আলু, পেঁয়াজসহ নিত্যপণ্যের বাজার সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। কমিটির বৈঠকে বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য আমদানিনির্ভরতা কমিয়ে নিজেদের সক্ষমতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেছে মন্ত্রণালয়। এ জন্য দুই বছর সময় প্রয়োজন বলেও জানানো হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন সংসদীয় কমিটির সভাপতি তোফায়েল আহমেদ। বৈঠকে কমিটির সদস্য বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী, তাহজীব আলম সিদ্দিকী, সেলিম আলতাফ জর্জ ও সুলতানা নাদিরা এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
কমিটি সূত্র জানায়, বৈঠকে কমিটির সদস্যরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রথমে পেঁয়াজ, এরপর আলুর দাম নিয়ে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। এভাবে একটার পর একটা নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। কিন্তু মন্ত্রণালয় কী করছে? তাদের কি পূর্ববর্তী সার্ভে থাকে না? কোন বছর কোন পণ্য কতটুকু উৎপাদন হলো, আর কত চাহিদা। তাহলে এটা নিরূপণ করেই তো আগে থেকে আমদানি করা যায়। এর তো একটা মাস্টারপ্লান থাকবে, হঠাৎ করেই দাম বৃদ্ধি কেন?
সদস্যদের বক্তব্যের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বোঝানোর চেষ্টা করেন, দেশের বাস্তবতায় পেঁয়াজের উৎপাদন কম। আলু নিয়ে ব্যাখ্যা দেওয়র চেষ্টা করেন। তখন কমিটির সদস্য বলেন, সাধারণ মানুষ তো বাস্তবতা শুনবে না। তারা দেখবে বাজারের কী অবস্থা? পরে মন্ত্রী বলেন, আমাদের আমদানিনির্ভরতা কমাতে হবে। সেলফ সাফিশিয়েন্ট হতে হবে। এ জন্য দুই বছর সময় লাগবে। দুই বছরের মধ্যে সব ঠিক হয়ে যাবে।
বৈঠকে উপস্থিত বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব জানান, বাণিজ্য, কৃষি, খাদ্য, শিল্প ও অর্থ মন্ত্রণালয়কে নিয়ে একটি মন্ত্রণালয় টিম গঠন করা হয়েছে। একটি আন্ত মন্ত্রণালয় বৈঠক করে মাস্টারপ্লান করব। সেখানে উৎপাদন বাড়াতে কী কী করতে হবে? আর যেটা আমদানি করতে হবে, সেটা আগে থেকেই কিভাবে প্লান করা যায়, সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।
সংসদ সচিবালয় থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য আলু পেঁয়াজের বাজার স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে কমপক্ষে পাঁচ-ছয় মাস আগে কোন কোন পণ্যের চাহিদা কত তা নিরূপণ করে দেশের খুচরা, পাইকারি এবং আমদানিকারকদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে ওই সব পণ্য জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার উদ্দেশ্যে আমদানিপূর্বক মজুদ করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। আগামীতে এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে তা মোকাবেলা করার জন্য অর্থ, বাণিজ্য, কৃষি এবং খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী এবং সচিবদের সমন্বয়ে বৈঠক করে সমস্যা চিহ্নিতকরণ এবং তা থেকে উত্তরণের পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বৈঠকে কমিটি সুপারিশ করা হয়েছে।
বৈঠকে বিগত রমজান মাসের মতো আগামী রমজান মাসেও দ্রব্যমূল্য যাতে স্থিতিশীল থাকে সে লক্ষ্যে এখনই ভোক্তাসাধারণের নিত্যপণ্যের চাহিদা পূরণের জন্য (ডাল, তেল, চিনি, ছোলা, খেজুর এবং পেঁয়াজ ইত্যাদি) আগাম কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানানো হয়।
Leave a Reply