পৃথিবীতে কেউ জন্মায় ধনীর ঘরে, কেউবা গরীবের ঘরে। আবার নিয়তি কাকে কোথায় নিয়ে যায় কেউ-ই বলতে পারে না। জীবিকার তাগিদে সবকিছুই মেনে নিতে হয়। বেঁচে থাকার জন্য মানুষ বিভিন্ন কর্ম বেছে নেয়, মাথা গোঁজার ঠাঁই খুঁজে বেড়ায়। মানুষ বিভিন্ন আশা নিয়ে স্বপ্ন দেখে, কিন্তু সব আশা পূরণ হয় না। তেমনি এক দম্পতির সন্ধান পাওয়া গেছে বোয়ালমারীর পাবলিক টয়লেটে ঘরে। সরেজমিনে দেখা গেছে, ফরিদপুরের বোয়ালমারী পৌর সদর বাজারের টিনপট্টি এলাকায় গণশৌচাগারে দিনযাপন করছেন শাহাদাত হোসেন ও তার স্ত্রী নারগিস বেগম।
শাহাদত হোসেন জানান, তার বাড়ি মাগুরার মোহাম্মদপুর উপজেলার পাচুড়িয়া গ্রামে। কিন্তু জন্মের সময় মাকে আর ৬ বছরে বাবাকে হারিয়ে আজ বোয়ালমারী উপজেলায় থাকছি। তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে এ প্রতিবেদককে বলেন, পৈত্রিক সম্পদ বলে কিছু নেই। নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে সব। জীবিকার তাগিদে বোয়ালমারীতে চলে এসেছেন। সেই সময় থেকে কাগজ কুড়িয়ে জীবন চালিয়ে নিচ্ছেন। এইভাবে জীবনের অনেক বছর পার করেছেন। তারপর জীবনসঙ্গী হিসাবে স্ত্রী নার্গিসের হাত ধরে বেঁচে আছেন।
তিনি বলেন, জীবনের পরিবর্তন করতে পারি নাই। এর মধ্যে বোয়ালমারী পৌরসভার মেয়র মোজাফফর হোসেন বাবলু মিয়ার সাথে পরিচয় হয়। তিনি আমাকে মাস্টার রোলে দৈনিক ১৬০ টাকা বেতনে বাজারে ঝাড়ুদারের চাকরি দেন এবং বোয়ালমারী হ্যালিপোর্টে সরকারি জায়গায় থাকার ব্যবস্থা করেন। কিন্তু আমার ও আমার স্ত্রীর আজ বোয়ালমারি পাবলিক টয়লেট থাকার স্থান হয়েছে। দৈনিক বাজার ঝাড়ুর কাজ করার পর মানুষের বাড়িতে কাজ করে যা পাই তাই খাই। আবার কিনেও খাবার খাই। অনেক সময় না খেয়েও দিন পার করি। যদি সরকারি বা বেসরকারি কোনো সংগঠন আমাদের থাকার ব্যবস্থা করে দিত, তবে জীবনের শেষ দিনগুলো শান্তিতে থাকতে পারতাম। অনেকেই আসে খোঁজখবর নিয়ে যায়। কিন্তু ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয় না। আমার এক শতাংশ জমিও নেই, যেখানে আমরা একটা ঘর করে স্বামী-স্ত্রী বসবাস করবো।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে শৌচাগারের পাশের হোটেল ব্যবসায়ী আব্দুর রহমানের সাথে কথা বলে যানা যায়, শাহাদত ও নার্গিস নামে স্বামী-স্ত্রী প্রায় দুই বছর যাবত এখানে বসবাস করে। জর্জ একাডেমি স্কুলে খণ্ডকালীন কাজের তাগিদে আপাতত তারা ওই স্কুলে থাকেন।
Leave a Reply