1. iamparves@gmail.com : admin :
  2. janathatv19@gmail.com : Shohag Khan : Shohag Khan
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১:২৩ পূর্বাহ্ন

কেন শক্তিশালী করোনাভাইরাসের নতুন ধরনগুলো ?

নাদিম মাহমুদ
  • প্রকাশের সময় : বুধবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২১

করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় বছরের শুরু থেকে বাংলাদেশে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সংক্রমণ। বাড়ছে মৃত্যু, সঙ্গে থাকছে শঙ্কা। ভাইরাসটির জিনোমে ক্রমবর্ধমান পরিবর্তন, বিয়োজন- অতিমারীর স্থায়িত্ব নিয়ে যেমন প্রশ্ন উঠছে, তেমনি তা চলমান ভ্যাকসিন ক্যাম্পেইনে বড় ধরনের বাঁধা সৃষ্টি করতে পারে।

এরই মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বের হচ্ছে নতুন নতুন গবেষণাপত্র। ভাইরাসটিকে নিষ্ক্রয়করণে ভ্যাকসিনের ভূমিকা যেমন থাকছে, তেমনি বিভিন্ন অঞ্চলে ভাইরাসটির রূপবদল গবেষক থেকে শুরু করে রাষ্ট্রপ্রধানদের ভাবিয়ে তুলছে।

প্রশ্ন হলো, তৈরি হওয়া নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্ট কেন এতো শক্তিশালী? কেন টিকাগুলোর কার্যকারিতা কমিয়ে ফেলার হুমকি দিচ্ছে? এভাবে ভ্যারিয়েন্ট যদি তৈরি হতেই থাকে, তাহলে আগামী পৃথিবী কেমন হবে?

সহজ কথায় এসব প্রশ্নের উত্তর বের করা খুব কঠিন। তবে আপাতত, করোনাভাইরাসের যেসব নতুন ধরন আমাদের শ্বাস টেনে ধরছে, সে বিষয়ে বিশদ আলোচনা করা জরুরী বলে মনে করছি। তার কারণ, আমাদের নীতি-নির্ধারকদের থেকে শুরু করে সবার বিষয়টি নিয়ে সাধারণ ধারণা থাকা প্রয়োজন, যা আগামী দিনগুলোতে অতিমারী মোকাবেলায় কাজে দেবে।

কীভাবে সংক্রমণ ছড়ায়?

আপনারা হয়তো ইতিমধ্যে জেনেছেন, করোনাভাইরাস বা সার্স-কভ-২ একটি রাইবো নিউক্লিক এসিড (আরএনএ) শ্রেণির ভাইরাস। এ ভাইরাসে বেশ কয়েকটি সংক্রমণশীল অংশ, যেমন নিউক্লিওকাপসিড (এন), ইনভেলাপ (ই), মেমব্রেন (এম) এবং স্পাইক (এস) প্রোটিন আছে। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংক্রমণশীল অংশ হলো স্পাইক প্রোটিন। এ স্পাইক প্রোটিনটি ১২৭৩টি অ্যামিনো এসিডের দ্বারা তৈরি। স্পাইক প্রোটিনটি আবার দুইটি সাব-ইউনিট (এস১ এবং এস২) সমন্বয়ে গঠিত। এর একটি এস১-কে আমরা রিসেপ্টর বাইন্ডিং ডোমেইন (আরবিডি) বলি। আরবিডি অংশটি মূলত আমাদের শরীরের চামড়ায় থাকা অ্যাঞ্জিওটেনসিন-কনভার্টিং এনজাইম-২ (এসিই২) গ্রাহকের মাধ্যমে কোষের ভেতরে প্রবেশ করে সংক্রমণ ছড়ায়।

মিউটেশন কী ও কেন করোনাভাইরাস মিউটেশন ঘটায়?

যেকোনও জীবেরই আণবিক গঠন রয়েছে। ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়া থেকে শুরু করে মানুষের জিনের এ সন্নিবেশকে আমরা জিনোম সিকোয়েন্স বলছি। এসব জিনগুলো মূলত প্রোটিন বা অ্যামিনো এসিডের সূতিকাগার। মিউটেশন বা পরিব্যাপ্তি হলো অনেকটা স্থলাভিষিক্ত শব্দের মত। মানে হলো, প্রোটিনের কোনও নির্দিষ্ট অ্যামিনো এসিডের জায়গায় যখন আরেকটি অ্যামিনো এসিড স্থানান্তরিত হয়, তাকেই মিউটেশন বলা যায়। 

