নাম পাগলা মসজিদ। কিশোরগঞ্জ শহরের ঐতিহাসিক এ মসজিদটিতে পাঁচটি লোহার বানানো দানবাক্স রয়েছে। প্রতি তিন মাস পরপর বাক্সটি খোলা হয়।
কিন্তু; এবার করোনাকালের জন্য পাঁচ মাস পর আজ শনিবার দানবাক্স খুলে সবার চক্ষু চড়কগাছ! এবার দানবাক্সে মিলেছে দুই কোটি ৩৮ লাখ ৫৫ হাজার ৫৪৫ টাকা এবং বিদেশি মুদ্রা ও স্বর্ণালঙ্কার!
শনিবার সকালে দানবাক্স খুলে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে টাকা গণনা। আর বরাবরের মতোই এসব দানবাক্স খুললে এ বিপুল পরিমাণ অর্থ, স্বর্ণ ও রুপার অলঙ্কার মেলে।
এর আগে, গত বছরের ২৩ আগস্ট দানবাক্স খুলে পাওয়া যায় ১ কোটি ৭৪ লাখ ৮৩ হাজার ১০৯ টাকা। এ ছাড়া বিদেশি মুদ্রাসহ স্বর্ণ ও রূপার অলঙ্কার।
মসজিদটির তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে থাকা কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম জানান, এসব অর্থ এ মসজিদসহ জেলার সব মসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিমখানার পাশাপাশি বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করা হয়।
মসজিদের খতিব, এলাকাবাসী ও দূর-দূরান্ত থেকে আসা লোকজন সূত্রে জানা যায়, এখানে মানত করলে মনের বাসনা পূর্ণ হয়-এমন ধারণা থেকে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই এখানে দান করে থাকেন।
সূত্রমতে, একসময় এক আধ্যাত্মিক পাগল সাধকের বাস ছিল কিশোরগঞ্জ শহরের হারুয়া ও রাখুয়াইল এলাকার মাঝপথে প্রবাহিত নরসুন্দা নদের মধ্যবর্তী স্থানে জেগে ওঠা উঁচু টিলাকৃতির স্থানটিতে।
মুসলিম ও হিন্দু-নির্বিশেষে সব লোকজনের যাতায়াত ছিল ওই সাধকের আস্তানায়।ওই পাগল সাধকের দেহাবসানের পর তার উপাসনালয়টিকে কামেল পাগল পীরের মসজিদ হিসেবে ব্যবহার শুরু করে এলাকাবাসী।
কিন্তু; ওই সাধকের দেহাবসানের পর থেকে আশ্চর্যজনকভাবে এলাকা এমনকি দেশের দূর-দূরান্তের লোকজনের ভিড় বাড়তে থাকে। মানত কিংবা দানখয়রাত করলে মনোবাসনা পূরণ হয় এমন বিশ্বাস থেকে বিভিন্ন বয়সের হিন্দু-মুসলিমসহ বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণের নারী-পুরুষ মানত নিয়ে আসেন এই মসজিদে।
তারা নগদ টাকা-পয়সা,স্বর্ণ ও রুপার অলঙ্কারের পাশাপাশি গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি দান করেন।বিশেষ করে প্রতি শুক্রবার এ মসজিদে মানত নিয়ে আসা বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষের ঢল নামে।
আগতদের মধ্যে মুসলিমদের অধিকাংশই জুমার নামাজ আদায় করেন এ মসজিদে। আর এ ইতিহাস প্রায় আড়াইশ বছরেরও অধিক সময়ের বলে জানা যায়।
জেলা প্রশাসককে (ডিসি) সভাপতি করে প্রশাসন ও স্থানীয় গণ্যমান্য লোকজনকে নিয়ে গঠিত কমিটি এ মসজিদটির ব্যবস্থাপনা ও দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন।
শনিবার টাকা গণনার সময় কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল্লাহ আল মাসউদ, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মো. জিল্লুর রহমানসহ ব্যবস্থাপনা কমিটির গণ্যমান্য লোকজন উপস্থিত ছিলেন।
Leave a Reply