ময়মনসিংহ প্রতিনিধিঃ
ময়মনসিংহের নান্দাইলে ২০০৪ সালের ৫ মে আচারগাঁও হাই স্কুল কেন্দ্রে পৌর নির্বাচনে ভোট গ্রহন চলাকালে গুলিতে ২ জন নিহতের ঘটনায় দীর্ঘ ২০ বছর ৬ মাস তিন দিন আইনী লড়াই শেষে ডাবল মার্ডার মামলায় সাবেক আলোচিত পুলিশ সুপার কোহিনূর মিয়া ও সাবেক পৌর মেয়র আব্দুস ছাত্তার ভুইয়া উজ্জ্বলকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন।
মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) বিকালে আদালত ময়মনসিংহ জেলা অতিরিক্ত দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতের বিচারক সাবরিনা আলী অভিযোগ প্রমানিত না হওয়ায় তাদের বেকসুর খালাস দিয়েছেন।
আদালত পরিদর্শক (ওসি) পিএসএম মোস্তাছিনুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, দীর্ঘ ২০ বছর ৬ মাস ৩ দিন চলাকালে আদালত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ ২২ জনের সাক্ষ্য গ্রহন করে অভিযোগ প্রমানিত না হওয়ায় সাবেক আলোচিত পুলিশ সুপার কোহিনুর মিয়া ও পৌর মেয়র প্রার্থী আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়া উজ্জ্বলকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন।
মামলার বিবরনে জানা যায়, ময়মনসিংহের নান্দাইলে ২০০৪ সালের ৫ মে আচারগাঁও হাই স্কুল কেন্দ্রে পৌর নির্বাচনে ভোট চলাকালে দু-পক্ষের সংর্ঘষে গুলিতে সুজন ও আবু তাহের নামে ২ জন মারা যায়। এই ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামী করে নান্দাইল থানায় মামলা দায়ের করে।
পুলিশ মামলাটি কয়েক দফা তদন্ত শেষে আসামী শনাক্ত না হওয়ায় প্রথম ৩১ আগস্ট ২০০৪, দ্বিতীয় ১৯ ডিসেম্বর ২০০৪ ও সর্বশেষ ২২ ডিসেম্বর ২০০৪ সালে মোট তিনবার চুড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে।
নান্দাইল পৌরসভার নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থী আওয়ামীলীগ নেতা রফিক উদ্দিন ভুইয়া নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে হেরে যাওয়ায় ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায় সরকার আসার পর পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী আওয়ামীলীগ নেতা রফিক উদ্দিন ভুইয়া নান্দাইলের সাবেক এমপি খুররম খান চৌধুরী, সাবেক পুলিশ সুপার কোহিনুর মিয়া ও পৌর মেয়র আব্দুস ছাত্তার ভুইয়া উজ্জ্বলসহ ৬ জনের নামে দুই বছর ১১ মাস পর ২৫ মার্চ ২০০৭ সালে আদালতে পুনরায় মামলা দায়ের করে।
আদালতের নির্দেশে নান্দাইল থানার উপ-পরিদর্শক জসিম উদ্দিন মামলা পুনরায় তদন্ত করে প্রমান না হওয়ায় ৯ সেপ্টেম্বর ২০০৭ সালে তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করেন। পরে ১০ নভেম্বর ২০০৭ তারিখে ভিকটিম সুজনের পিতা ও তাহেরের স্ত্রীর আবেদনের প্রেক্ষিতে ২৭ সেপ্টেম্বর ২০০৭ আদালত চুড়ান্ত রিপোর্ট গ্রহন করেন।
তদন্ত রিপোর্টের বিরুদ্ধে আওয়ামীলীগ নেতা রফিক উদ্দিন ভুইয়া নারাজি দিয়ে ১৮ মার্চ ২০০৮ সালে জেলা জজ আদালতে ২২৯/০৭ রিভিশন দায়ের করেন। পরবর্তীতে জেলা জজ আদালতের বিচারক মামলাটি সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দেন।
সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার ইসমাইল হোসেন ৩ জুলাই ১১ সালে এসপি কোহিনুর মিয়া ও নান্দাইল পৌর সভার মেয়র আব্দুস ছাত্তার ভুইয়া উজ্জ্বলের নামে আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অভিযোগ পত্র দাখিল করেন।
মামলাটি দীর্ঘ ২০ বছর ৬ মাস ৩ দিন চলাকালে আদালত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ ২২ জনের সাক্ষ্য গ্রহন করেন। আদালত অভিযোগ প্রমানিত না হওয়ায় সাবেক আলোচিত পুলিশ সুপার কোহিনুর মিয়া ও পৌর মেয়র প্রার্থী আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়া উজ্জ্বলকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন।
মামলায় আসামী পক্ষে অ্যাড. এএইচএম খালেকুজ্জামান, অ্যাড. আতাউর রহমান মুকুল ও অ্যাড. এমএ হানান্ন খান এবং রাষ্ট্র পক্ষে আইনজীবি অ্যাড. আনোয়ার আজিজ টুটুল কৌশলী ছিলেন।
মামলার রায়ের দিন নান্দাইলের সাবেক পৌর মেয়র আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়া উজ্জ্বল রায় শুনে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, দীর্ঘ বিশ বছর পর আদালতের কাছে ন্যায় বিচার পেয়েছি। অপর আসামী এসপি কোহিনুর মিয়া পলাতক থাকায় আদালতে হাজির হননি।
Leave a Reply