হাজার কিমি দূরে থেকেও গত কয়েকদিন ধরে মনটা পড়ে আছে বাংলাদেশের ময়মনসিংহের ত্রিশালের হাইওয়ের দুপাশে ফুটে থাকা টকটকে লাল কৃষ্ণচূড়ায়। প্রায় বছর তিন আগে লাগানো চারাগুলো রূপে-সৌন্দর্যে অনন্যা হয়ে উঠতে শুরু করেছে। অনেকে এ সুন্দরীদের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দিয়েছেন, ভাল লাগার অনুভূতি জানিয়েছেন। আমাকে মেসেঞ্জারে ছবিও পাঠিয়েছেন কেউ কেউ।
আমার ত্রিশাল কর্মকালীন সময়টা অনেকটা মোহের মতো। এক ঝাঁক যোদ্ধা নিয়ে সরকারি কাজের বাইরে আমরা দিন-রাত একটার পর একটা বড় বড় প্রজেক্ট হাতে নিয়েছি। ত্রিশালের সকল শিক্ষার্থীর হাতে তিনটা করে গাছের চারা (মোট ৩ লাখ ৫ হাজার) ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ত্রিশাল অংশের প্রায় ৩১ কিমি হাইওয়ের দু’পাশে সাড়ে ৩ হাজার কৃষ্ণচূড়া গাছের চারা রোপন, ৩শত মেয়েকে নিয়ে বাল্যবিয়ে বিরোধী ব্রিগেড গঠন এবং তাদেরকে সাইকেল ও ইউনিফর্ম বিতরণ, মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের হেলথ কার্ড বিতরণ, উপজেলার সকল দোকানের সামনের দরজা ও শাটার লাল-সবুজ করার প্রকল্প এর মধ্যে অন্যতম।
আলহামদুলিল্লাহ্, আমরা স্বীকৃতিও পেয়েছি সে সময় অকৃপণভাবে। এর মধ্যে বাংলাদেশের প্রথম উপজেলা হিসেবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সমন্বয় ও সংস্কার সচিব এনএম জিয়াউল স্যার হতে অ২র স্বীকৃতি গ্রহণ, মন্ত্রিপরিষদ সচিব স্যারের নিকট হতে ইনোভেশন শোকেসিং পুরস্কার, দুদুকের চেয়ারম্যান স্যারের হাতে লেখা প্রশংসাসহ ইমেইল, বরিশাল জেলা প্রশাসনের জীবনানন্দ পুরস্কার, সাতক্ষীরা জেলায় আয়োজিত বিভাগীয় ইনোভেশন সভায় রিসোর্স পারসন হিসেবে ‘সবুজ ত্রিশাল’ আইডিয়া উপস্থাপন, ‘ত্রিশাল প্রেসক্লাব পদক’, ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসন ইনোভেশন স্বীকৃতি এবং সর্বশেষ, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট থেকে জাতীয় পর্যায়ে জনপ্রশাসন পদক গ্রহণ অন্যতম। উল্লেখ্য, আমি এবং আমার দলের পুরস্কার হতে প্রাপ্ত ৫ লক্ষ টাকাই ‘ত্রিশাল ব্রিগেড’ বর্ধিত করার কাজে দান করি। যা দিয়ে আরো ৫০ জন মেয়েকে সাইকেল এবং ইউনিফর্ম দেয়া হয়েছে। জাপান চলে আসায়, অনুষ্ঠানেও উপস্থিত থাকতে পারিনি।
আমি বিনীত চিত্তে কৃতজ্ঞতা জানাই, ত্রিশালের সকল সাধারন জনগণ, গ্রাম পুলিশ, উদ্যোক্তা, ইউপি সচিব, জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক (ত্রিশাল ও ময়মনসিংহ), বীর মুক্তিযোদ্ধা, সকল দাপ্তরিক স্টাফ (অফিস সহায়ক হতে কর্মকর্তা), সম্মানিত শিক্ষকবৃন্দ, আনসার ভিডিপি, পুলিশ বাহিনী এবং আমার উর্দ্ধতন কর্মকর্তাগণের প্রতি যাদের নিবির সহযোগিতা ছাড়া এ সকল কাজ করা প্রকৃত অর্থেই অসম্ভব ছিলো।
আমরা চেষ্টা করেছি – কবি নজরুলের স্মৃতিধন্য ত্রিশালে সামান্য পরিবর্তন আনার, নতুন অধ্যায় সূচনার। জানি অনেকটাই সফল হইনি। তবে শুরু যে করা যায়- এটা অনুধাবন করাতে সক্ষম হয়েছি বলে মনে করি। করোনাকালীন এ দুসময়ে সবার জন্য অশেষ দোয়া রইল।
Leave a Reply