ইতিহাস ও ঐতিহ্যের তীর্থভূমি সিলেট। অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর দুটি পাতা একটি কুঁড়ির দেশ সিলেট। বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বে অবস্থিত এই প্রাচীন জনপদ বনজ, খনিজ ও মৎস্য সম্পদে ভরপুর এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ছাড়াও সিলেটের রয়েছে প্রসিদ্ধ ইতিহাস। সিলেটে বসবাসকারী বিভিন্ন আদিবাসীর রয়েছে ভিন্ন ভাষা ও সংস্কৃতি। চা বাগান, জাফলং, রাতারগুল জলাবন, হাকালুকি হাওর, লালাখাল, ভোলাগঞ্জ, বিছনাকান্দি, তামাবিল, পাহাড়, ঝরনা পর্যটকদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এ জেলা নিয়ে আজকের প্রতিবেদন-
হজরত শাহজালাল (র.) মাজার
৩৬০ আউলিয়ার সিলেট নগরী পুণ্যভূমি হিসাবে খ্যাত। সিলেটের মাটিতে যেসব পীর, দরবেশ শায়িত আছেন এদের মধ্যে হজরত শাহজালাল (র.) অন্যতম, এজন্য তাকে ওলিকুল শিরোমণি বলা হয়। হজরত শাহ জালাল (র.) সব ধর্মের মানুষের কাছে সমাদৃত ছিলেন। তাই প্রতি বছর হজরত শাহজালাল (র.) মাজার জিয়ারতে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানুষের ঢল দেখা যায়। হজরত শাহজালাল (র.) এর মাজারের উত্তরদিকে একটি পুকুর রয়েছে। এ পুকুরের শোভাবর্ধন করে আছে অসংখ্য গজার মাছ। কথিত আছে হজরত শাহজালাল (র.) ৩৬০ আউলিয়া নিয়ে সিলেট আসার সময় এ মাছ নিয়ে এসেছিলেন। এসব মাছকে দর্শনার্থীরা খাবার খেতে দেন, এসব মাছ পুকুরে ভেসে বেড়ানো পর্যটকদের অনেক আনন্দ দেয়। শাহজালাল (র.) এর মাজারের পাশেই একটি কূপ রয়েছে। এই কূপে সোনালি ও রুপালি রঙের মাছ দেখা যায়।
বিছনাকান্দি
বিছনাকান্দি (Bisnakandi) সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার রুস্তমপুর ইউনিয়নে অবস্থিত। বিছনাকান্দি হচ্ছে একটি পাথর কোয়ারী। এরকম আরেকটি পাথর কোয়ারী হল জাফলং। অবশ্য অনিয়ন্ত্রিত পাথর উত্তোলনের ফলে জাফলং এর সৌন্দর্য আজ নষ্টের পথে কিন্তু বিছনাকান্দি তার যৌবন ধরে রেখেছে। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের খাসিয়া পাহাড়ের অনেকগুলো ধাপ দুই পাশ থেকে এসে এক বিন্দুতে মিলেছে আর পাহাড়ের খাঁজে রয়েছে ভারতে মেঘালয়ের সুউচ্চ ঝরনা। পর্যটকদের কাছে বিছনাকান্দির মূল আকর্ষণ হচ্ছে পাথরের ওপর দিয়ে বয়ে চলা স্বচ্ছ জলধারা আর পাহাড়ে পাহাড়ে শুভ্র মেঘের উড়াউড়ি। প্রথম দেখায় আপনার মনে হবে এ যেন এক পাথরের বিছানা, আর স্বচ্ছ পানিতে গা এলিয়ে দিতেই যে মানসিক প্রশান্তি পাবেন এই প্রশান্তি আপনাকে বিছনাকান্দি টেনে নিয়ে যাবে বারবার। এ যেন পাহাড়, নদী, ঝরনা আর পাথর মিলিয়ে প্রাকৃতিক মায়াজাল বিছিয়ে রেখেছে বিছনাকান্দি।
ভোলাগঞ্জ
