চলমান ৮৬টি প্যাকেজের মধ্যে ঠিকাদারের অনুপস্থিতিসহ নানা কারণে আটটি প্যাকেজ বাতিল করা হয়েছে। কাজগুলো যথাসময়ের মধ্যে শেষ করার জন্য জোর তাগিদ দেওয়া হচ্ছে।
Leave a Reply