লাগামহীন আলুর বাজার
বাজারে যখন সমস্ত সবজির দাম তুঙ্গে থাকে, তখন সকলের একমাত্র ভরসা থাকে অন্যান্য সবজি থেকে তুলনামূলক কম দামে কিনতে পাওয়া আলুর প্রতি। কিন্তু এ বছর আলুর বাজারমূল্য চলে গেছে হাতের নাগালের বাইরে। ২০ থেকে ২৫ টাকায় বিক্রিত আলুর বর্তমান বাজার মূল্য ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। লাগামহীন আলুর মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি বৃদ্ধি পেয়েছে সকল প্রকার সবজির দাম। ফলে বাজার করতে হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ মানুষ। দেশে চাহিদার তুলনায় অধিক পরিমাণ আলু উৎপাদনের পরেও এত উচ্চমূল্যে আলু বিক্রয়ের কোনো যৌক্তিকতা নেই। কিন্তু উপায় না পেয়ে একরকম বাধ্য হয়ে উচ্চমূল্যেই আলু কিনতে হচ্ছে। কারণ অন্য সকল সবজির মূল্য আরও ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। ইতোমধ্যে সরকার আলুর বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য আলুর দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। (কেজি প্রতি খুচরা পর্যায়ে ৩০ টাকা, পাইকারিতে ২৫ টাকা, হিমাগার থেকে ২৩ টাকা)। এ দামে আলু বিক্রি না করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ভোক্তা অধিকার কর্তৃপক্ষ থেকে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা। কিন্তু প্রশাসনের নিশ্চুপ ভূমিকার কারণে, বর্তমান বাজার পুরোপুরি আড়ৎদার, মজুতদার এবং সিন্ডিকেটের দখলে চলে গেছে। তাই আলুর দাম কমাতে এখনি জরুরি ভিত্তিতে সরকার ও প্রশাসনের সরব ভূমিকা প্রয়োজন।
নূরে আলম সিদ্দিকী শান্ত
রায়েরবাজার, ঢাকা
করোনা-পরবর্তী বেকারত্ব
করোনাভাইরাসের প্রভাবে সমগ্র বিশ্ব একটা ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। এর প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশেও। শিক্ষা, চিকিৎসা, ব্যবসা-বাণিজ্য, পোশাক, শিল্প, খাদ্য উৎপাদন, বণ্টন, সরবরাহ থেকে শুরু করে সমস্ত খাতে স্বাভাবিক কার্যব্যবস্থা ব্যাহত হচ্ছে। এতে দিনকে দিন মানুষের আয় হ্রাস পাচ্ছে, অর্থনৈতিক অবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ছে। বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এবং পণ্য উৎপাদন ও ডেলিভারিতে ব্যাঘাত ঘটায় লক্ষ লক্ষ মানুষ বেকার হয়ে পড়েছে। বেসরকারি খাতে কাজ করার সুযোগ-সুবিধার প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ ভেঙে পড়েছে। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, এখনই বেকারদের নিয়ে না ভাবলে এর প্রভাব থাকবে আগামী কয়েক দশক। এতে শুধু বেকার সমস্যাই না তরুণদের মানসিক সমস্যাও সৃষ্টি হবে। বেঁচে থাকার জন্য অধিকাংশ বেকার বিপথগামী হতে বাধ্য হবে। তাই করোনাকাল তো বটেই করোনা পরবর্তী বেকারত্বও যাতে না থাকে সেই জন্য সরকারকে এখনই বেকারত্ব দূরীকরণে বিশেষ নজর দিতে হবে।
সেঁজুতি লিমা
শরীয়তপুর
মোবাইল ফোন আসক্তি!
মোবাইল ফোন এমন একটি মাধ্যম যেটির মাধ্যমে খুব সহজে দূরের কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়। শুধু কথা বলা নয়, দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে কোনো না কোনো কাজে এর প্রয়োজন হয়। মোবাইল ফোন ছাড়া থাকাটাই অসম্ভব হয়ে পড়েছে। যতই দিন যাচ্ছে মানুষের মোবাইল আসক্তি বেড়েই চলেছে। করোনার কারণে গত ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। শিক্ষা কার্যক্রম যখন অনেক বড় সংকটের মুখে ঠিক তখনই অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তাদের কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়ার জন্য অনলাইন ক্লাস শুরু করে। আর এ জন্যই প্রত্যেকটি শিক্ষার্থী তাদের ক্লাসে অংশগ্রহণ করার জন্য দৈনিক কয়েক ঘণ্টা মোবাইল ফোন নিয়ে বসে থাকতে বাধ্য হয়। এতে করে তাদের মোবাইল ফোনের প্রতি আসক্তি বেড়ে যায়। তবে অধিকাংশ কিশোর-কিশোরীর অভিভাবকরা কখনোই খেয়াল করে না তাদের সন্তান ক্লাসে অংশগ্রহণ করেছে কিনা। মা-বাবার এরকম উদাসীনতার কারণেই দেখা যায়, তাদের সন্তানরা ক্লাস না করে গেমস, ফেসবুক এসব সাইটে ব্যস্ত থাকে। আর এসব তাদের দিনের পর দিন আরও বেশি প্রতি আকৃষ্ট করছে।
ইসরাত জাহান
শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম কলেজ, চট্টগ্রাম
মাদকের ভয়াবহ আগ্রাসন