ভাইরাসের মিউটেশন একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার অংশ। এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্সে কয়েকহাজার অ্যামিনো এসিডের অদল-বদল হয়েছে। আর এসব মিউটেশনের ফলে ওই প্রোটিনের ভৌত-কাঠামো এবং আণবিক সম্পর্ক পরিবর্তন ঘটেছে। যার ফলে এর কাজেও পরিবর্তন এসেছে। ধরুন, আগে যে জিন দশটি কোষে নিজেদের মেলে ধরতে পারতো, মিউটেশনের ফলে তার সংখ্যা দাঁড়াতে পারে ৫০টি কোষে। 

মিউটেশন বিভিন্নভাবে ঘটতে পারে। আমরা যেমন গরম দেশ থেকে শীত প্রধান দেশে বেড়াতে গেলে, প্রথমে অসুবিধায় পড়ি, কিন্তু পরবর্তী সময়ে ঠিকই খাপ খাইয়ে নিই। ঠিক তেমনি ভাইরাসের অ্যাডাপটেশন ক্ষমতার জন্য নিজের প্রয়োজনে কিংবা পরোক্ষ অনুসঙ্গের কারণে মিউটেশন ঘটে। পরিবেশ, তাপমাত্রা- সর্বোপরি ভাইরাসের স্বকীয় চারিত্রিক গুণাবলীর জন্য মিউটেশন হতে পারে। মিউটেশন পোষকের জন্য ক্ষতিকর কিংবা ভালো- দুটোই হতে পারে।

সার্স-কভ-২ নতুন ধরনের সংক্রমণের বৈশিষ্ট্য কী?

আগেই বলেছি,  সার্স-কভ-২  এর স্পাইক প্রোটিনতে ১২৭৩টি অ্যামিনো এসিড আছে। এ প্রোটিনটির একটি নিদিষ্ট অংশকে আমরা রিসেপ্টর বাইন্ডিং বা আরবিডি বলি। করোনাভাইরাসের মূলত ৪১৭ থেকে ৫০১ নম্বর অ্যামিনো এসিডগুলো আরবিডি, যা চামড়ায় লেগে আমাদের দেহের ভেতরে প্রবেশ করে। বলতে গেলে এটি পাস টিকেট, যার থাকবে সে নির্দিষ্ট দরজা দিয়ে ঢোকার সুযোগ পাবে।

এ অংশ ছাড়াও স্পাইকের ১৩ নম্বর থেকে ১২২৯ নম্বর অ্যামিনো এসিডগুলোতে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ অন শেয়ারিং অল ইনফ্লুয়েঞ্জা ডেটা বা জিআইএসআইডি-র হিসেবে এখন পর্যন্ত ১ লাখ ৬১ হাজারের মত পরিবর্তনের ডেটা জমা পড়েছে।

২০১৯ সালে উহানে করোনাভাইরাসটি শনাক্ত হওয়ার পর থেকে অনবরত এর জিনোম সিকোয়েন্স পরিবর্তিত হচ্ছে। শুরুতে স্পাইক প্রোটিনের ৬১৪ নম্বর অ্যামিনো এসিড অ্যাসপারটিক এসিডে পরিবর্তন হয়ে গ্লাইসিন বা D614G হয়েছিল ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারির দিকে (সূত্র ১)। মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে এ মিউটিশনটি দ্বারা বিশ্বব্যাপী মানুষ কোভিডে আক্রান্ত হচ্ছিল। যদিও এ মিউটেশনটি আরবিডির বাইরে ঘটেছে।

এ স্ট্রেইন বা ধরনটি মানুষের শরীরে প্রবেশের পর জ্বর, কাশি, শ্বাস-কষ্টের লক্ষণগুলোই বেশি জানা গিয়েছে। এছাড়া মূল বা উহানে ধরা পড়া ভাইরাসটি সংক্রমণের পর যেমন অনেকের ঘ্রাণ-শক্তি লোপ পেয়েছে, এ স্ট্রেইনেও তাই ঘটেছে অনেক ক্ষেত্রেই।

সার্স-কভ-২ ফাইলোজেনেটিক গ্রুপে নতুন সদস্য হিসেবে যোগ দেয় যুক্তরাজ্য থেকে ছড়িয়ে পড়া B.1.1.7 লাইনেজটি। এ ভ্যারিয়েন্টে ২৩টি পরিবর্তন দেখা মেলে (সূত্র-২)। 

এসব পরিবর্তনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো এ ভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্সের অ্যাসপারজিন অ্যামিনো এসিডে (এন)-কে তুলে দিয়ে ট্রাইরোসসিন (ওয়াই) বসেছে, যাকে অনুজীববিজ্ঞানীরা N501Y বলেন। এ পজিশনটি এমন জায়গায় হয়েছে, তা করোনাভাইরাসের সংক্রমণশীল অংশ এস-স্পাইক প্রোটিনটির সাব-ইউনিট এস-১।  

