আগামী নির্বাচন ঘিরে দেশের রাজনীতিতে হঠাৎ উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ার মধ্যেই চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি ঘর গোছাতে তৎপর হয়ে উঠেছে। থানা, ওয়ার্ড ও নগর কমিটিগুলো দ্রুত গঠনের মাধ্যমে দলীয় কর্মকাণ্ড চাঙ্গা করতে চান বিএনপি নেতারা। তৃণমূলকে শক্তিশালী করার মিশন নিয়ে তারা মাঠে নেমেছেন। একই সঙ্গে তৃণমূলে আন্দোলনের বার্তাও দিচ্ছেন তারা। ভবিষ্যতে যেকোনো কর্মসূচি বাস্তবায়নে তৃণমূল নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকতে বলা হচ্ছে।
কেন্দ্র, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দলীয় হাইকমান্ডের তিন দিনের সিরিজ বৈঠকের উদ্যোগ নেওয়ার পর চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপিও গাঝাড়া দিয়ে উঠতে শুরু করে। দীর্ঘদিন পর দলে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরেছে। তৃণমূলকে গোছানোর অংশ হিসাবে প্রতিটি থানায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে মতবিনিময় সভা। সংগঠনকে কীভাবে আরও গতিশীল করা যায়-সেসব নিয়ে সভায় আলাপ-আলোচনা করা হচ্ছে। কেন্দ্র থেকে আন্দোলনের কোনো নির্দেশনা না এলেও নগর বিএনপির অনেক নেতাকর্মী মনে করছেন-নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে মাঠে নামার ডাক আসতে পারে যেকোনো সময়। সেজন্য দলকে দ্রুত গুছিয়ে আনতে হবে। নেতাকর্মীদের করে তুলতে হবে আন্দোলনমুখী। এমন উপলব্ধি থেকে থানা পর্যায়ের মতবিনিময় সভায় আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে কর্মীদের প্রতি আহবান জানানো হচ্ছে।
দলীয় সূত্র জানায়, করোনাভাইরাস মহামারির কারণে কেন্দ্র থেকে প্রায় দেড় বছর বড় ধরনের কোনো কর্মসূচি দেওয়া হয়নি। তবে তা সত্ত্বেও নগর বিএনপির নাসিমন ভবনে দলীয় কার্যালয়ে একাধিক সভা-সমাবেশ হয়েছে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে একাধিক সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। পুরোনো মামলার পাশাপাশি নেতাকর্মীদের নামে নতুন মামলা হয়েছে। অনেকে জেলও খেটেছেন। আবার কেউ কেউ আগাম জামিন নিয়েছেন। এমন প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও থেমে ছিল না দলীয় কার্যক্রম। তবে মূল কমিটি ভেঙে দেওয়ায় নগর বিএনপিতে নেতৃত্বের সংকট রয়েছে। মূল কমিটি ভেঙে দিয়ে গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর নগর বিএনপির ৩৯ সদস্যের আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়। তিন মাসের মধ্যে সম্মেলন করে নতুন কমিটি গঠনের কথা বলা হয়। কিন্তু ৯ মাস পার হলেও কমিটি হয়নি। তবে নগর বিএনপি নেতারা মনে করেন, দলীয় কর্মসূচি বাস্তবায়নে তৃণমূলকে সুসংগঠিত করার বিকল্প নেই।
নগরীর ১৫টি থানায় তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে ১১ সেপ্টেম্বর থেকে মতবিনিময় সভা করছেন নগর বিএনপি নেতারা। যা শেষ হবে ৯ অক্টোবর। এর মধ্যে কোতোয়ালি, পাঁচলাইশ, ইপিজেড ও চান্দগাঁওসহ চার থানায় মতবিনিময় শেষ হয়েছে। এসব সভায় নেতারা কর্মীদের চাঙ্গা করে তোলার পাশাপাশি আন্দোলনের বার্তাও পৌঁছে দিচ্ছেন।
কোতোয়ালি থানা বিএনপির মতবিনিময় সভায় কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (চট্টগ্রাম বিভাগ) মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনতে গণআন্দোলন প্রয়োজন। দলকে সুসংগঠিত ও শক্তিশালী করে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে দুর্বার আন্দোলন করতে বিএনপি নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকতে হবে। শুক্রবার ইপিজেড থানা কমিটির মতবিনিময় সভায়ও তিনি আন্দোলন নিয়ে বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে নির্বাচন গণদাবিতে পরিণত হয়েছে। তাই ঐক্যবদ্ধভাবে গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে এ সরকারকে পরাজিত করতে হবে।
এদিকে, চট্টগ্রাম নগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন যুগান্তরকে বলেন, আন্দোলনের বিষয়ে কেন্দ্র থেকে আমরা এখনো কোনো নির্দেশনা পাইনি। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে গিয়ে কোনো লাভ হবে না, এটা এখন সবার জানা। তাই নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন চাইবে বিএনপি। এক্ষেত্রে কেন্দ্র থেকে যে কর্মসূচিই দেওয়া হোক না কেন, তা বাস্তবায়নে আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। আগে আমরা থানা ও ওয়ার্ড কমিটিগুলো করব। পরে সম্মেলনের মাধ্যমে নগর কমিটি হবে। মূলত এজন্য তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করা হচ্ছে।
ডা. শাহাদাত হোসেন আরও বলেন, দলীয় কর্মকাণ্ড চালাতে গিয়ে আমরা মামলা হামলার শিকার হচ্ছি। দলের বেশির ভাগ নেতার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। এ ছাড়া আমাদের উন্মুক্ত স্থানে সভা-সমাবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। তিনি বলেন, হামলা-মামলা দিয়ে আমাদের আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না। আন্দোলনের লক্ষ্যে সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে আমরা তৃণমূলকে শক্তিশালী করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
Leave a Reply