ময়মনসিংহ প্রতিনিধিঃ
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুক) ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, কয়েকজন উশৃঙ্খল শিক্ষার্থী কেঁচি গেইটে সজোরে ধাক্কা দিচ্ছে। অপরদিকে শিক্ষকরা তাদের কলেজের ভিতরে ডুকতে বাধা দিচ্ছে। তবে, অপারগ হয়ে গেইট ছেড়ে দিলে শিক্ষার্থীরা কেচি ধাক্কা দিয়ে খুলে এক শিক্ষককে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে কলেজে ভিতরে ডুকে পরে। তার সাথে অপর শিক্ষার্থীরাও শিক্ষকদের ধাক্কা দিয়ে ফেলে ভিতরে ডুকে জানালা ভাংচুর করতে করতে ভিতরে ডুকে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত বুধবার (৮ জুন) দুপুরে এমন ঘটনা ঘটেছে ময়মনসিংহের গফরগাঁও সরকারী কলেজে। ওই দিন কলেজ শাখার ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা এমন ঘটনা ঘটিয়েছে বলে দাবি করছেন শিক্ষকরা।
এই ঘটনায় জড়িত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিচারের দাবিতে বিসিএস সাধারণ শিক্ষক সমিতি কর্মসুচি ঘোষণা করেছে। আগামী রবিবার (১২ জুন) দেশব্যাপী সরকারি কলেজের শিক্ষকরা বেলা ১২ টা থেকে ঘন্টাব্যাপী কর্ম বিরতি পালন করবেন।
শনিবার (১১ জুন) সকাল ১০ টার দিকে গফরগাঁও সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক কাজী ফারুক আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, গত বুধবার (৮ জুন) বেলা ১২ টায় একাদশ শ্রেণির অর্ধ-বার্ষিক পরীক্ষা চলাকালীন সময় কলেজ শাখার ছাত্রলীগের নেতাকর্মী সিমান্ত, রিবান, মুরাদ, সাব্বির হোসেন রিয়াদ, তানভীর ও সাব্বিরের নেতৃত্বে অজ্ঞাতনামা কতিপয় ছাত্র নামধারী সন্ত্রাসী কলেজ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে ব্যাপক ভাংচুর চালায়। কলেজের ক্যাশ শাখায় প্রবেশ করে গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র ছিনিয়ে নেয়। কলেজের ইসলামী শিক্ষা বিভাগের অধ্যাপক ও প্রাক্তন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ড. মুহাম্মদ ইমরান হোসাইন এবং পদার্থবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক, ড. মো. আবু রেজোয়ানকে লাঞ্ছিত ও মারধর করে। একই অকথ্য ভাষায় গালাগালি হুমকি প্রদর্শন করে। কলেজের অধ্যক্ষ লাঞ্চিত মারধর করতে গেলে গণিত বিভাগের বিভাগীর প্রধান মোহাম্মদ আকতার হোসেন বাধা দিতে যায়। এসময় তাকেও গালিগালি ও মারধর করে। এছাড়াও, পরীক্ষা হলে প্রবেশ করে শিক্ষার্থীদেরকে জোরপূর্বক বের করে দেয় এবং কলেজ ক্যাম্পাসে ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করে পরীক্ষার্থীদেরকে পরীক্ষা দিতে বাধার সৃষ্টি করে। কলেজের শিক্ষকদের অকথ্য ভাষায় গালি গালাজ করে।
পরদিন বৃহস্পতিবার (৯ জুন) বেলা ১২ টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী শিক্ষকদের কলেজ ক্যাম্পাসে অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে স্থানীয় প্রশাসন এবং পুলিশের সহায়তায় শিক্ষকরা ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন। এ ঘটনায় গফরগাঁও থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। কিন্তু অভিযোগ পাওয়ার পরও পুলিশ কর্তৃপক্ষ আইনগত কোনও ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ করেন তিনি।
কেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আপনাদের লাঞ্চিত ও মারধর করেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন সরকারি বিধি অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের ফরম পূরণ এবং সেশন ফি বাবদ পাঁচ হাজার ৬০০ টাকা ধার্য করা হয়েছে। এই টাকা রকেট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে জমা দেওয়ার কথা। কলেজের বেশিরভাগ শিক্ষার্থী ফরম পূরণ করেছেন এবং ব্যাংকে তারা টাকাও জমা দিয়েছেন। তবে কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী টাকা জমা দেয়নি। পরে বুধবার (৮ জুন) ক্যাম্পাসে আসে ছাত্রলীগ কলেজ শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক মুরাদ হাসান ঝিনুক, সাব্বির হোসেন, সীমান্ত ও রিবান। তারা পরীক্ষা চলাকালে হলে প্রবেশ করে খাতাপত্র ছিনিয়ে নেয়। পাশাপাশি সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে যোগ দিতে চাপ দেয়। পরে তারা কলেজের শিক্ষকদের ওপর হামলা চালায় এবং কলেজের শিক্ষক ডক্টর ইমরান হোসেনকে মারধর করে। এসময় আহত হয় আরেক শিক্ষক ড. রেজোয়ান আহমেদ।
ফর্ম ফিলাপ ফি কত জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার কলেজে এই বছর ফর্ম-ফিলাপ ৫ হাজার ৬০০ টাকা। সরকার নির্ধারিত সরকারী ফি কত জানতে চাইলে তিনি বলেন, ২৫০০ টাকা থেকে ৩০০০ হাজার টাকা। তাহলে বেশি রাখছেন কেন জানতে চাইলে বলেন, বেতন ও অন্যান্য ভাতাসহ ৫ হাজার ৬০০ নেয়া হচ্ছে। তবে, ফি কত সেটা বড় বিষয় না। তারা বড় অঙ্কের চাঁদা দাবি করেছিল। তা দেইনি বলে কলেজে হামলা চালিয়ে শিক্ষকদের আহত করেছেন।
এ বিষয়ে কলেজের ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী জাকিয়া ফেরদৌস বলেন, কলেজ ক্যাম্পাসে ঢুকে বাপের বয়সী শিক্ষককে গালে থাপ্পড় দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটিয়েছে ছাত্রলীগ নেতারা। এই ঘটনার বিচার না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষকরা ক্লাস ও পরীক্ষায় অংশ নেবে না।
এ বিষয়ে সহকারী অধ্যাপক ড. আবু রেজোয়ান বলেন, ঘটনার সময় আমি শিক্ষার্থীদের বাধা দিলে আমার মোবাইল ছিনিয়ে নেয়। পরে অবশ্য অন্যান্যদের সহায়তায় মোবাইল উদ্ধার করি। পরে তারা অধ্যক্ষের কক্ষে গিয়ে ভাংচুর করে ও তাকে গালাগালি ও অপমান অপদস্থ করে। আমি ফেরাতে আমাকেও মারধর করে তারা।
গফরগাঁও সরকারী কলেজ শাখার ছাত্রলীগের যুগ্ম আহব্বায় রিবান বলেন, কলেজে এইচএসি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফর্ম ফিলাপের টাকা বেশি নেয়ায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেছে। তবে, আমাদের বিরুদ্ধে যে শিক্ষকদের লাঞ্জিত ও মারধর করার অভিযোগ উঠেছে তা সম্পুর্ণ মিথা। আমরা কোন শিক্ষকের অসধাচরণ করিনি।
গফরগাঁও উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শরীফুল ইসলাম মণ্ডল বলেন, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা কলেজে কোন ভাংচুর করেনি। ফরম টাকা বেশি নেয়ার প্রতিবাদ করায় তাদের নামে থানায় মিথ্যা অভিযোগ করেছে।
গফরগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফারুক আহমেদ বলেন, ছাত্রলীগ কর্মীদের বিরুদ্ধে একটা অভিযোগ পাওয়া গেছে। সেটির তদন্ত চলছে। তবে, ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা শিক্ষকদের তালাবদ্ধ করে রাখার বিষয়টি জানার পর ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের উদ্ধার করি। এসময় শিক্ষার্থীরদের সরিয়ে দিয়ে পরিস্তিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। পরে ওই দিন সন্ধ্যার পর স্থানীয় নেতৃবৃন্দসহ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিসে বসে মিমাংসার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে, শিক্ষকদের পক্ষ থেরে পরবর্তীতে বিষয়টি জানানো হবে বলেও জানা শিক্ষকরা। তবে, এই ঘটনায় এখনো মামলা বা কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি বলেন জানান তিনি।
Leave a Reply