1. iamparves@gmail.com : admin :
  2. janathatv19@gmail.com : Shohag Khan : Shohag Khan
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:৪৬ অপরাহ্ন

ঐখানে এক নদী ছিল…!

স্টাফ রিপোর্টার
  • প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার, ২৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪


খননে গাফিলতি বালু বাণিজ্য * দখলে নিয়ে স্থানে স্থানে মৎস্যচাষ

বাংলাদেশের একসময়ের অন্যতম বৃহত্তম নদ ব্রহ্মপুত্র এখন ধুধু বালুচর। স্থানে স্থানে চর আর বালুর পাহাড় জমে প্রমত্ত নদী পরিণত হয়েছে বালুমহালে। খননকাজে গাফিলতি, তীর দখলের হিড়িক আর দূর উজানের উৎসপথে বাঁধ ইত্যাদির প্রভাবে সেই প্রমত্ত নদের বুকে অসংখ্য চর নিয়ে আজ কোনো রকমে প্রমত্ত রূপ ও গতিহারা অবস্থায় বেঁচে আছে। ব্রহ্মপুত্রের শাখা নদনদীগুলোও অস্তিত্ব হারিয়ে মানচিত্র থেকে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসেও এসব শাখা নদনদীর অনেক স্থানে হাঁটুসমান পানিও মেলে না। ফলে ভেঙে পড়েছে সহজ ও কম খরচের নৌযোগাযোগ ও পরিবহণব্যবস্থা।

অপরদিকে এ নদের খনন প্রকল্প নিয়েও রয়েছে নয়ছয় ও গাফিলতির অভিযোগ। খননের পাশাপাশি অবৈধ বালু বাণিজ্যেও জড়িয়ে পড়েছে একটি সিন্ডিকেট। এ কারণে খননকাজ নদের স্থানে স্থানে মুখ থুবড়ে পড়েছে। অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে প্রকল্প কাজের সফলতার ভবিষ্যৎ নিয়ে।

কিশোরগঞ্জ তথা বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের মাটি ও মানুষের একসময়ের আত্মার আত্মীয় ছিল ব্রহ্মপুত্র। এ বিস্তীর্ণ অঞ্চলের বাসিন্দারা একসময় প্রমত্ত ব্রহ্মপুত্রের মধুর কলতানে ঘুমিয়ে পড়তেন। ঘন গম্ভীর গর্জনে কখনো আবার জেগেও উঠতেন। এ নদের তীরে তীরে একসময় গড়ে উঠেছে নগর-বন্দর ও শিল্পসভ্যতা। কালের রুদ্ররোষে ব্রহ্মপুত্রের সেই তেজোদ্দীপ্ত স্রোতোধারা, অতীত মহিমা আজ শুধুই স্মৃতি। বৈরী প্রকৃতি ও মানুষের বৈরী আচরণে এখন এর অবস্থা মুমূর্ষু।

চীন, ভারত ও বাংলাদেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত ব্রহ্মপুত্র একটি আন্তর্দেশীয় নদ। তিব্বতের মানস সরোবরের নিকটবর্তী ‘চেমাইয়াংডু’ হিমবাহ থেকে উৎপত্তির পর এটি তিব্বত মালভূমির ওপর দিয়ে পূর্ব দিকে মানপো নামে প্রায় এক হাজার মাইল প্রবাহিত হয়ে দক্ষিণে ঘুরে ৪৪২ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত সাদিয়ার নিকট আসামে প্রবেশ করে। আসামের ‘ডিহাং’ এবং পরে ব্রহ্মপুত্র নামে পশ্চিম দিকে প্রায় ৪৫০ মাইল (প্রায় ৭২৪ কিলোমিটার) প্রবাহিত হওয়ার পর গারো পাহাড়ের কাছে দক্ষিণে ঘুরে বর্তমান কুড়িগ্রামের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছে। ব্রহ্মপুত্র কিছুদূর এগিয়ে দক্ষিণ অভিমুখী তিস্তায় মিলেছে। আরও দক্ষিণে গিয়ে ব্রহ্মপুত্র বিভক্ত হয়ে এক শাখা যমুনা এবং অন্য শাখা ব্রহ্মপুত্র নামে জামালপুর, শেরপুর ও ময়মনসিংহ জেলা হয়ে কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব পর্যন্ত প্রবাহিত হয়ে মেঘনায় মিলিত হয়েছে। কুড়িগ্রাম থেকে বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলে ব্রহ্মপুত্রের নৌপথ ভৈরব বাজারের কাছে মেঘনার সঙ্গে মিলেছে। এসব নৌপথ ছিল দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের যোগাযোগের মাধ্যম।

