অর্থ উপার্জনের জন্য মালয়েশিয়া থাকে পারভেজের বাবা মোঃ মুঞ্জুরুল হক। পারভেজের মা রুজিনা আক্তার তার ৫ (পাঁচ) সন্তানকে নিয়ে স্বামীর বাড়ী ঈশ্বরগঞ্জের উত্তর মরিচার চরে বসবাস করেন। ৮ম শ্রেণি পড়ুয়া পারভেজ ছিল তাদের বড় সন্তান। গত ০৯/১০/২০২০ খ্রিঃ পারভেজ বাড়ী হতে বের হয়ে আর বাড়ী ফিরে আসেনি। গত ১১/১০/২০২০ খ্রিঃ রবিবার সকালে ব্রহ্মপুত্র নদীতে পারভেজের মৃতদেহ পানিতে ভাসমান অবস্থায় পাওয়া যায়। চারেদিকে শুরু হয় ব্যাপক চাঞ্চল্য। হত্যার রহস্য উদঘাটনে মাঠে নেমে পড়ে থানা পুলিশ, ডিবি, র্যাব।
পিবিআই প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার, বিপিএম, পিপিএম মহোদয়ের নির্দেশে পিবিআই, ময়মনসিংহ জেলার পুলিশ সুপার জনাব গৌতম কুমার বিশ্বাস মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জনাব মোঃ আবুল কাশেম, পিপিএম ও অন্যান্য অফিসার এবং ফোর্স নিয়ে নেমে পড়েন পারভেজ হত্যার রহস্য উদঘাটন অভিযানে। টানা ০৫ (পাচ) দিনের অক্লান্ত পরিশ্রমে দেখা মেলে সফলতার। ঢাকার টঙ্গী পশ্চিম থানা এলাকা হতে গত ১৪/১০/২০২০ খ্রিঃ ১৭.০০ ঘটিকার সময় গ্রেফতার করা হয় হত্যার মূল আসামী রবিউল ইসলাম রবি (১৮), পিতা-আঃ কুদ্দুছ, মাতা-মাজেদা বেগম, সাং-উত্তর মরিচার চর, থানা-ঈশ্বরগঞ্জ, জেলা-ময়মনসিংহকে। তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় পারভেজের ব্যবহৃত সীমসহ একটি টাচ ফোন এবং তার মায়ের ব্যবহৃত সীমসহ একটি বাটন ফোন। তাকে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করলে সে স্বেচ্ছায় ফৌঃকাঃবিঃ ১৬৪ ধারা মতে হত্যার দায় স্বীকার করে হত্যার লোমহর্ষক ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দেয়। তার স্বীকারোক্তিতে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর পারভেজ হত্যার মূল রহস্য। জানা গেল মা রুজিনার পরকীয়া প্রেমের পথে বাধা হওয়ায় সুপরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে পারভেজকে।
পারভেজের বাবা মুঞ্জুরুল পারিবারিক অভাব মোচনের জন্য অর্থের প্রয়োজনে মালয়েশিয়া থাকেন। ০৫ সন্তানকে নিয়ে স্বামীর বাড়ীতে থাকে রুজিনা। পারভেজ ছিল তাদের বড় সন্তান। সে মরিচার চর উচ্চ বিদ্যালয়ে ৮ম শ্রেণিতে পড়ে। পারভেজের বাবা দীর্ঘ দিন দেশের বাহিরে থাকায় পারভেজের মা রুজিনা জড়িয়ে পড়েন একাধিক পরকীয়া প্রেমে। সে দিনে রাতে কথা বলত তার প্রেমিকদের সাথে। পারভেজ বড় হয়েছে। সে বিষয়টি আচ করতে পেরে নানাভাবে তার মাকে বাধা দিতে থাকে। তার মা যে নম্বর গুলোতে কথা বলতো পারভেজ কৌশলে উক্ত নম্বরগুলো ব্লক লিস্টে রেখে দিত।
ধৃত আসামী রবিউল এর বাড়ী পারভেজের বাড়ীর কাছেই। পারভেজের মা রুজিনা তার ফোনের ব্লক করা নম্বরগুলো রবিউলের কাছ থেকে আনব্লক করে নিত। রুজিনা ফোনে কথা বলার জন্য মোবাইলে টাকা ভরে নিত আসামী রবিউলের মাধ্যমে। বিনিময়ে রুজিনা আসামী রবিউলকে নামমাত্র কিছু টাকা বকশিস দিত। এছাড়াও রুজিনা তার সাংসারিক কিছু কাজ টাকার বিনিময়ে আসামী রবিউলকে দিয়ে করিয়ে নিত। এভাবে দিন গড়াতে থাকে।
