ময়মনসিংহের গৌরীপুরে বীরাঙ্গনা সখিনার সমাধিস্থল আর বারো জমিদারের সুনিপুণ কারুকার্যে নির্মিত প্রাচীন ভবন, গোলপুকুর, বৃত্তাকার দ্বীপ, অনন্তসাগর, চিমুরানীর দীঘি, খাজা উসমান খাঁর কেল্লা, নিজাম উদ্দিন আউলিয়া (রহ.) মাজার, দৃষ্টিনন্দন গৌরীপুর রাজেন্দ্র কিশোর উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারি কলেজ, পামবীথি সড়ক, ঐতিহাসিক রামগোপালপুর জমিদারের সিংহ দরজা, যুগলবাড়ী, শান বাঁধানো ঘাট, বোকাইনগরের শাহী মসজিদসহ সবুজ-শ্যামল ছায়া ঘেরা বিলুপ্ত প্রজাতির বৃক্ষরাজিকে এক নজর দেখতে ঘুরে আসুন গৌরীপুর।ময়মনসিংহ ব্রহ্মপুত্র নদের তীর ঘেঁষে গৌরীপুর লজ থেকেই দেখতে শুরু করতে পারেন গৌরীপুরকে।
এরপর ময়মনসিংহ থেকে গৌরীপুরের উদ্দেশে বাসযোগে রওনা হতে ময়মনসিংহ ব্রিজ থেকে বাসে চড়–ন বা ময়মনসিংহ রেলস্টেশন থেকে ট্রেনেও আসতে পারেন। রামগোপালপুর পাওয়ারী জগেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরীর রঙিন কাচের প্রাসাদ, কৃষ্ণমন্দির ও প্রাসাদের সুড়ঙ্গপথ আপনাকে মুগ্ধ করবে। একটু এগিয়েই দেখতে পাবেন ঐতিহাসিক সিংহ দরজা। তখন ডানে-বামে, সামনে-পেছনে শান বাঁধানো পুকুর ঘাট আর শতবর্ষী দুটি গাছ দেখে চোখ জুড়িয়ে যাবে।এরপরেই ভবানীপুরের জমিদার জ্যোতিষ চন্দীর পুকুরের উপরে রানী øান করতেন। রহস্যজনক পুকুরটি আজ বিলীন।
তবে এর চিহ্নটুকু দেখে এগিয়ে চলুন বোকাইনগর খাজা উসমান খাঁর কেল্লা, সম্রাট আলমগীরের আমলে নির্মিত শাহী মসজিদ আর হজরত নিজাম উদ্দিন আউলিয়া (রহ.) মাজার দেখতে। শাহ মারুফ (রহ.) মাজার ও কালীবাড়ির প্রাচীন মঠ আপনাকে আকৃষ্ট করবে। এরপরেই চলে যেতে পারেন বীরাঙ্গনা সখিনার সমাধিস্থল মাওহা ইউনিয়নের কুমড়ি গ্রামে। সখিনার সমাধিস্থলে যেখানে কুন্দকুসুম গাছগুলো এখনো ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে টিকে আছে। এগাছগুলো বীরাঙ্গনা সখিনার স্বামী ফিরোজ খাঁর হাতে রোপিত বলে অনেকের মতবাদ। বীরাঙ্গনা সখিনার সমাধিস্থলে তোরণের পূর্বপাশে সংক্ষিপ্ত ইতিহাসটুকুতে চোখ বুলিয়ে নিতে পারেন। একটু এগিয়েই দেখুন তাজপুরের কেল্লা, চিমুরানীর দীঘিÑ যার অস্তিত্ব শুধু এখন বিশালাকার সবুজ ধান ক্ষেত। কালের আবর্তে এটিও চলে গেছে ব্যক্তিমালিকানায়।আবারও পথচলা গৌরীপুরের শহরের ঐতিহ্যবাহী সরকারি কলেজ যেখানে দেখতে পাবেন কৃষ্টপুরের জমিদার সুরেন্দ্র প্রাসাদ লাহিড়ীর দৃষ্টিনন্দন বাড়ির ভবন, পূজা মন্দির। একটু এগিয়েই দেখতে পাবেন ফরাসি স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত জমিদার ধীরেন্দ্র কান্ত লাহিড়ীর এক গম্বুজের সুদৃশ্য টিনের গোলঘরটি যা প্রাচীন ইতিহাসকে মনে করিয়ে দেবে।
