“বাবারে কাইল খাইছি খিচুরি, আইজ খামু কি” ? ঘরের মধ্যে জোয়ারের পানিতে তলাইয়া রইছে। তিন দিন ধইর্যা রান্দার কাম বন্ধ। চুলা তলাইয়া রইছে। ঘরে স্বামী প্যারালাইসে বিছানা পইর্যা আছে। রাইত হইলে নাতিডারে কোলে লইয়া বইয়া থাহি। জোয়ারের পানি নামলে মোরা ঘুমাই। ঘূর্নিঝড় ইয়াস ও পূর্নিমার প্রভাবে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নের বঙ্গবন্ধু কলোনীর পানিবন্ধি মরিয়ম বেগম এমন কথাগুলো বলেছেন। এ কলোনীর ১৯৬টি পরিবারের একই অবস্থা। এসব পানিবন্ধি পরিবারের বাড়ি-ঘর জোয়ারের সময় কোমর সমান পানির নিচে তলিয়ে থাকে, ভাটার টানে পানি কমতে না কমতেই পরের জোয়ারে আবার তা তলিয়ে যায়। গত তিন দিন ধরে পানি বন্ধি অবস্থায় রয়েছে উপকূলবর্তী কলাপাড়ার লক্ষাধিক মানুষ বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।
স্থানীয়রা জানান, ঘূর্নিঝড় ইয়াস’র প্রভাব কেটে গেলেও পূর্নিমার প্রভাবে রাবনাবাদ নদীর পানি প্রবেশ করে লালুয়া ইউনিয়নের ১০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ধানখালী ইউনিয়নের বেরিবাধ ভেঙ্গে ৩ গ্রাম, মহিপুর ইউনেয়নের ৩ গ্রাম , চম্পাপুর ইউনিয়নের ৪ গ্রাম ও টিয়াখালীর নাচনাপাড়া এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। অস্বাভাবিক জোয়ারের তোরে আরো বেশ কয়েকটি বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ এখন ঝুঁকিপূর্ন হয়ে পরেছে। জোয়ারের পানির চাপে যে কোন সময় বাঁধ ছুটে প্লাবিত হতে পাড়ে, এমন আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
উপজেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, পাঁচশত ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সামুদ্রিক জলোচ্ছ¡াস নিয়ন্ত্রন বেড়িবাঁধ ঘর্নিঝড় ইয়াস ও পূর্নিমার প্রভাবে নতুন করে আটটি পয়েন্টে ভেঙ্গে যায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের ৭৬টি গ্রামের ১৪ হাজার ৭১০টি পরিবার পানি বন্ধি হয়ে পরেছে।
টিয়াখালী ইউনিয়নের ইউপি সদস্য সোবাহান বিশ্বাস বলেন,বঙ্গবন্ধু কলোনীর বেড়িবাঁধ টপকিয়ে প্রতিদিন দুই দফায় জোয়ারের পানি প্রবেশ করে ১৯৬টি পরিবার বর্তমানে পানি বন্ধি অবস্থায় রয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে এক বেলা রান্না করা খাবার দেয়া হয়েছে।
এদিকে লালুয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শওকত হোসেন তপন বিশ্বাস বলেন, অস্বাভাবিক জোয়ারের ভাংগা বেরিবাধ দিয়ে রাবনাবাদ নদীর জোয়ারে পানি প্রবেশ করে গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এর ফলে প্রায় ১০ হাজার মানুষ পানিবন্ধি হয়ে পড়েছে। তলিয়ে রয়েছে পুকুর, মাছের ঘের সহ ফসলি জমি। অধিকাংশ বাড়ির উনুনে হাড়ি ওঠেনি। এছাড়া নতুন করে আরো বেড়িবাঁধ ভাংগার আশংকা দেখা দিয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হাসনাত মোহম্মদ শহিদুল হক বলেন, প্রতিটি ইউনিয়নে শুকনা খাবারের জন্য ২৫ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে। এ উপজেলায় শিশু খাদ্যের জন্য ১ লাখ টাকা ও গো-খাদ্যের জন্য ১ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে। এছাড়া প্রতিটি ইউনিয়নে ক্ষয়-ক্ষতি নির্ধারনের পর আরও আড়াই লাখ টাকা দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
Leave a Reply