গুরুদাসপুর(নাটোর) প্রতিনিধি:নাটোরের গুরুদাসপুরে ‘অনুমোদনহীন’ লিচুর আড়ত বসিয়ে কৃষকদের কাছ থেকে আড়তদারীর নামে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের বেড়গঙ্গারামপুর আড়তদার সমিতির বিরুদ্ধে। এই চাঁদাবাজিবন্ধে কৃষক, আড়তদার ও ব্যবসায়ীদের সাথে মতবিনিময়সভা করেছে জেলা পুলিশ। রোববার দুপুরে স্থানীয় একটি লিচুবাগানে ওই সভা অনুষ্ঠিত হয়।
মতবিনিময়সভায় উপস্থিত লিচু উৎপাদনকারী ও ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, ‘ লিচুকে ঘিরে গড়ে ওঠা ওই লিচুর আড়তে বিক্রেতাকে শতকরা ৮টাকা এবং ব্যবসায়ীদের ৪টাকা করে গুনতে হয় সেখানকার লিচুর আড়দারকে। আড়তদার মালিক সমিতি সিন্ডিকেট করে ওই চাঁদার টাকা আদায় করছেন। এতে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন লিচুচাষি ও ব্যবসায়ীরা। অথচ এই লিচুর হাটটি সরকারিভাবে কোন ইজারাভুক্ত হয়নি।’ তার পরও লিচু থেকে দিনে গড়ে সাড়ে ৭ লাখ এবং ট্রাক থেকে প্রায় ৩ লাখসহ ১০লাখ টাকার চাঁদা আদায় করা হচ্ছে।
অথচ স্থানীয় একটি চক্র সেখানে ২২টি আড়ত খুলে প্রতিদিন প্রায় ৬০ লাখ টাকার লিচু বেচাকেনা করছেন। প্রায় এক মাসস্থায়ী থাকে ওই লিচুর আড়তগুলো। ২০ বছর ধরে সেখানে বানিজ্যিকভাবে লিচু বেচাবিক্রি হয় সেখানে।
গুরুদাসপুর উপজেলা ছাড়াও পাশের সিংড়া, বড়াইগ্রাম ও নাটোর সদর উপজেলার (আংশিক) লিচু উৎপাদনকারি এবং দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা ব্যবসায়ীরা ওই সভায় অংশ গ্রহন করেন।
মতবিনিময়সভায় উপস্থিত সিংড়ার মহিষমারী গ্রামের রেজাউল করিম উপজেলার রশিদপুর গ্রামের জালাল মোল্লা, আনোয়ার হোসেনসহ কমপক্ষে ১০জন লিচুচাষি অভিযোগ করেন, আড়তদারীর নামে শতকরা ৮টাকা এবং মসজিদ ও মাদ্রাসার নামে লিচুর ঝুঁরি প্রতি আরো ৫ টাকা করে চাঁদা নিচ্ছেন আড়তদার সমিতি।
তাছাড়া দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা মানিকগঞ্জের সিদ্ধিকুর রহমানসহ কমপক্ষে ৮জন ব্যবসায়ী অভিযোগ করেন, ‘ তাঁরা নিজেরদের নিরাপত্তা ও লিচু কেনার সুবিধার জন্য আড়তদারদের মাধ্যমে কিনে থাকেন। এজন্য শতকরা ৪ টাকা হারে চাঁদা দিতে হয় আড়তদারদের। একারনে খরচ লিচুর দাম বেশি পড়ে যায় তাঁদের।
স্থানীয় ট্রাক মালিক সমিতির সদস্য দিলমোহাম্মদ অভিযোগ করে বলেন, ‘ লিচু পরিবহনের জন্য সেখানে দিনে কমপক্ষে ৪০-৫০টি ট্রাক দরকার হয় ওই আড়তে। এজন্য ভাড়া ট্রাক প্রতি ৩-৫ হাজার টাকা করে দিতে হয় স্থানীয় একটি চক্রকে।’
লিচুর আড়তগুলোতে চাঁদাবাজি বন্ধ প্রসঙ্গে জেলা পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা বলেন, ‘ আড়তদাররা লিচুচাষি, ব্যবসায়ী ও পরিবহনখাত থেকে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা করে চাঁদা আদায় করছেন। এমন অভিযোগ পুলিশও নিশ্চিত হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা এবং করোনা মহামারীতে সাধারন কৃষক এবং ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষায় এই চাঁদাবাজি বন্ধে থানা পুলিশের উদ্যোগে এইমতবিনিময় সভার আয়োজন করেছে।
উপস্থিতি লিচু আড়তদার মালিক সমিতির সভাপতিকে উদ্দেশ্য করে পলিশ সুপার আরো বলেন, ‘ লিচুর হাটটি সরকারি ইজারাভুক্ত নয়। তারপরও সাধারন লিচু চাষি, ব্যবসায়ী এবং পরিবহন থেকে অবৈধভাবে আড়তদারির নামে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। এই চাঁদাবাজির সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে। এই চাঁদাবাজিবন্ধে সেখানে একটি পুলিশ বুথ করা হবে।’
আড়তদারীর নামে চাঁদাবাজির অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করে আড়তদার সমিতির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন মোল্লা বলেন, ‘ আড়তে কর্মরত শ্রমিক, মসজিদ ও মাদ্রাসার উন্নয়নের শতকরা ৯টাকা হারে আদায় করা হচ্ছে॥ এটা আড়ত টিকিয়ে রাখার স্বার্থে। তবে এখন থেকে সহনীয়ভাবে তা আদায় করা হবে বলে প্রতিশ্রুতিদেন পুলিশ সুপারকে।
জেলা প্রশাসক মো. শাহরিয়াজ মুঠোফোনে বলেন, ‘ কৃষকদের স্বার্থবিবেচনায় এত বছর লিচুর হাটটি ইজরাভুক্ত করা হয়নি। যেহেতু সেখানে চাঁদাবাজি হচ্ছে। সেই পরিস্থিতি বিবেচনায় দ্রুত সময়ে লিচুর হাটটিকে ইজারাভুক্ত করা হবে।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হারুন-অর রশিদ জানান উপজেলায় মোজাফফরপুরী জাতের ৪০০ হেক্টর বোম্বাই ৫ হেক্টর এবং চায়না-৩ জাতের ৫ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয়েছে।#
Leave a Reply