ময়মনসিংহ প্রতিনিধিঃ
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগিংয়ের ঘটনায় ২৭ শিক্ষার্থীকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।
সোমবার (১৩ জানুয়ারী) হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মো. বজলুর রহমান মোল্যা ২৭ শিক্ষার্থীর বহিষ্কার করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এর আগে ওই দিন দুপুরে ২৭ শিক্ষার্থীকে বহিস্কার করা হয়।
তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ডিনেন্স অনুযায়ী হলে শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজে সম্পৃক্ত থাকার কারণে তাদের বহিষ্কার করা হয়। বহিষ্কৃতদের মধ্যে ওই হলের লেভেল-১, সেমিস্টার-২, লেভেল-২, সেমিস্টার-২ এবং মাস্টার্সের একজন শিক্ষার্থী রয়েছে।
সুত্র জানায়, গত শনিবার রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের রিডিং রুমে ডেকে নেয়া হয়। শুরুতেই তাদের মোবাইল ফোন রুমে রেখে আসতে বাধ্য করে এবং মোবাইল আছে কি না, তা তল্লাশি করা হয়। এরপর দ্বিতীয় বর্ষের প্রায় ২০ জন শিক্ষার্থী নবীনদের কিছু অদ্ভুত নিয়ম জানায়, যেগুলো তাদের মেনে চলতে হবে বলে নির্দেশ দেয়া হয়। এসব নিয়মের মধ্যে ছিল- সাইকেল চালানো নিষেধ, দ্বিতীয় তলায় যাওয়া যাবে না, বড় ভাইদের সঙ্গে দেখা হলে প্রতিবার সালাম, পরিচয় এবং হ্যান্ডশেক করতে হবে, হলে লুঙ্গি পরা যাবে না, হলের গ্রন্থাগারে ল্যাপটপ নেয়া যাবে না এবং হলের ক্যান্টিনে যাওয়া যাবে না।
পরে তৃতীয় বর্ষের কয়েকজন শিক্ষার্থী নবীনদের দাবি-দাওয়া জানতে চাইলে নবীনরা হলের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলে। কিন্তু তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা চলে যাওয়ার পর, দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা নবীনদের ওপর চড়াও হন। তারা নবীনদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং সমস্যাগুলো বড় ভাইদের কাছে জানানোকে ‘অপরাধ’ হিসেবে অভিহিত করেন।
এখানেই শেষ নয়। ছোটখাটো ভুল (যেমন-হাত বাকা রেখে দাঁড়ানো, মাথা উঁচু বা নিচু করে রাখা) উল্লেখ করে নবীনদের একজন করে ডেকে অপমান করা হয়। তাদের বিভিন্ন উদ্ভট শাস্তি দেয়া হয়, যার মধ্যে ছিল-১০ রকমের হাসি দেয়া, ১০ রকমের সালাম করা, গাছে ঝুলে থাকার অভিনয় করা এবং নাচ করার আদেশ দেয়া।
এমন মানসিক চাপ ও অপমানজনক পরিস্থিতিতে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে প্রথম বর্ষের এক শিক্ষার্থী মাথা ঘুরে পড়ে যায়। পরে তাকে হলের মধ্যেই প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয় এবং তার শারীরিক অবস্থা কিছুটা স্থিতিশীল হয়। রাত সাড়ে ১২টার দিকে এই ‘গেস্টরুম’ কার্যক্রম শেষ হয়। পুরো ঘটনায় নবীন শিক্ষার্থীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।
এ বিষয়ে বাকৃবি সহযোগী ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মো. মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ বলেন, সোহরাওয়ার্দী হলের ঘটনায় ৫২ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ২৭ জন সোহরাওয়ার্দী হলের ছাত্র আর বাকিদের এটাচমেন্ট অন্য হলে। কিন্তু তারা সোহরাওয়ার্দী হলে থাকে। সোহরাওয়ার্দী হলের ২৭ জনকে হল থেকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। যারা এ হলের ছাত্র না কিন্তু অবৈধভাবে থাকে এবং এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত তাদের খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনা হবে।
প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মো. বজলুর রহমান মোল্যা বলেন, র্যাগিংয়ের ঘটনায় হল থেকে ২৭ শিক্ষার্থীকে এক বছরের জন্য বহিস্কার করা হয়েছে। তবে, তাদের একাডেমিক কার্যক্রম ব্যাহত হবে না। এ তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে অধিকতর শাস্তির জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিসিপ্লিনারি কমিটিতে পাঠানো হবে।
Leave a Reply