ভোলাগঞ্জ সিলেট জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলা কোম্পানিগঞ্জে অবস্থিত। ভোলাগঞ্জের আরেক পাশে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের উঁচু উঁচু পাহাড়। সেই পাহাড় থেকে নেমে আসা ঝরনার পানির প্রবাহ ধলাই নদের উৎস। সবুজ পাহাড়, মেঘের হাতছানি আর বর্ষার পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে নেমে আসা সাদা পাথর ধলাই নদের বুকে মিলেমিশে সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণ। এই নদের উৎস মুখের পাথরের জায়গাটুকু ভোলাগঞ্জ জিরো পয়েন্ট বা “সাদা পাথর” নামে পরিচিত। অনেকের মতে সাদা পাথর বিছনাকান্দির চেয়েও সুন্দর। সাদা পাথর এলাকা ছাড়াও কাছেই রয়েছে উৎমাছড়া, তুরুংছড়ার মত সুন্দর স্থান। এইসব কিছু মিলে ভোলাগঞ্জ এখন আকর্ষণীয় এক পর্যটন স্থান। ভোলাগঞ্জ যাওয়ার সবচেয়ে ভালো সময় হচ্ছে বর্ষাকাল ও তার পরবর্তী কিছু মাস অর্থাৎ জুন থেকে সেপ্টেম্বর এই সময় যাওয়ার জন্যে সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। অন্যসময় গেলে সেখানে পাথরের সৌন্দর্য দেখতে পেলেও নদীতে বা ছড়ায় পানির পরিমাণ কম থাকবে।
জাফলং
জাফলং (Jaflong) প্রকৃতির কন্যা হিসাবে পরিচিত। সিলেট জেলার দর্শনীয় স্থান গুলোর মধ্যে জাফলং সবার পছন্দ। সিলেট এর গোয়াইনঘাট উপজেলার ভারতের মেঘালয় সীমান্ত ঘেঁষা প্রকৃতির দানে রূপের পসরা সাজিয়ে আছে জাফলং। সিলেট থেকে জাফলং এর দূরত্ব মাত্র ৬২ কিলোমিটার। পিয়াইন নদীর স্বচ্ছ পানির ধারা, ঝুলন্ত ডাউকি ব্রিজ, উঁচু উঁচু পাহাড়ে সাদা মেঘের খেলা জাফলংকে করেছে অনন্য। একেক ঋতুতে জাফলং একেক রকম রূপের প্রকাশ ঘটায় যা পর্যটকদেরকে ভ্রমণের জন্য সারা বছরই আগ্রহী করে রাখে।
লাক্কাতুরা চা বাগান
লাক্কাতুরা চা বাগান সিলেট জেলার চৌকিঢেঁকি উপজেলায় ওসমানী বিমানবন্দরের নিকটে অবস্থিত। সিলেট শহরের উত্তরপ্রান্ত ঘিরে রাখা সবুজ বনানীই হলো লাক্কাতুরা চা বাগান। এটি ন্যাশনাল টি বোর্ড অধীনস্থ একটি সরকারি চা বাগান । ১২৯৩ হেক্টর বা প্রায় ৩২০০ একর জুড়ে এর অবস্থান। সিলেটের আম্বরখানা পয়েন্ট থেকে এয়ারপোর্টের দিকে ১.৫ কিলো এগিয়ে শহরের প্রান্ত ছুঁলেই আপনার চোখে পড়বে লাক্কাতুরা চা বাগানের সাইনবোর্ড। বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ এই চা বাগান থেকে বছরে প্রায় ৫০০০০০ কেজি চা উৎপাদিত হয়ে থাকে। এয়ারপোর্ট রোড থেকে ডানদিকে বাগানের মূল ফটক। ফটক দিয়ে ঢুকেই বামদিকে পড়বে চা ফ্যাক্টরি এবং রাবার ফ্যাক্টরি। লাক্কাতুরা চা বাগান হলেও এর দুটি আউটপোস্ট দলদলি আর কেওয়াছড়ায় রাবার বাগান সৃজিত হয়েছে। ফ্যাক্টরি ফেলে সামনে এগিয়ে গেলে দেখবেন কিছুক্ষণ পরপর উঁচু টিলার ওপর দিয়ে আঁকাবাঁকা রাস্তা উঠে গেছে। এগুলো বাগানের ম্যানেজার এবং সহকারী ম্যানেজারদের বাংলো। ফ্যাক্টরি এবং বাংলোতে যেতে চাইলে কর্তৃপক্ষ থেকে আগেই অনুমতি নিতে হবে। আর শুধু বাগানে ঘুরতে চাইলে মূল ফটকে গার্ডকে একটু অনুরোধ করলেই ভিতরে যেতে দেয়।
লোভাছড়া
সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার উত্তর-পূর্ব সীমান্ত ঘেঁষা খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে স্বচ্ছ পানির নদী হচ্ছে লোভাছড়া। সবুজ পাহাড় আর লোভাছড়ার স্বচ্ছ পানি এখানকার পরিবেশকে দিয়েছে ভিন্নমাত্রা। সঙ্গে রয়েছে ব্রিটিশ আমলে চালু হওয়া লোভাছড়া চা বাগান, ১৯২৫ সালে নির্মিত পুরনো ঝুলন্ত সেতু ও খাসিয়া গ্রাম। পাহাড়, নদী ও নীল আকাশের অপূর্ব মায়াজালে প্রাকৃতিকে এক নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপহার দিয়েছে রূপে অনন্যা লোভাছড়া। সকালে লোভাছড়া চা বাগানে খরগোশ, হরিণ ও বন মোরগ দেখা যায়। এ ছাড়া লোভাছড়া নদীতে শ্রমিকদের পাথর উত্তোলন করার কর্মতৎপরতা চোখে পড়ার মত। চা বাগান ও ঝুলন্ত সেতু ছাড়া লোভাছড়ায় আরো রয়েছে প্রাকৃতিক লেক ও ঝরনা, খাসিয়া পল্লী, মীরাপিং শাহর মাজার, মোঘল রাজা-রানির পুরাকীর্তি, প্রাচীন দীঘি, পাথর কোয়ারী ও বন বিভাগের সামাজিক বনায়ন।
তামাবিল
সবুজ পাহাড় আর টিলায় ঘেরা সিলেট জেলা প্রকৃতির রূপে অনন্য। সিলেটের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সিলেটকে সুন্দরী শ্রীভূমি আখ্যা দিয়েছিলেন। সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলায় অবস্থিত বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত তেমনি এক স্থানের নাম তামাবিল (Tamabil)। সিলেট-জাফলং রোড ধরে এগিয়ে যেতে থাকলে জাফলংয়ের ৫ কিলোমিটার পূর্বে তামাবিলের দেখা মিলবে। সিলেট জেলা থেকে তামাবিলের দূরত্ব প্রায় ৫৫ কিলোমিটার। তামাবিল মূলত বাংলাদেশের সিলেট এবং ভারতের শিলং মধ্যকার সীমান্ত সড়কের একটি চৌকি। তামাবিল থেকে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পাহাড়, ঝরনা সহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান দেখা যায়। তাই অপূর্ব প্রাকৃতিক দৃশ্যে বিমোহিত হতে প্রচুর দর্শনার্থী তামাবিল ঘুরতে আসেন।
সংগ্রামপুঞ্জি ঝরনা
সংগ্রামপুঞ্জি ঝরনার অন্য নাম মায়াবী ঝরনা। ভারতের সীমান্তে অবস্থিত এ মায়াবী ঝরনাটিতে জাফলং জিরো পয়েন্ট থেকে যেতে মাত্র ১৫ থেকে ২০ মিনিট সময় লাগে। বিএসএফের প্রহরায় বাংলাদেশিরা সংগ্রামপুঞ্জি ঝরনা (Songrampunji Waterfall) দেখতে যেতে পারে। পাহাড়ের গা বেয়ে ঝরনার জল জমে পুকুরের মতো সৃষ্টি হয়েছে। এই ঝরনার রয়েছে মোট তিনটি ধাপ। ভ্রমণ পাগল মানুষদের জন্য আদর্শ অ্যাডভেঞ্চারের জায়গা এই সংগ্রামপুঞ্জি ঝরনা। ঝরনার তৃতীয় ধাপে রয়েছে একটি সুড়ঙ্গ, আর সুড়ঙ্গ পথের শেষ এখন পর্যন্ত অজানা। পিচ্ছিল পাথুরে পথ পেরিয়ে ঝরনার সবগুলো ধাপ দেখতে চাইলে অবশ্যই সাহস এবং বাড়তি সতর্কতা জরুরি।
জিতু মিয়ার বাড়ি