তরুণ সমাজের ওপর মাদকাসক্তির আগ্রাসন বাড়ছে। যা একটি দেশের জন্য অশনিসংকেত ছাড়া আর কিছু নয়। দেশের সাফল্য নির্ভর করে সেই দেশের তরুণ সমাজের কর্মক্ষমতার ওপর, কিন্তু বর্তমানে যে পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে তা খুবই উদ্বেগজনক। গবেষণায় দেখা যায়, মাদকাসক্ত ব্যক্তির দুই-তৃতীয়াংশ তরুণ সমাজ। জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে তরুণরা মাদকের কাছে আশ্রয় নিচ্ছে। যৌবনের সময়টা আবেগপ্রবণ, সমস্যা-সংকুল, ঝুঁকিপূর্ণ, চ্যালেঞ্জিং। এ সময় নতুন জিনিস জানার ও বোঝার জন্য কৌতূহলী থাকে কিশোর-কিশোরীরা। ফলে মাদকাসক্ত বন্ধুর প্ররোচনায় কৌতূহলের বশে মাদকদ্রব্য গ্রহণ করে যা একসময় নেশায় পরিণত হয়। মাদক রোধে পরিবার ও সমাজকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। সন্তান কাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপন করছে, তার আচার আচরণ লক্ষ করতে হবে। তাদের মতামতের গুরুত্ব দিতে হবে, তাদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করে সমস্যার কথা শুনতে হবে। মাদকের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে, গণমাধ্যমে মাদকবিরোধী প্রচারণা চালাতে হবে, মাদকের সহজলভ্যতা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, পারিবারিক-সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।
হাবিবা খাতুন
শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
রাস্তার ওপর নির্মাণসামগ্রী রাখা বন্ধ করুন
প্রতিনিয়ত যে অনুপাতে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে ঠিক একই অনুপাতে ঘরবাড়ি তৈরি হচ্ছে। এসব ঘরবাড়ি নির্মাণ করার জন্য ইট বালু সিমেন্ট রড দরকার হয়। এসব প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রগুলো দোকান থেকে কিনে আনার পর রাস্তার ওপর রাখা হয়। যার ফলে রাস্তা সংকুচিত হয়ে পড়ে। রাস্তাগুলো সংকুচিত হওয়ার কারণে যানবাহনগুলো সঠিকভাবে যাতায়াত করতে পারে না। অনেক সময় দুর্ঘটনা সৃষ্টি হয়। আর এসব দুর্ঘটনার ফলে জানমালের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এসব নির্মাণসামগ্রী রাস্তার ওপর যাতে রাখা না হয়- কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সাধারণ মানুষকেও সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
জাফরুল ইসলাম
শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
বেকারত্ব ও কর্মসংস্থান
শিক্ষার হার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে বেকারত্বের হার। বাড়ছে হতাশা। এত ডিগ্রি, পড়াশোনার প্রশংসাপত্র নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে যখন ফলাফল শূন্য হয় তখন সেই যুবক-যুবতীদের কাছে শিক্ষার কোনো মূল্যই থাকে না। আজকাল ঘুষ আর পরিচিত কেউ ছাড়া ভালো কোনো চাকরি পাওয়ার আশা করাই যায় না। যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও। সব ধরনের মানুষের সেই দাবি পূরণ করা সম্ভব হয় না। যে কারণে দিনদিন বাড়ছে বেকারদের হার। যেখানে প্রতিবছর লাখ লাখ ছাত্র-ছাত্রী স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করে পড়াশোনার সমাপ্তি ঘটায়। সেখানে কত হাজার শিক্ষার্থী নিজেদের যোগ্যতায় মনের মতো চাকরি পায় তা অবশ্যই বড় প্রশ্ন।শুধু চাকরির আশায় ঘুরলে সে বেকারই থেকে যাবে জীবনের অর্ধেকটা সময়। চাকরি কি একমাত্র আয়ের উৎস, বিকল্প কি নেই? আছে, অবশ্যই। এজন্য দরকার সমাজের মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন। যখন কেউ সরকারি চাকরি বা বিসিএস ক্যাডার হয়ে ভালো পোস্ট অর্জন করে বা ভালো কোম্পানিতে চাকরি করে তখন তাকে বাহ্বা দেওয়া হয়। আর যে চাকরি না পেয়ে বা চাকরি খোঁজার পেছনে নিজের অমূল্য সময় ব্যয় না করে সৃজনশীলতার পরিচয় দেয়, তখন সমাজ-পরিবার তাকে হেয় করে। বিবাহের ক্ষেত্রে এ নিয়ে অনেক প্রশ্ন ওঠে। অনেকে এটাই বলে থাকেন, এত পড়াশোনা করে শেষে এ কাজ। এভাবেই উপহাস করে। সমাজের এরূপ দৃষ্টিভঙ্গি কিন্তু যুবসমাজকে বেকারে রূপান্তর করেছে। কোনো কাজই ছোট নয়। নিজেরা সবসময়ই কাজকে অর্থের মূল্যে বিচার করি। কী কাজ, তা আদৌ ইসলামের দৃষ্টিতে বৈধ কিনা তা যাচাই করার প্রয়োজন করি না। সে মোটা অঙ্কের অর্থ উপার্জন করে এটাই আসল।
আলিসা জাহান মিম
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
Leave a Reply