ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার চরাকোনা গ্রামের ত্রাস আজিজুল হক (৪০) গ্রেপ্তারের খবরে এলাকার জনমনে স্বস্তি বিরাজ করছে। স্থানীয় অবসরপ্রাপ্ত বৃদ্ধ শিক্ষক হাবিবুর রহমান (৬৬) ওপর মর্মান্তিক সন্ত্রাসী হামলার মামলায় সোমবার (২৬ এপ্রিল) সকাল ১০ টার দিকে অচিন্তপুর বাজার এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এসময় এ মামলার আরও তিন আসামী হযরত আলী (৫৫), ইসলাম উদ্দিন (৫৪), শহিদ মিয়া (৩৬) কে গ্রেপ্তার করেন গৌরীপুর থানার পুলিশ।
ঈশ্বরগঞ্জ বিশ্বেশরী পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক হাবিবুর রহমানের ছেলে জান্নাতুল ফেরদৌস লিমন (১৮) জানায়, প্রতিবেশী হযরত আলী গংদের সাথে তাদের জমি সংক্রান্ত বিরোধ চলছিল। এর জেরে ২০ এপ্রিল দুপুরে আজিজুল হকের নেতৃত্বে ১৩ জন রামদাসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে অতর্কিতে হামলা চালিয়ে তার বাবাকে মারাত্মক রক্তাত্ব জখম করে। এ সময় হামলাকারীরা বাবার দু’টি হাত ভেঙ্গে দেয়। বর্তমানে বাবা ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে বলে সে জানায়।
লিমন বলেন, এ হামলার ঘটনায় গৌরীপুর থানায় মামলা দায়ের করায় ক্ষিপ্ত হয়ে আজিজুল ও তার লোকজন তাদের বাড়িতে হামলা চালিয়ে মামলা তুলে নেয়ার জন্য হুমকী প্রয়োগ করে। আজিজুল ও তার লোকজন এলাকায় রাম রাজত্ব কায়েম করেছে। তাদের অত্যাচার ও নির্যাতনে গ্রামের মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেছেন। কেউ ভয়ে তাদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে চান না বলে সে জানায়।
স্থানীয় আব্দুর সাত্তার জানান, তার ঘরের পেছনে একটি ঘরে আজিজুল, আব্দুল্লাহ ও বাবুর নেতৃত্বে প্রতি রাতে জুয়া এবং মাদকের আসর বসে। এসময় মাদকসেবীদের উৎপাত ও বকাবকিতে তাদেরকে আতঙ্কিত ভাবে রাত কাটাতে হয়। মাদক সেবনের পাশাপাশি বিভিন্ন মাদক দ্রব্যের ব্যবসা করে থাকেন তারা জানান তিনি।
স্থানীয় লিটন মিয়া জানান তাদের ১০ শতক জমি জোরপূর্বক দখল করে রেখেছে আজিজুল বাহিনীর লোকজন। এছাড়া খালের সরকারি খাস জমি দখল করে তাতে পুকুর খনন করেন আজিজুল।
আবদুল আওয়াল বলেন, জমি সংক্রান্ত ঘটনায় আজিজুল বাহিনীর সদস্য আবু বক্কর ও জুয়েল মিয়া তার ওপর দু’বার আক্রমন করে। ভয়ে তিনি এ ঘটনায় মামলা করেন নি।
স্থানীয় রইছ উদ্দিন জানান, আজিজুল ও তার নেতৃত্বাধীন বাহিনীর সদস্যরা তাদের জমি দখলের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়।
আবদুর রাজ্জাক জানান, তিনি নিজ জমি অন্যত্র বিক্রি করতে চাইলে আজিজুল বাহিনীর সদস্য শওকত চাঁদা দাবি করে। চাঁদা দিতে রাজি না হওয়ায় তাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়া হয়।
স্থানীয় নাম প্রকাশে অনিঅনিচ্ছুক কয়েকজন জানান, এলাকায় দিন দিন কিশোর অপরাধ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আজিজুল হকের নেতৃত্বে এলাকায় সম্প্রতি গড়ে ওঠেছে একটি কিশোর গ্যাং। এ গ্যাংয়ের সদস্য সংখ্যা ৫০ জনের মত। চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, মাদক সেবন, মাদক ব্যবসা, জুয়া, সংঘর্ষ, জমি দখল, অন্যের গাছ কেটে নেয়া এসব বিভিন্ন অপরাধে জড়াচ্ছে কিশোর গ্যাংয়ের এসকল সদস্যরা।
এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে গ্রেপ্তারের পূর্বের দিন স্থানীয় সাংবাদিকরা আজিজুল হকের বাড়িতে গেলে তিনি বাড়িতে থেকেও সাংবাদিকদের সঙ্গে সাক্ষাত করতে অপরাগতা প্রকাশ করেন।
গৌরীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ খান আব্দুল হালিম সিদ্দিকী সাংবাদিকদের জানান, শিক্ষককের ওপর হামলার ঘটনায় মামলায় আজিুল হক, হযরত আলী, ইসলাম উদ্দিন ও শহিদ মিয়াকে সোমবার সকাল ১০ টার দিকে অচিন্তপুর বাজার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য আসামীদের গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে বলে তিনি জানান।
Leave a Reply