সিলেটের শেখঘাটে কাজীরবাজার সেতুর উত্তরে ঐতিহাসিক জিতু মিয়ার বাড়ী (Jitu Miar Bari) অবস্থিত। ১ দশমিক ৩৬৫ একর জায়গা জুড়ে খান বাহাদুর আবু নছর মোহাম্মদ এহিয়া ওরফে জিতু মিয়া মুসলিম স্থাপত্যশৈলীর এই স্থাপনাটি নির্মাণ করেন। খান বাহাদুর আবু নছর মোহাম্মদ এহিয়া ওরফে জিতু মিয়া সাব-রেজিস্টার হিসাবে কর্মজীবন শুরু করলেও ১৮৯৭ থেকে ১৯০৩ সাল পর্যন্ত সিলেট পৌরসভার ভাইস চেয়ারম্যান এবং অনারারী ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন। তৎকালীন সময়ে জিতু মিয়ার পরিবারের জাঁকজমকপূর্ণ বিলাসী জীবনযাপন সিলেটে ব্যাপকভাবে আলোচিত হতো। কথিত আছে, সে সময় এই বাড়ির ড্রয়িংরুমে তুরস্কের পাশা, রুশ তুরস্কের যুদ্ধ, ব্রিটিশ রাজ পরিবারের রাজপুরুষদের বিভিন্ন আলোকচিত্র শোভা পেতো। আর প্রতিদিন সিলেটে আগত শত শত লোক জিতু মিয়ার বাড়িতে আতিথেয়তা গ্রহণ করতেন।
পান্থুমাই ঝরনা
‘পান্থুমাই’ বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত মেঘালয় পাহাড়ের কোল ঘেঁষা একটি অপূর্ব গ্রামের নাম। সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নের এই গ্রাম বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর গ্রামগুলোর মধ্যে অন্যতম। মেঘালয় পাহাড় আর পিয়াইন নদীর পাড়ে অবস্থিত এই গ্রামেই আছে প্রকৃতির আরেক অপরূপ নিদর্শন পান্থুমাই ঝরনা (Panthumai Waterfall)। স্থানীয় মানুষের কাছে পান্থুমাই ঝরনা বিভিন্ন নামে পরিচিত। কেউ একে বলেন ‘ফাটাছড়ির ঝরনা’ আবার কেউবা ডাকেন ‘বড়হিল ঝরনা’, আর কারো চোখে এটি ‘মায়াবতী’! উঁচু পাহাড় থেকে পাথর বেয়ে নেমে আসা আগ্রাসী জলের ধারা কিংবা চারপাশের প্রকৃতির দিকে শুধু তাকিয়ে থাকলেও নিরাশ হবেন না কোনো মতেই। মূল অবস্থান ভারতে হওয়ার পরও ১০০ টাকায় ছোট ডিঙ্গি নৌকা ভাড়া করে ঝরনার বেশ কাছে যাওয়া যায়। স্থানীয় মাঝিদের কথামতো নিরাপদ দূরত্ব থেকে অন্যান্য এই ঝরনার সৌন্দর্য দেখার পাশাপাশি ছবি তোলা ও ভিডিও করতে পারবেন।
সিলেট শাহী ঈদগাহ
বাংলাদেশের প্রাচীনতম ঐতিহাসিক স্থাপনার মধ্যে সিলেট শাহী ঈদগাহ (Sylhet Shahi Eidgah) অন্যতম। নিপুণ কারুকার্যময় শাহী ঈদগাহটি ১৭০০ সালের দিকে মোগল ফৌজদার ফরহাদ খাঁ নির্মাণ করেন। ২২টি সিঁড়ি মাড়িয়ে ১৫ টি গম্বুজ সজ্জিত শাহী ঈদগাহের মূল চত্বরে প্রবেশ করতে হয়। সীমানা প্রাচীরে ঘেরা ঈদগাহের চারদিকে ছোট বড় ১০টি গেইট রয়েছে। এই ঈদগায়ে প্রায় দেড় লাখ মুসল্লি একত্রে ঈদের নামাজ আদায় করতে পারেন। শাহী ঈদগাহের উত্তর দিকে একটি মসজিদ আছে, যা শাহী ঈদগাহ মসজিদ নামে পরিচিত। আর মসজিদের পাশে সুউচ্চ টিলার ওপর রয়েছে বন কর্মকর্তার বাংলো। ঈদগাহের সামনে অবস্থিত বিশাল পুকুরে মুসল্লিরা অজু করে থাকেন। এছাড়া দক্ষিণ দিকে বাংলাদেশ টেলিভিশনের সিলেট কেন্দ্র এবং পূর্ব দিকে হযরত শাহজালাল (র.) এর সফরসঙ্গী শাহ মিরারজী (র.) এর মাজার ও সিলেট আবহাওয়া অফিস রয়েছে।
