কঠিন কিয়ামতের ময়দানে মানুষ যখন সুপারিশের জন্য নবীদের কাছে যাবেন তখন তাঁরা একে অপরের কাছে পাঠিয়ে দেবেন। কেউ তখন সুপারিশ করতে সম্মতি প্রকাশ করবেন না। কঠিন সেই মুহূর্তে আমাদের প্রিয় নবীই থাকবেন একমাত্র ভরসাস্থল। তিনি সিজদায় পড়ে আল্লাহর কাছে সুপারিশের অনুমতি নিয়ে উম্মতের জন্য সুপারিশ করবেন। হাদিসের এক বর্ণনায় এসেছে, ‘আমিই হব সর্বপ্রথম সুপারিশকারী এবং সর্বাগ্রে আমার সুপারিশ কবুল করা হবে।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪৩০৮)
তবে নবীজির এই সুপারিশ পেতে হলে শরিয়ত কর্তৃক নির্ধারিত বিধান পালনের পাশাপাশি বেশ কিছু আমলের ওপর আমাদের সচেষ্ট হতে হবে।
নিম্নে প্রিয় নবীজির সুপারিশ লাভের কয়েকটি আমল তুলে ধরা হলো—
একত্ববাদের স্বীকারোক্তি দেওয়া
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, একবার আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে প্রশ্ন করা হলো, হে আল্লাহর রাসুল! কিয়ামতের দিন আপনার সুপারিশ লাভের ব্যাপারে কে সবচেয়ে অধিক সৌভাগ্যবান হবে? আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, আবু হুরায়রা! আমি মনে করেছিলাম, এ বিষয়ে তোমার আগে আমাকে আর কেউ জিজ্ঞেস করবে না। কেননা আমি দেখেছি হাদিসের প্রতি তোমার বিশেষ আকর্ষণ রয়েছে। কিয়ামতের দিন আমার শাফায়াত লাভের সবচেয়ে সৌভাগ্যবান হবে সেই ব্যক্তি যে একনিষ্ঠ চিত্তে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলে আল্লাহ তাআলার একত্ববাদের স্বীকারোক্তি দেবে। (বুখারি, হাদিস : ৯৯)
আজান শেষে দোয়া পাঠ করা
প্রিয় নবীজির সুপারিশ লাভের গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি আমল হচ্ছে, আজান শেষে হাদিসে বর্ণিত দোয়া পাঠ করা। সাহাবি জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আজান শুনে এই দোয়া করে, উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা রব্বা হাজিহিদ দাওয়াতিত তাম্মাহ, ওয়াস সালাতিল ক্বা-ইমাহ, আ-তি মুহাম্মাদানিল ওয়াসিলাতা ওয়াল ফাদিলাহ, ওয়াবআছহু মাক্বামাম মাহমুদানিল্লাজি ওয়াআদতাহ।’
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! এ পরিপূর্ণ আহ্বান ও প্রতিষ্ঠিত নামাজের মালিক, মুহাম্মদ (সা.)-কে ওয়াসিলা ও সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী করুন এবং তাঁকে সেই মাকামে মাহমুদে পৌঁছে দিন, যার অঙ্গীকার আপনি করেছেন।’ কিয়ামতের দিন সে আমার শাফায়াত লাভের অধিকারী হবে। (বুখারি, হাদিস : ৬১৪)
মদিনার অধিবাসী হওয়া
আবু সাঈদ মাওলা আল মাহরি (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি গরমকালের রাতগুলোতে আবু সাঈদ খুদরি (রা.)-এর কাছে এলেন এবং মদিনা থেকে কোথাও চলে যাওয়ার পরামর্শ করলেন। তিনি তাঁর কাছে এখানকার দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও নিজের বৃহৎ পরিবারের অভিযোগ করলেন। তিনি তাঁকে আরো জানালেন যে তিনি এখানকার ক্লেশ ও বৈরী আবহাওয়া বরদাশত করতে পারছেন না। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) তাঁকে বলেন, তোমার জন্য দুঃখ হয়, আমি তোমাকে মদিনা ত্যাগের পরামর্শ দিতে পারি না। কারণ আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি এখানকার কষ্ট সহ্য করে মৃত্যুবরণ করবে, কিয়ামতের দিন অবশ্যই আমি তার জন্য সুপারিশ করব অথবা সাক্ষী হব, যদি সে মুসলিম হয়ে থাকে। (মুসলিম, হাদিস : ৩২৩০)
বেশি বেশি নফল নামাজ পড়া
মুসনাদে আহমদের এক বর্ণনায় এসেছে, একবার আল্লাহর রাসুল তাঁর খাদেমকে বলেন, আমার কাছে কি তোমার কিছু চাওয়ার আছে? তখন খাদেম বলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমার একমাত্র চাওয়া হচ্ছে আপনি কিয়ামতের দিন আমার জন্য সুপারিশ করবেন! তখন নবীজি (সা.) বলেন, আমি কি তোমাকে বলে দেব কিভাবে তুমি আমার সুপারিশ লাভ করতে পারবে? জবাবে বলেন, জি, হে আল্লাহর রাসুল! সে সম্পর্কে আমাকে একটু বলুন। নবীজি (সা.) বলেন, বেশি বেশি নামাজ পড়ো। এর মাধ্যমে কিয়ামতের দিন তুমি আমার সুপারিশ লাভ করবে। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ১৬০৭৬) (মুসলিম, হাদিস : ২০৮৭) আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে প্রিয় নবীর সুপারিশ লাভ করার তাওফিক দান করুন।
Leave a Reply