পারভেজ দিন দিন আরো জোরালোভাবে তার মায়ের পরকীয়া প্রেমে বাঁধা দিতে থাকে। তার মাকে ভয় দেখায় সব ঘটনা সে তার বাবাকে বলে দেবে। ভয়ে ভীত হয়ে পড়ে পারভেজের মা। পরিকল্পনা করতে থাকে আপন ছেলেকে হত্যা করে পথের কাটা দূর করার। এ দিকে গত কোরবানীর ঈদের পর হতে আসামী রবিউল ইসলাম রবি টঙ্গীতে গিয়ে গার্মেন্টস এ কাজ করতে থাকে। পারভেজের মা তার প্রয়োজনে মাঝে মাঝেই ফোন দিত রবিউলকে।
আপন ছেলেকে হত্যা করে পথের কাটা দূর করার পরিকল্পনা মোতাবেক গত ০৯/১০/২০২০ খ্রিঃ পারভেজের মা রুজিনা ফোন করে আসামী রবিউলকে জরুরী কথা আছে বলে ডেকে তার বাড়ীর পাশে আসতে বলে। রবিউল রাত ০৭.৩০ ঘটিকায় টঙ্গী হতে রুজিনার বাড়ীর পাশে আসে। তখন রুজিনা রবিউলকে প্রস্তাব দিয়ে বলে তুমি পারভেজকে খুন করবা। বিনিময়ে আমি তোমাকে ৫০,০০০/- হাজার টাকা দিব। লোভে পড়ে যায় রবিউল। অনেক চিন্তার পর রাজি হয়ে যায়। জিজ্ঞেস করে কিভাবে? তখন পারভেজের মা বলে তুমি নদীর পাড়ে গিয়ে অপেক্ষা কর, আমি পারভেজকে তোমার কাছে পাঠিয়ে দিচ্ছি। তখন আসামী রবিউল নদীর পাড়ে গিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে। পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে সে নদীর পাড়ে থাকা একটি গাছের মোটা ডাল তার কাছে রাখে। এদিকে রুজিনা তার ফোনটা পারভেজের হাতে দিয়ে বলে নদীর পাড়ে রবিউল আছে তুমি গিয়ে এই ফোনটা তাকে দিয়ে আস। পারভেজ তার সাইকেল নিয়ে নদীর পাড়ের উদ্দেশ্যে বের হয়। মায়ের কথায় সরল বিশ্বাসে মুত্যুর দিকে এগোতে থাকে পারভেজ। পারভেজ নদীর কিনারায় পৌছে রবিউলকে দেখতে পায় এবং তার মায়ের দেয়া ফোনটা রবিউলকে দিয়ে দেয়। ফোন রবিউলের হাতে দিয়ে পারভেজ বাড়ীর দিকে পা বাড়নোর সঙ্গে সঙ্গে রবিউল তার কাছে রাখা গাছের মোটা ডাল দিয়ে পারভেজের মাথায় স্বজোরে একের পর এক আঘাত করতে থাকে। আকস্মিক আঘাতে হতবিহবল পারভেজ মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। আসামী রবিউল পারভেজের টাচ ফোন এবং পারভেজের মায়ের দেয়া বাটন ফোন ২ টি নিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। আসামী রবিউল পারভেজের মা’র কাছে এসে বলে পারভেজকে মেরে ফেলেছি আমার ৫০,০০০/- হাজার টাকা দেন। তখন পারভেজের মা তাকে বলে “এখন তুমি যাও। পারভেজের বাবা বিদেশ থেকে টাকা পাঠালে আমি তোমাকে ডেকে দিয়ে দিব”। এরপর আসামী রবিউল ঐ রাতেই আবারও টঙ্গীতে ফিরে আত্মগোপন করে। এভাবে পারভেজ হত্যার মূল রহস্য উদঘাটিত হয়। অবসান হয় সকল জল্পনা কল্পনার।
উক্ত ঘটনায় ঈশ্বরগঞ্জ থানার মামলা নং-০৪, তারিখ-১২/১০/২০২০ খ্রিঃ, ধারা-৩০২/২০১/৩৪ দঃ বিঃ রুজু হয়। থানা পুলিশের তদন্তকালে পিবিআই, ময়মনসিংহ জেলা গত ১৪/১০/২০২০ খ্রিঃ স্বউদ্যোগে মামলাটি অধিগ্রহণ করা হয় এবং মামলার তদন্তভার জনাব মোঃ আবুল কাশেম, পিপিএম, পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) এর উপর অর্পন করা হয়।
Leave a Reply