রাজধানীর ভাটারার আব্দুল খালেক মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে স্বাক্ষর জাল করে নিজের ছোট ভাই ও আত্মীয়-স্বজনদের অবৈধ নিয়োগ দেওয়ায় অভিযোগ উঠেছে। জানা গেছে, ভাটারায় ১৯৮৯ সালে দাতা ও প্রতিষ্ঠাতা মমতাজ খালেকের হাতে ধরেই আব্দুল খালেক মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয় গড়ে উঠে। বিদ্যালয়টি মমতাজ খালেক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে আসছিল। ফাউন্ডেশনটি আর্থিকভাবে স্বচ্ছল এবং শিক্ষক ও স্টাফদের বেতন-ভাতাসহ আনুষঙ্গিক সকল ব্যয় ভার বহন করতে বদ্ধপরিকর। জানা যায়, ১৯৮৯ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত মমতাজ খালেক নিজের এবং ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে শিক্ষক-স্টাফদের বেতন-ভাতা, জমি ক্রয়, ভবন নির্মাণ, অবকাঠামো উন্নয়ন ও আসবাবপত্র ক্রয়সহ বিভিন্ন কাজে দুই কোটি ২১ লাখ নয় হাজার ৭৩২ টাকা অনুদান দিয়েছেন। কিন্তু বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও মালিক পক্ষের বিরুদ্ধে লড়াই করে অর্থ বাণিজ্যের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি ২০১৯ সালের ২৩ অক্টোবর এমপিওভুক্ত করেন কিছু সুবিধাভোগী শিক্ষক-কর্মচারী। আবার একই বছরের ১৮ নভেম্বর এমপিও আদেশ স্থগিত চেয়ে আবেদন করেন প্রতিষ্ঠাতাদের লোকজন। প্রতিষ্ঠাকালীন প্রধান শিক্ষক নাজনীন খালেক ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর চাকরি থেকে অব্যাহতি নেন। নতুন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সাবেক সহকারী প্রধান শিক্ষক মেহেজাবিন আলম চৌধুরীকে অস্থায়ীভাবে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিযোগ দেওয়া হয়। শিক্ষকদের একটি অংশের দাবি, পরবর্তীতে বিদ্যালয়ের কিছু বিপদগামী ও অসাধু শিক্ষক-স্টাফদের সহায়তায় সহকারী শিক্ষক আয়শা আক্তার অবৈধ ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সেজে বিদ্যালয়ের ব্যবহৃত ই-মেইলটি হ্যাক করে পাসওয়ার্ড পরিবর্তন এবং ই-মেইল ব্যবহার করে বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত করার জন্য পূনরায় আবেদন করেন। বিদ্যালয়ের ২২/২৩ জন শিক্ষক-স্টাফের মধ্যে অবৈধভাবে ৭/৮ জন শিক্ষক-স্টাফকে এমপিওভুক্ত করা হয়েছে, যারা আয়শা আক্তারকে মোটা অংকের অর্থ দিয়েছেন। বাকি শিক্ষক-স্টাফ সরকার বা বিদ্যালয় থেকে কোনো বেতন ভাতা না পাওয়ার জন্য তারা মানবেতর জীবন যাপন করছেন। আয়শা আক্তার, তার স্বামী মো. ওবায়েদুল ইসলাম খান (অফিস সহকারী), ছোট ভাই একরাম হোসেন (সহকারী শিক্ষক) ও ভাগ্নে সাইদুল ইসলাম রনি (সহকারী শিক্ষক) বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ে বিদ্যালয়টি পারিবারিকভাবে ও নিজেদের আয়ত্তে নেওয়ার জন্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন। তারা প্রতিষ্ঠাতা ও দাতা মমতাজ খালেককে বাদ দিয়ে নিজেদের মতো এডহক কমিটির প্রস্তাব তৈরি করে প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির স্বাক্ষর জাল করে ভুয়া রেজুলেশন দেখিয়ে বোর্ড থেকে অনুমোদন নেন। চলতি বছরের ১৯ এপ্রিল প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে এমপিও’র কোডসহ শিক্ষক-স্টাফদের বেতন-ভাতা দেওয়া জন্য নির্দেশ দেন। অবৈধ ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আয়শা আক্তার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির স্বাক্ষর বিহীন ও প্রধান শিক্ষকের অনুমতি ছাড়াই বিদ্যালয়ের নামে ভুয়া প্যাড তৈরি করে এবং সাবেক প্রধান শিক্ষকের স্বাক্ষর জাল করে নিজের ও শিক্ষক-স্টাফদের অবৈধ লাভের আশায় হ্যাক করা ই-মেইল আইডি ব্যবহার করে শিক্ষক-স্টাফদের নাম নিবন্ধন এবং তথ্য প্রদান করে। এমপিওভুক্তির আদেশ স্থগিত না হওয়ায় পুনরায় মে মাসে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়। আয়শা আক্তারসহ দুর্নীতিগ্রস্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, কমিটির বিপক্ষে অসৎ কার্যকলাপ ও দুর্নীতিতে লিপ্ত থাকার জন্য ভাটারা থানায় ১৪ মে সাধারণ ডায়েরি করেন প্রতিষ্ঠাতাদের লোকজন। সিনিয়র শিক্ষকদের ভাষ্য, আয়শা আক্তার অবৈধ ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হয়েই শিক্ষকদের এমপিওকরণে অর্থবাণিজ্য ও স্বজনপ্রীতি শুরু করে দেন। শিক্ষকদের কাঠ থেকে মোটা অংকের অর্থ আদায় করে শিক্ষা সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ‘ম্যানেজ করার’ জন্য দেন। এমনকি তার আপন ছোট ভাই একরাম হোসেনকে ইসলাম শিক্ষা এবং অন্য একজন গণিতের শিক্ষককে ভুয়া বিজ্ঞপ্তি দেখিয়ে সাবেক প্রধান শিক্ষকের স্বাক্ষর জাল করে নিয়োগ জালিয়াতির মাধ্যমে এমপিওভুক্ত করেন। এমপিওর আদেশ বাতিল ও নিয়োগ সংক্রান্ত জালিয়াতির জন্য পর পর দুইবার ঢাকা শিক্ষা বোর্ড ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক একই ব্যক্তি দিয়ে তদন্ত করা হয়। সিনিয়র শিক্ষকদের দাবি, বয়স্ক মমতাজ খালেক অসুস্থ অবস্থায়ও বাসায় বসে দিন রাত স্কুল নিয়ে স্বপ্ন দেখেন। এমপিও সংক্রান্ত এবং এমপিও অর্থ উত্তোলন সংক্রান্ত অগ্রায়নপত্র, অঙ্গীকারনামা ও অন্যান্য কাগজপত্রে মমতাজ খালেক কোন স্বাক্ষর করেননি। আয়শা আক্তার অবৈধ ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে শিক্ষক-ষ্টাফদের এমপিও অর্থ উত্তোলনের ক্ষেত্রে মিথ্যা তথ্য প্রদান, অবৈধ শিক্ষক নিয়োগ, জাল নিয়োগ সংক্রান্ত রেকর্ড প্রদান, প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-স্টাফ ও ব্যবস্থাপনা কমিটির মধ্যে বিভাজন ও অভ্যন্তরীণ বিরোধ সৃষ্টি করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছেন। এ বিষয়গুলো সুষ্ঠু তদন্ত এবং এমপিও বাতিলের জন্য গত ২৮ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী বরাবর আবেদন করা হয়েছে। সিনিয়র কয়েকজন শিক্ষক বলেন, আমরা চাই সকল শিক্ষক-স্টাফ সমান সুযোগ-সুবিধা ভোগ করুক। তাই এমপিও বাতিল হয়ে ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে পরিচালিত হলে সকল শিক্ষক-স্টাফ একই সুযোগ-সুবিধার আওতায় আসবে এবং তা ফাউন্ডেশন পরিচালনা করবে। অভিযোগের বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আয়শা আক্তারের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি বলেন, আপনি কিসের সাংবাদিক, আপনার আইডি কার্ড নিয়ে অফিসে আসেন। আমার নামে যে অভিযোগ করা হচ্ছে তা মিথ্যা ও বানোয়াট বলে তিনি ফোন কেটে দেন।
Leave a Reply