আর এ ঘরের সামনেই সুবিশাল পুকুরের স্বচ্ছ পানি সুবজ ছায়া ঘেরা আর দক্ষিণা বাতাস আপনাকে হয়তো বসতে বলবে। তবে এখানে বর্তমানে পুলিশের এএসপি সার্কেল ও সহকারী কমিশনারের কার্যালয় থাকায় আপনার নিরাপত্তায় ত্র“টি হবে না। এর একটু সামনেই বাগানবাড়ি দুর্গা মন্দিরের সঙ্গে কৃষ্ণমন্দির ঘুরে আসতে পারেন। এরপরেই চলে যেতে পারেন গৌরীপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের পেছনের অংশে। বিশাল আকৃতির এক গম্বুজের জোড়া ভগ্ন শিব মন্দির ও কালী মন্দিরের ঐতিহাসিক কাঠামো দেখার জন্য। পাশেই গৌরীপুর থানা যেখানে রয়েছে বিরল প্রজাতির বৃক্ষরাজি।
চলে যেতে পারেন সুউচ্চ পামগাছের সারি, জোড়াপুকুরের ঘাট, গোলপুকুর, বৃত্তাকার দ্বীপ ও জোড়া আমগাছ। একনজর দেখতে পারেন উপজেলা পরিষদের ভেতরে দেয়াল ঘেঁষে একটি পরগাছা বট কিভাবে একটি পাম গাছকে গলা টিপে হত্যা করেছে। যা আপনাকে ভাবিয়ে তুলতে পারে। দ্বীপ ঘেঁষা একটি গাছ যাকে বৃক্ষপ্রেমিক বা গবেষণাবিদরা এখনও নাম বলতে পারে, সেই অচিন বৃক্ষটি দেখুন।জমিদার ব্রজেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরীর নিজ বাড়িতে বর্তমানে মহিলা ডিগ্রি কলেজ, গৌরীপুর প্রেস ক্লাব, নাট্য মন্দিরের সঙ্গে চোখ বুলিয়ে নিতে পারেন প্রাচীন দুর্গামন্দিরটিকে। তবে প্রেস ক্লাবের ভবনের সামনে ছবি তোলার জন্য ক্যামেরা প্রস্তুত রাখুন। কেন না প্রেস ক্লাবের ভবনটি জমিদারের শাসন আমলের রঙে আবারও সেজেছে।সুউচ্চ পামগাছের সারির শেষ প্রান্তে দেখে যেতে পারেন জমিদারের নাট্যমঞ্চটি। যা বর্তমানে ঝলমল সিনেমা হল। জমিদার ব্রজেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরী তার পিতা রাজেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরীর নামে প্রতিষ্ঠা করেন রাজেন্দ্র কিশোর উচ্চ বিদ্যালয়। ইংরেজি ই-আকৃতির লাল রঙের সুনিপুণ কারুকার্যে নির্মিত ভবনের সামনে ব্রজেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরীর স্ত্রীর প্রেম স্মৃতিকে অমর করে রাখতে অনন্তসাগর নামে একটি বৃহৎ পুকুর খনন করেন।
এছাড়াও গৌরীপুর পৌর শহরের প্রথম মসজিদ পূর্বদাপুনিয়া জামে মসজিদ ও গুজিখাঁ গ্রামে অবস্থিত কেরামতিয়া মসজিদটিও দেখে যেতে পারেন।কিভাবে আসবেন : ঢাকা থেকে সরাসরি গৌরীপুরের উদ্দেশে মহাখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে বাস ছাড়ে সকাল ১১টায়, দুপুর ২টা ও বিকাল ৫টায়। এছাড়াও আপনি ময়মনসিংহ পর্যন্ত যেকোন যানবাহনে এসে ব্রহ্মপুত্র ব্রিজের সন্নিকটে বাসস্ট্যান্ড থেকে বাস যোগে গৌরীপুর আসতে পারেন। গেট লক ভাড়া ২০ টাকা, লোকাল বাসের ভাড়া ১৮ টাকা। ময়মনসিংহ রেলস্টেশন থেকে ট্রেনেও আসতে পারেন। ভাড়া মাত্র ৬ টাকা। চট্টগ্রাম থেকে নাসিরাবাদ ট্রেন ছাড়ে বিকাল ৪টায়।
কোথায় থাকবেন : উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সঙ্গে যোগাযোগ করলে ডাকবাংলো, পৌর মেয়রের সঙ্গে যোগাযোগ করলে পৌর অতিথিশালায় থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। মধ্যবাজারস্থ হোটেল রাজগৌরীপুর, রেলওয়ে স্টেশনে হোটেল সানি বর্ডিংয়েও থাকতে পারেন।
Leave a Reply