লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ
গত ১৪ফেব্রুয়ারী ভালোবাসা দিবসে লালমনিরহাট পৌরসভা এলাকার ময়লা ফেলার একটি ডাস্টবিন থেকে উদ্ধার হওয়া সেই নবজাতক কন্যা শিশুটির পরিচয় পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় নবজাতকের মা ইভা (১৭), নানী (ইভার মা) লুৎফা বেগম (৪৫) ও নবজাতকের জৈবিক পিতা ইভার দুলাভাই জয়নাল আবেদীন(৩০) গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
শুক্রবার (২৫ ফেব্রুয়ারী) সকাল ১১টায় সদর থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি শাহা আলম প্রেস ব্রিফিংকরে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এ সার্কেল) মারুফা জামাল, ওসি তদন্ত শহিদুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
তবে এরই মধ্যে গত বুধবার (২৩ ফেব্রুয়ারী) বিকালে ওই কন্যা শিশুটির ঠাই হয়েছে রাজশাহীর শিশুমনি নিবাসে। পুলিশ শিশুটিকে তাদের তত্ত্বাবধানে রেখে ৮দিন পর আদালতের আদেশে রাজশাহীর ওই শিশুমনি নিবাসে প্রেরন করেন।
এদিকে বৃহস্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারী) বিকেলে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শিশুটির পরিচয় পেয়ে অভিযান চালিয়ে শহরের সাহেবপাড়া এলাকার একটি রেলওয়ে কোয়ার্টার থেকে ৩জনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, ডাস্টবিন থেকে উদ্ধার হওয়া কন্যা শিশুটির মা ইভা খাতুন (১৭), ইভার দুলাভাই জয়নাল আবেদীন (৩০) ও ইভার মা লুৎফা বেগম (৪৫)।
অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহা আলম জানান,ডাস্টবিন থেকে উদ্ধার হওয়া নবজাতক কন্যা শিশুটির পরিচয় পাওয়ার পর অভিযান চালিয়ে ঘটনার সাথে জড়িত তিনজনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়। পরে তাদের জিজ্ঞাসাবাদে শিশুটির বাবা মায়ের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ায় তিনজনকে গ্রেফতার দেখানো হয়।
এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এ সার্কেল) মারুফা জামাল জানান, নবজাতক কন্যা শিশুটি উদ্ধার হওয়ার পর থেকে জেলার মানবিক পুলিশ আবিদা সুলতানা বিপিএম, পিপিএম একাধিক সময়ে হাসপাতালে গিয়ে শিশুটির খোঁজ খবর নেন। তার প্রত্যক্ষ তত্বাবধানে সদর থানার নারী পুলিশ সদস্যগনে শিশুটির সার্বিক নিরাপত্তাসহ মাতৃস্নেহে শিশুটিকে লালন পালন করে।
তিনি আরও বলেন, সদর থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি শাহা আলম ও ওসি তদন্ত শহিদুল ইসলামের একাধিক বিশ্বস্ত সোর্সের মাধ্যমে অজ্ঞাতনামা শিশুর মা এর পরিচয় উদ্ঘাটন করেন। পরবর্তীতে অভিযান চালিয়ে ঘটনার সাথে জড়িত তিনজনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে।
তিনি বলেন, ইভার বড় বোনের স্বামী দুলাভাই জয়নাল আবেদীন ইভার সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। সেই সম্পর্কের সুযোগে লম্পট দুলাভাই শারীরিক সম্পর্ক করলে ইভা গর্ভবতী হয়। তার গর্ভবতী হওয়ার বিষয়টি ইভা প্রাথমিক অবস্থায় বুঝতে না পারায় এবং দেরীতে বুঝতে পারায় সে একা একা বিষয়টি ধামা চাপা দিয়ে রাখে। পরবর্তীতে ১৩ ফেব্রুয়ারী রাতে সে অসুস্থতা বোধ করলে তার মা বিষয়টি বুঝতে পেরে জন্ডিসের কারনে পেটে ব্যাথা বলে হাসপাতালে ভর্তি করেন। হাসপাতালে থাকা অবস্থায় ১৪ ফেব্রুয়ারী ভোর বেলা সকলের অগোচরে হাসপাতালের একটি বাথরুমে ইভার সন্তান প্রসব হয়। পরে ইভার মা (নবজাতকের নানী) ও দুলাভাই জয়নাল আবেদিনের যোগসাজসে হাসপাতালে কাউকে কিছু না বলে পালিয়ে আসে এবং বাসায় আসার পথে রাস্তায় একটি ময়লা ফেলার ডাস্টবিনে নবজাতকটিকে ফেলে রেখে চলে আসে। পরবর্তীতে পুলিশ ডাস্টবিন থেকে নবজাতকটিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করান।
দুপুরের পর গ্রেফতার তিনজনকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হবে বলেও জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, গত ১৪ ফেব্রুয়ারী (সোমবার) সকালে সদর থানার এসআই রফিকুল ইসলাম জেলা শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার সংলগ্ন কালীবাড়ি (পুরান বাজার) এলাকার একটি ময়লার ডাস্টবিন থেকে নবজাতক শিশুটিকে জীবিত উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। এরপর তিনি থানায় একটি লিখিত এজাহার দেন। পরে ধারা-১৮৬০ সালের পেনাল কোডের ৩০৭/৩১৭ রুজু করে থানা পুলিশ। তারই পেক্ষিতে বুধবার(২৩ ফেব্রুয়ারী) আদালত শিশুটিকে শিশু মনি নিবাসে প্রেরণের নির্দেশ দেন।
Leave a Reply