ঐতিহাসিক মিনহাজ উদ্দিনের মতে, আজকের মৃতপ্রায় ব্রহ্মপুত্র ত্রয়োদশ শতকে প্রশস্ততায় গঙ্গার তিনগুণ ছিল। সপ্তদশ শতকে চৈনিক পরিব্রাজক হিওয়েন সাং এ উপমহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল পরিভ্রমণের সময় গঙ্গার চেয়ে তিনগুণ প্রশস্ত ব্রহ্মপুত্র পার হয়ে কামরূপ গিয়েছিলেন।

মঙ্গলবার কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরের খুরশিদ মহল সেতু এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদ সরেজমিন পরিদর্শনকালে দেখা গেছে, এ নদের পূর্বদিকের তীরে বিশাল অংশজুড়ে জেগে উঠেছে বালুচর। বৈধ-অবৈধ পথে বালু বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েছেন এলাকার কিছু মধ্যস্বত্বভোগী মানুষ। কথা হয় খুরশিদমহল গ্রামের বৃদ্ধ লোকমান আলী এবং সাইফুল ইসলামের সঙ্গে। তারা স্মৃতি রোমন্থন করে বলেন, শৈশবে ব্রহ্মপুত্রের বিশালতা তারা দেখেছেন। তখন প্রমত্ত বিশাল দৈর্ঘ্যরে ব্রহ্মপুত্র নদ পার হওয়ার আগে দুর্ঘটনার শঙ্কায় হিন্দু-মুসলমানরা মানত করে নৌকায় উঠতেন। তখন এ নদে বড় বড় নৌকা ও লঞ্চ চলত। তারা নিজেরা বাড়ির ঘাট থেকে নৌকায় উঠে বাবার সঙ্গে বা স্বজনদের সঙ্গে নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা যেতেন। আফসোস করে তারা সমস্বরে বলেন, ১৯৭৫ সালেও এ নৌপথে নামমাত্র ভাড়ায় নৌকা ও লঞ্চে চড়ার সুযোগ ছিল। এরপর থেকে এ নদ যৌবন হারিয়ে ফেলতে থাকে। অবশ্য, পরে জানা গেছে ফারাক্কা বাঁধের প্রভাবে নদ শুকিয়ে প্রমত্ত রূপ ও গতি হারিয়েছে।

জানা গেছে, কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর, কটিয়াদী, পাকুন্দিয়া, কুলিয়ারচর ও ভৈরব থানার ওপর দিয়ে ৭৫ কিলোমিটার বয়ে গিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদ মেঘনার সঙ্গে মিলিত হয়। এই ৭৫ কিলোমিটার নদের বুক জুড়েই জেগে উঠছে বিশাল বালুচর। পাকুন্দিয়া উপজেলার মঠখোলা বাজার ও আশপাশের এলাকায় দেখা গেছে, নদপথের দুধারে বিশাল বিশাল বালুর স্তূপ। নির্দ্বিধায় চলছে অবৈধ বালু বাণিজ্য। নদের মাঝপথে নোঙর করা বিশাল আকৃতির কয়েকটি ড্রেজিং বোর্ড।

বিআইডব্লিউটিএ-এর ময়মনসিংহ অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মহসিন মিয়া জানান, হোসেনপুর ও পাকুন্দিয়ার ১৪ কিলোমিটার নদ পথের ড্রেজিং কাজ চলছে। ২ হাজার ৭৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর ও গাইবান্ধা জেলার ব্রহ্মপুত্র নদের ২ হাজার ২৭ কিলোমিটার নৌপথ খনন কাজ চলছে। ১৪টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ খনন প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করছে।

সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রমতে, ২০১৯ সালে এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যেই কিশোরগঞ্জে ১৪ কিলোমিটার অংশের ১২ কিলোমিটারের মতো কাজ শেষের পথে। এ ছাড়া কিশোরগঞ্জ জেলার বাকি দুই কিলোমিটার ব্রহ্মপুত্র নদ পথসহ পাঁচটি জেলায় এখনো প্রায় ১০০ কিলোমিটার খনন কাজ বাকি আছে। খননের পর মাটি ও বালু রাখার মতো জায়গা না পাওয়াসহ বিভিন্ন সমস্যার কারণে প্রকল্পের বাকি অংশের কাজ বিলম্বিত হয়েছে। এখন পর্যন্ত এ প্রকল্পের ৬০-৬৫ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলেও জানান বিআইডব্লিউটিএ’র নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মহসিন মিয়া। সর্বশেষ গত বছরের ২৫ নভেম্বর বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান এ খনন প্রকল্প কাজ সরেজমিন পরিদর্শন করেন বলে জানা গেছে

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

নামাজের সময়সূচী

  • ফজর
  • যোহর
  • আছর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যোদয়
  • ৪:৪৩
  • ১২:৩০
  • ৫:০১
  • ৬:৫৮
  • ৮:১৭
  • ৫:৫৮