যুক্তরাজ্যের ৯৮ শতাংশ সংক্রমিত ব্যক্তি কোভিডের B.1.1.7 ভ্যারিয়েন্ট দ্বারা আক্রান্ত। এ ভ্যারিয়েন্টটি শুরুর দিকের করোনাভাইরাসের চেয়ে ৯৫ শতাংশ বেশি সংক্রমণশীল, যা ইতিমধ্যে ১১৪টি দেশে ছড়িয়েছে। (সূত্র-৩)। যুক্তরাজ্যের এ ভ্যারিয়েন্ট দ্বারা কেউ সংক্রমিত হলে, জ্বর-কাশির সাথে যুক্ত হয়েছে- ডায়রিয়া, পেটে ব্যথা, গলার স্বর বসে যাওয়া,অবসাদ, বুকে ব্যথা, মাংশপেশীতে ব্যথা, স্বাদহীনতা, মাথা ব্যথা, চোখে ব্যথার মত লক্ষণ (সূত্র-৪)।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে বিজ্ঞান সাময়িকী ‘নেচার’ প্রকাশিত গবেষণা প্রবন্ধ বলছে, দক্ষিণ আফ্রিকায় কোভিডের অন্তত ১৬টি নতুন ধরনের ভাইরাস সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। যাদের মধ্যে তিনটি ভ্যারিয়েন্ট B.1.1.54, B.1.1.56 এবং C.1 অঞ্চলটিতে বেশ বিস্তৃত ছিল। এ তিন ভ্যারিয়েন্ট  B.1.351 লাইনেজের।

আর এই ভ্যারিয়েন্টগুলো তৈরি হয়েছে ২০২০ সালের ৬ মার্চ থেকে ২৬ অগাস্ট পর্যন্ত। মাত্র পাঁচ মাসের ব্যবধানে তৈরি হওয়া সার্স-কভ-২ মিউটেশন মরণঘাতী হিসেবে সারা বিশ্বে দ্রুত সময়ে ছড়িয়ে পড়ে (সূত্র-৫)।

বলা হচ্ছে, এটি অন্যান্য ভারিয়েন্টের চেয়ে ৫০ শতাংশ বেশি সংক্রমণশীল।

ব্রাজিলে ( P.1 এবং P.2 ) ধরনগুলোতে এই N501Y,  E৪৮৪K ছাড়াও  K৪১৭T পরিবর্তন হয়েছে। মিউটেশন ছাড়াও ৬৯-৭০ স্থানে দুইটি অ্যামিনো এসিড একবারে নাই হয়ে গিয়েছে।

আফ্রিকা ও ব্রাজিলের এসব ভ্যারিয়েন্টগুলো আগের লক্ষণগুলোর সাথে যোগ করেছে- চোখ উঠা, হাত-পায়ের পাতার রং পরিবর্তন হওয়া, চামড়ায় র‌্যাশ,বুকে প্রচণ্ড ব্যাথার মত উপসর্গ।

বাংলাদেশে কোন ভ্যারিয়েন্ট?

মার্চের শুরু থেকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইসিডিডিআর,বি এর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রথম দিকে যুক্তরাজ্যের ভ্যারিয়েন্ট  B.1.1.7টি দেখা দিলেও পরবর্তীতে ৮১ শতাংশ কোভিড আক্রান্তদের শরীরেই দক্ষিণ আফ্রিকার ভ্যারিয়েন্ট B.1.351 পাওয়া গিয়েছে (সূত্র-৬)। 

তবে জিআইএসআইডি হিসেবে  N৫০১Y,  E৪৮৪K ছাড়াও  K৪১৭N পজিশনের মিউটেশন ছাড়াও আরবিডিতে V445A, S477N মিউটেশন হয়েছে, যা সিঙ্গাপুর, ব্রাজিল, ইসরায়েল, যুক্তরাজ্যে পাওয়া গিয়েছে।

আমাদের দেশে জিনোম সিকোয়েন্স করার মত গবেষণা খুবই কম দেখতে পাচ্ছি। জানি না, এসব মেজর মিউটেশন ব্যতিত অন্য কোনও নতুন ভ্যারিয়েন্ট তৈরি হয়েছে কি না। তবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে স্বতন্ত্র মিউটেশন যে হচ্ছে, তার প্রভাব পড়ছে আক্রান্ত হওয়ার পরিসংখ্যানে। গবেষণার তথ্য না পেলে, ধারণার উপর কিছু বলা সত্যি উচিত হবে না। তবে বাংলাদেশে নিজস্ব ভ্যারিয়েন্ট তৈরি হওয়ার সম্ভবনা উড়ে দেওয়া যায় না। যে তথ্য হয়তো আমরা সামনের দিনগুলোতে পাবো।

কেন এ ভ্যারিয়েন্টগুলো বেশি শক্তিশালী? 