বর্তমানে শাহী ঈদগাহ বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনা প্রবাহের সাক্ষী হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে। ১৭৮২ খ্রিস্টাব্দে এই শাহী ঈদগাহে সৈয়দ মোহাম্মদ হাদী ও সৈয়দ মোহাম্মদ মেহেদী দুই ভাইয়ের নেতৃত্বে ইংরেজ বিরোধী অভ্যুত্থানের সূচনা হয়। এ ছাড়াও এখানে মহাত্মা গান্ধী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেরে বাংলা আবুল কাশেম ফজলুল হকের সহ অনেক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নেতাদের আগমনের ঘটনা রয়েছে। কারণ অতীতে সিলেটে সকল ধরনের বড় জনসমাবেশের জন্য শাহী ঈদগাহকে বেছে নেওয়া হতো।
রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট
রাতারগুল বাংলাদেশের একমাত্র সোয়াম্প ফরেস্ট (Ratargul Swamp Forest)। এটি সিলেট জেলা শহর থেকে প্রায় ২৬ কিলোমিটার দূরে গোয়াইনঘাট উপজেলায় অবস্থিত। রাতারগুল বনটি প্রায় ৩০,৩২৫ একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত। এই বিস্তীর্ণ এলাকার ৫০৪ একর জায়গায় রয়েছে বন আর বাকি জায়গা ছোট বড় জলাশয়ে পূর্ণ। তবে বর্ষায় পুরো এলাকাটিকেই দেখতে একই রকম মনে হয়। রাতারগুল ‘সিলেটের সুন্দরবন’ নামে খ্যাত। এই রাতারগুল জলাবন বছরে চার থেকে পাঁচ মাস পানির নিচে তলিয়ে থাকে। তখন জলে ডুবে থাকা বনের গাছগুলো দেখতে সমগ্র বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে পর্যটকরা এসে ভিড় জমায়। অনেক পর্যটক রাতারগুলকে বাংলাদেশের আমাজন বলেও ডাকেন। বর্ষায় গাছের ডালে দেখা মিলে নানান প্রজাতির পাখি আবার তখন কিছু বন্যপ্রাণীও আশ্রয় নেয় গাছের ডালে। এ ছাড়াও শীতকালে এখানকার জলাশয়ে বসে হাজারো অতিথি পাখির মেলা। সাধারণত জুলাই থেকে অক্টোবর (বর্ষার শেষের দিকে) পর্যন্ত রাতারগুল ভ্রমণের উপযুক্ত সময়। ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ বন বিভাগ রাতারগুল বনের ৫০৪ একর জায়গাকে বন্যপ্রাণীর অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষণা করে। রাতারগুল একটি প্রাকৃতিক বন, স্থানীয় বন বিভাগ এখানে হিজল, বরুণ, করচ সহ বেশ কিছু গাছ রোপণ করেন।
একনজরে
সীমানা: উত্তরে ভারতের খাসিয়া, জৈন্তিয়া পাহাড় (ভারতের মেঘালয় রাজ্য), দক্ষিণে মৌলভীবাজার জেলা, পূর্বে ভারতের কাছাড় ও করিমগঞ্জ জেলা (ভারতের আসাম রাজ্য) ও পশ্চিমে সুনামগঞ্জ এবং হবিগঞ্জ জেলা
আয়তন : ৩,৪৫২.০৭ বর্গ কি.মি. বা ১৩৩২.০০ বর্গমাইল
জনসংখ্যা : ৩৫,৬৭,১৩৮ জন (২০১১) (পুরুষ: ১৭,৯৩,৮৫৮ জন এবং মহিলা ১৭,৭৩,২৮০ জন)
উপজাতি/ক্ষুদ্র জাতিসত্তা/নৃ-গোষ্ঠী: মোট ১৭,৩৬৩ জন (আদমশুমারী ২০০১)
(প্রধানত মণিপুরি, পাত্র, খাসিয়া, চাকমা, ত্রিপুরা, সাঁওতাল)
ভৌগোলিক অবস্থান : ২৪০৩৬-২৫০১১ উত্তর অক্ষাংশ হতে ৯১০৩৮-৯২০৩০ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ
জনসংখ্যার ঘনত্ব : ৯৯৫ জনপ্রতি বর্গ কি.মি.(২০১১)
সংসদীয় আসন : ৬ টি
সংরক্ষিত আসন : ১ টি
উপজেলা : ১৩ টি
থানা : ১৭ টি
ইউনিয়ন : ১০৫ টি
সিটি করপোরেশন: ১ টি (ওয়ার্ড ২৭ টি)
পৌরসভা : ৪টি (গোলাপগঞ্জ-‘ক’ শ্রেণি, বিয়ানীবাজার- ‘খ’ শ্রেণি, জকিগঞ্জ ও কানাইঘাট- ‘গ’ শ্রেণি)।
শিক্ষার হার : ৫১.২%
Leave a Reply