শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল পরীক্ষা স্থগিতের ঘোষণায় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা নেয়ার দাবিতে প্রশাসনিক ভবনে তালা লাগিয়ে আন্দোলন কর্মসূচি পালন করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থানরত সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জয় বাংলা ভাস্কর্যের সামনে ‘দ্রুত পরীক্ষা চাই পরীক্ষা ছাড়া উপায় নাই’ লেখা সম্বলিত বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে কর্মকর্তা কর্মচারীদের অবরুদ্ধ করে তালা লাগিয়ে দেয়। দিনব্যাপী বিক্ষোভের পর বিশ্বদ্যিালয়ের ভিসি অনুপস্থিত থাকায় প্রক্টর শিক্ষার্থীদের আলোচনার আশ্বাস দিলে আন্দোলন রবিবার পর্যন্ত স্থগিত করে শিক্ষার্থীরা।
জানা যায়, গত বছরের মার্চে সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাম্পাস বন্ধ করে দেয় প্রশাসন। ডিসেম্বর মাসে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে গত বছরের ১২ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের জরুরি একাডেমিক কাউন্সিল সভা ডেকে সকল বিভাগের অনার্স ও মাস্টার্স পর্যায়ে শেষ বর্ষের পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সকল বিভাগের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলেও হলগুলো না খুলে দেওয়ায় বিপাকে পরে শিক্ষার্থীরা। দীর্ঘ সময় বন্ধ আর লগডাউনের কারণে অনেকেই মেস ছেড়ে বাড়িতে চলে যাওয়ায় পরীক্ষার জন্য থাকার ব্যবস্থা হিসেবে নতুন করে মেছ ভাড়াও দুঃসাধ্য হয়ে যায় অনেক শিক্ষার্থীর। বাধ্য হয়ে অনেক শিক্ষার্থী তাদের ক্লাসমেটের রুম শেয়ার করে পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে আসছিল। ইতিমধ্যে অনেক বিভাগের শেষ সেমিস্টারের পরীক্ষাগুলো শেষ হলেও অনেক বিভাগের দু-একটা পরীক্ষা ও অন্যান্য বিভাগের ব্যবহারিক পরীক্ষা বাকী রয়েছে। এরই মধ্যে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে বিকেলে জরুরি একাডেমিক কাউন্সিলের সভা আহ্বান করে সকল পরীক্ষা, ক্লাস স্থগিত করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। প্রসাশনের এ ধরনের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আন্দোলন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থারত শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীরা জানান, করোনার কারণে চলতি বছরের ১৮ মার্চ দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার কারণে সকল বিভাগে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা আটকে রয়েছে। এমতাবস্থায় পূর্বে থেকে চলে আসা দীর্ঘ সেশনজটের কারণে অনেক শিক্ষার্থীর ভবিষ্যত অনিশ্চিয়তার দিকে যাচ্ছে। সম্প্রতি বিসিএসসহ বেশকিছু সরকারি, বেসরকারি নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হলেও তাতে আবেদন করতে পারছেন না শিক্ষার্থীরা। সম্পূর্ণ অযৌক্তিকভাবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক পরীক্ষা বন্ধের সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে পরীক্ষা বন্ধের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসা ও এমন অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত পুনঃবিবেচনার জন্য জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও একাডেমিক কাউন্সিলের প্রতি আহ্বান জানান তারা।
অন্যথায় আরো কঠোর আন্দোলন ও আগামী রবিবার থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ আমরণ অনশনের জন্য অবস্থান নেবে শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষার্থীরা আরো বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমরা পরীক্ষায় অংশ নিতে চাই। ক্যাম্পাস কিংবা হল কোনোটায় খোলার প্রয়োজন নাই, সকল বিভাগের পরীক্ষা চাই।
এ সময় প্রক্টর ড. উজ্জ্বল কুমার প্রধান ও কলা অনুষদের ডিন ড. আহমেদুল বারীর আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা শনিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৫টা পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত করেন। এর মাঝে পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত না আসলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. উজ্জল কুমার প্রধান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি মহোদয় ক্যাম্পাসে উপস্থিত না থাকায় আমরা কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারছি না। আগামী রবিবার ভিসি স্যার আসলে আমরা শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের ওপর আস্থা রেখে শিক্ষার্থীদের ধৈর্য ধরার আহ্বান জানান তিনি।
Leave a Reply