যেকোনও প্রোটিনের কার্যকারিতা নির্ভর করে,  কাঙ্ক্ষিত প্রোটিনের সাথে তার সম্পর্ক কেমন সেটির উপর। মানে প্রোটিন-প্রোটিন ইন্টার‌্যাকশনের উপর নির্ভর করে এর কার্যকারিতা। 

করোনাভাইরাসের নতুন ধরনগুলোয় মিউটেশন হওয়ার কারণে, স্পাইক প্রোটিনের আভ্যন্তরীণ অ্যামিনো এসিডগুলোর মধ্যে আন্ত:সম্পর্ক এবং কনফিগারেশনে পরিবর্তন আসে। ফলে এ প্রোটিনটির আরবিডি এবং আমাদের শরীরে চামড়ায় থাকা অ্যাঞ্জিওটেনসিন-কনভার্টিং এনজাইম২ (এসিই-২) গ্রাহকের সাথে দ্রুত লাগতে পারে, এবং কোষ থেকে অন্য কোষে সংক্রমণ ছড়িয়ে দিতে পারে। যার কারণে, এসব মিউটেশনের ভ্যারিয়েন্ট অনেক দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে।  

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এসব ধরনের উপর ভিত্তি করে বা ভ্যাকসিনগুলো কতটা কার্যকারিতা দিচ্ছে?

অ্যাস্ট্রাজেনেকা-অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভাবিত ভ্যাকসিন যারা নিয়েছেন, তাদের জন্য একটি সুখবর হলো এ ভ্যাকসিনটি যুক্তরাজ্যের নতুন ধরনের সার্স-কভ-২ প্রতিরোধে ৭০ দশমিক ৪ শতাংশই কার্যকর। বিজ্ঞান সাময়িকী ল্যানসেটে এ সংক্রান্ত একটি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ হয়েছে। সেখানে বলা হচ্ছে, এ ভ্যাকসিনটি B.1.1.7 ভ্যারিয়েন্ট প্রতিরোধে কাজ করেছে। এছাড়া B.1.1.7 নয় এমন করোনাভাইরাসে ৮১ দশমিক ৫ শতাংশ কার্যকারিতা পেয়েছে। যদিও অক্সফোর্ড ভ্যাকসিন গ্রুপের এ গবেষণাপত্রে অন্যান্য ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে কাজ করা হয়নি। তবে উপসর্গহীন B.1.1.7 করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের ক্ষেত্রে মাত্র ২৯ শতাংশ কার্যকারিতার খবর জানিয়েছে তারা।

খারাপ ব্যাপার হলো, যুক্তরাজ্যের ভ্যারিয়েন্টে ভালো প্রতিরোধ ক্ষমতা দেখালেও অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনটির ব্রাজিল কিংবা আফ্রিকার ধরনগুলোতে কার্যকারিতা কম। 

কারণ, যুক্তরাজ্যের ভ্যারিয়েন্টটির N৫০১Y নম্বর মিউটেশন ছাড়াও  E৪৮৪K মিউটেশনটি অ্যান্টিবডিকে ফাঁকি দিচ্ছে বলে গবেষণায় উঠে আসছে। বিষয়টি সহজ করে বোঝানো যেতে পারে। ধরুন, আপনার মোবাইলটি পাসওয়ার্ড দিয়ে লক করা। এ পাসওয়ার্ডটি কেউ যদি ভাঙ্গার কৌশল জেনে যায়, তাহলে সে অনায়াসে আপনার ফোনে প্রবেশ করতে পারে। 

ঠিক তাই, আরবিডিতে থাকা কিছু নিদিষ্ট অংশ অ্যান্টিবডির সাথে লেগে করোনাভাইরাসটিকে যেখানে নিষ্ক্রিয় করার কথা, সেই স্থানে কিছু মিউটেশন অ্যান্টিবডিকে পরিপূর্ণভাবে চিনতে ভুল করছে। যার ফলে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা কমে যাচ্ছে।

বাংলাদেশে অনেকেই অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন নেওয়ার পরও কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার কথা বলছেন। তার কারণ হতে পারে মূলত এসব নব্য স্ট্রেইন। 

গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, ফাইজার কিংবা মডার্নার আরএনএ ভ্যাকসিন বিভিন্ন ভ্যারিয়েন্ট নিষ্ক্রিয় করতে পারছে। ফাইজারের দুই ডোজ টিকা নেওয়া ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, করোনার মূল যে ভ্যারিয়েন্ট- সেটির স্পাইক প্রোটিন নিষ্ক্রিয় করা সম্ভব হচ্ছে। কিন্তু মিউটেশন ভ্যারিয়েন্ট  B.1.1.7 এর ক্ষেত্রে এর কার্যকারিতা ২ দশমিক ১ গুণ কমে গেছে। আরেক মিউটেশন ভ্যারিয়েন্ট B .1.1.298 ক্ষেত্রেও এর কার্যকারিতা দেড়গুণ কমেছে। 

অপরদিকে মডার্নার  টিকার এর যারা দুইটি সম্পূর্ণ ডোজ পেয়েছিলেন, তারা মূল উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া ভাইরাসের ক্ষেত্রে যতোটা সুরক্ষা পাবেন তারচেয়ে যুক্তরাজ্যের B.1.1.7 স্ট্রেইনে আক্রান্ত হলে  ২ দশমিক ৩ গুণ কম প্রতিরোধ পাচ্ছেন। অপরদিকে B .1.1.298 ভ্যারিয়েন্টটি মডার্নার টিকার প্রতিরোধ ক্ষমতা ১ দশমিক ৩ গুণ হ্রাস করেছে। (সূত্র-৬)

গবেষণায় বলছে, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ব্রাজিলের ভ্যারিয়েন্টের আরবিডিতে E484K মিউটেশনটি থাকায় ফাইজারের ভ্যাকসিনটির কার্যকারিতা ৫ দশমিক ৮ গুণ কমেছে। মডার্নার ক্ষেত্রে এটি প্রায় তিনগুণ কমেছে। কার্যকারিতা কিছুটা কমলেও বিভিন্ন কোম্পানির করোনাভাইরাসের নতুন ধরন বা স্ট্রেইন প্রতিরোধে যথেষ্ট ভূমিকা রাখছে। এটিই আপাতত ভাল খবর।

বাংলাদেশের জন্য কিছুটা হতাশার খবর এখানে ছড়িয়ে পড়া দক্ষিণ আফ্রিকার ভ্যারিয়েন্টটির বিরুদ্ধে অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনটি কম প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্ষম। কিন্তু বাংলাদেশে এটি যেভাবে ছড়িয়ে পড়ছে, তাতে একসময় আস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন নেওয়ার পরও অনেকেই সংক্রমিত হতে পারেন। সরকারের উচিত হবে, অন্যান্য কোম্পানির ভ্যাকসিন পাওয়ার ক্ষেত্রে কথা চালাচালি এখনই শুরু করা।

এমন পরিস্থিতিতে আগামীর বিশ্ব কেমন হবে, তা ভাবতে গা শিউরে উঠছে। তবে ভ্যাকসিনগুলো যে কাজ করছে, এটিই আমাদের গবেষকদের অনেক বড় সাফল্য। করোনাভাইরাস তার রূপ বদলাবে, বর্ণচোরা হবে, তবে তার বর্ণ চিহ্নিত করতে হাজার হাজার গবেষক গবেষণাগারে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। ভ্যারিয়েন্টগুলোর বিরুদ্ধে শক্তিশালী ভ্যাকসিন অচিরেই তৈরি হবে- সেটা দুরাশা নয়। 

এর আগে হয়তো প্রাণ-সংহার অব্যাহত থাকবে। আর এজন্য ভ্যাকসিন নেওয়ার পরও আমাদের স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। নিজে বাঁচতে হবে, অন্যকে বাঁচাতে হবে। আশা করি, সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কোভিড প্রতিরোধে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখবে।

তথ্যসূত্র

১. https://www.cell.com/cell/fulltext/S0092-8674(20)30820-5

২.https://www.biorxiv.org/content/10.1101/2020.12.29.424708v1

৩.https://science.sciencemag.org/content/372/6538/eabg3055

৪. https://www.nature.com/articles/s41591-021-01255-3

৫.https://www.icddrb.org/news-and-events/news?id=874

৬. https://www.cell.com/cell/fulltext/S0092-8674(21)00298-1

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

নামাজের সময়সূচী

  • ফজর
  • যোহর
  • আছর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যোদয়
  • ৪:৪৩
  • ১২:৩০
  • ৫:০১
  • ৬:৫৮
  • ৮:১৭
  • ৫:৫৮